দক্ষিণ আফ্রিকা: ২১২/১০
অস্ট্রেলিয়া: ২১৫/৭
পাঁচবারের সেমিফাইনালিস্ট। চার বার জয়। টাই একবারে। ইডেনেও কাটল না নকআউটের সেই অভিশাপ। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা দেখানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকা বিদায় সেই সেমিফাইনালের মঞ্চ থেকে। ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লো স্কোরিং থ্রিলারে হেরে আরও একবার চোকার্স তকমা নিয়ে দেশে ফিরছেন কুইন্টন ডিককরা।
ইডেনের থমকে আসা পিচে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে দক্ষিণ আফ্রিকা মিলারের সেঞ্চুরিতে ভর করে মাত্র ২১২ তুলেছিল। সামান্য এই টার্গেট চেজ করতে নেমেই নাটকীয় উত্থান পতনের সাক্ষী থাকল বৃহস্পতিবারের রাত। ওয়ার্নার-ট্র্যাভিস হেড উড়ন্ত সূচনা করে প্ৰথম ৬ ওভারেই ৬০ তুলে দিয়েছিলেন। প্ৰথম ৬ ওভারে ১০ এর ওপর রান রেট নিয়ে ব্যাট করতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস যে হৃদকম্প বাড়িয়ে ৪৭.২ ওভার পর্যন্ত পৌঁছবে, কে ভাবতে পেরেছিল!
পরপর দু-ওভারে ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ আউট হয়ে যাওয়ার পরেও ভাবা যায়নি অজিদের জয়ে বিন্দুমাত্র সংশয়ের মেঘ থাকবে। তবে দুর্ধর্ষ সূচনার পরেও অস্ট্রেলিয়া একসময় উইকেট হারিয়ে, রান তোলার গতি হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিল।
প্রোটিয়াজদের মাঝের ওভারে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন তাঁদের স্পিনাররা। ১৫ তম ওভারে কেশব মহারাজ তুখোড় ফর্মে ব্যাট করতে থাকা ট্র্যাভিস হেডকে (৪৮ বলে ৬২) ফেরান। এরপরে তাব্রিজ শামসি পরপর দু-ওভারে ম্যাক্সওয়েল এবং লাবুশেনকে আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে ১৩৭/৫-এ নামিয়ে এনেছিলেন।
এখন থেকেই হঠাৎ যে সংশয়ের ঘূর্ণি ঝড় আবির্ভাব ঘটে, তা ম্যাচকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া স্টিভ স্মিথকে আউট করে নতুন করে রোমাঞ্চের আমদানি করেন কোয়েটজে। অজি কিপার জস ইংলিশকেও ফেরান এই কোয়েটজে। তবে ইংলিশ আউট হওয়ার পর অজিদের জয়ের জন্য দরকার ছিল মাত্র ১৯ রান। বাকি সেই রান তুলতেই অস্ট্রেলিয়া নিয়ে নেয় ৪৫ বল। শেষদিকে মহারাজ, কোয়েটজেরা আঁটোসাঁটো বোলিং করে মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে প্যাট কামিন্স (২৯ বলে ১৪) এবং মিচেল স্টার্ক (৩৮ বলে ১৬) ক্রিজে টিকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
তার আগে ডেভিড মিলার একার হাতে দক্ষিণ আফ্রিকান ইনিংসকে টেনেছিলেন। দলের ২১৩ রানের মধ্যে তিনি একাই ১১৬ বলে ১০১ করে গিয়েছিলেন। পাওয়ার প্লেতেই স্টার্ক-হ্যাজেলউডের পেসে সেঁকে গিয়েছিল প্রোটিয়াজ টপ অর্ডার। ১২ ওভারের মধ্যেই স্কোরবোর্ডে ২৪ তোলার ফাঁকে একে একে আউট হয়ে যান কুইন্টন ডিকক, তেম্বা বাভুমা, আইডেন মারক্রাম, রাসি ভ্যান দার ডুসেনরা।
ইডেনের মন্থর পিচে হ্যাজেলউড এবং স্টার্ক টানা নিখুঁত লাইন লেন্থে বল করে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটারদের নাভিশ্বাস তুলে দেন। প্ৰথম ১১ ওভারে ২২ রানের বেশি তুলতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। হারিয়ে ফেলেছিল ৩ উইকেট। ১২ তম ওভারে হ্যাজেলউড দুসেনকে ফেরত পাঠানোর পর অবস্থা একদম শোচনীয় হয়ে যায়।
হেনরিখ ক্ল্যাসেন, এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ফিনিশার ডেভিড মিলারকে ক্রিজে নেমে পড়তে হয় বল পুরোনো হওয়ার আগেই। ১৪ তম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন স্কোরবোর্ডে ৪৪/৪ সেই সময় হঠাৎ বৃষ্টি ম্যাচে অল্প সময়ের জন্য বিরতি নিতে বাধ্য করে। ৫০ মিনিট পর ম্যাচ শুরু হয় কোনও ওভার সংখ্যা না কমিয়েই।
প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ক্ল্যাসেন এবং মিলার দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসকে কিছুটা স্থিরতা দেন। প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে কাউন্টার এটাক শুরু করেন দুজনে। ১১৩ বলে ৯৫ রানের এই জুটিতে শেষমেশ ভাঙন ধরান ট্র্যাভিস হেড। ৪৮ বলে ৪৭ করে ফেরেন ক্ল্যাসেন। তারপরের বলেই মার্কো জ্যানসেনকে আউট করে অজিরা ম্যাচে ফিরে আসে।
সপ্তম উইকেটে জেরাল্ড কোয়েটজে মিলারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ৫৩ রানের পার্টনারশিপ গড়ে যান। কোয়েটজে ১৯ রানে আউট হয়ে গেলেও মিলার টেলএন্ডারদের নিয়ে ব্যাট করে দুর্ধর্ষ শতরান হাঁকিয়ে যান। একদম শেষ দিকে মিলার আউট হন সেঞ্চুরি পূর্ণ করে। শেষ ওভারে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২১২ তুলে।