আইসিসি ট্রফি জয়ের স্বপ্ন ভারতের অপূর্ণই থাকল। ট্র্যাভিস হেডের বিধ্বংসী শতরানে ভর করে ভারতকে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মত ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার দ্বিতীয় ওভারে শামির বলে আউট হওয়ার আগেই অজি ওপেনাররা বুমরার প্ৰথম ওভারে ১৫ তুলে ঝটকা দিয়েছিল। মিচেল মার্শ-ও দারুণ শুরু করেন। তবে বুমরার বলে মার্শ ফেরার সময় অস্ট্রেলিয়া ৪১/২ হয়ে যায়। বুমরা স্মিথকে কিছুক্ষণ পরে ফেরানোর পরেই অস্ট্রেলিয়া ৪৭/৩ হয়ে ধসে গিয়েছিল। তারপর ম্যাচের পুরোটাই ভারতের হতাশার। ট্র্যাভিস হেড এবং মার্নাস লাবুশেন জুটি জয় এনে দেয়। হেড শতরান হাঁকিয়ে যান।
তার আগে ভারত ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। কেএল রাহুল এবং বিরাট কোহলির হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে ভারত বিলো-পার ২৪০ খাড়া করেছিল স্কোরবোর্ডে।
মন্থর পিচে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। রোহিত শর্মা আরও একবার ভারতকে দুর্ধর্ষ সূচনা উপহার দিয়ে যান। ৩১ বলে ৪৭ করে যান। তবে অস্ট্রেলিয়া প্রবলভাবে ম্যাচে ফিরে আসে। ভারতকে ৮১/৩-এ নামিয়ে দেয়। এরপরে কোহলি-রাহুল ভারতীয় ইনিংসের উদ্ধার কাজ চালান। তবে অজি বোলাররা বাউন্ডারি কনসিড না করে ব্যাটসম্যানদের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করে যান। শেষদিকে সূর্যকুমার যাদব-ও সেভাবে ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারেননি। অসৎ8 হয়ে তিন উইকেট দখল করেন মিচেল স্টার্ক। প্যাট কামিন্স এবং জস হ্যাজেলউড দুটো করে উইকেট নেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জাম্পাও উইকেট পেয়েছেন।
ভারতের হারের জন্য এখন কোন কোন কারণ প্রভাব ফেলে গেল, দেখে নেওয়া যাক-
১) রোহিত শর্মার আউট: হিটম্যান স্লো পিচেও অনায়াস দক্ষতায় ব্যাটিং করছিলেন। ঝড় তুলে দিয়েছিলেন শুরুতেই। চার বাউন্ডারি এবং তিন ছক্কায় নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন অজি বোলারদের। তবে পাওয়ার প্লেতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে পেয়ে লোভ ছাড়তে পারেননি। বিগ হিট নিতে গিয়েই প্যাভিলিয়নে ফেরেন ট্র্যাভিস হেডের নেওয়া টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ক্যাচে। রোহিত ক্রিজে থাকলে ভারতের বড় স্কোরের সম্ভবনা অনেকটাই বেড়ে যেত। তবে ক্যাপ্টেন আউট হওয়ার ধাক্কা আর সামলাতে পারেনি ভারত।
২) শ্রেয়স আইয়ার এবং গিলের সাততাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাওয়া:
শুভমান গিল নিজের চেনা ছন্দে ছিলেন না। মাত্র চার রান করে আউট হয়ে ফিরতে হয় তারকাকে। শ্রেয়স আইয়ারও ক্রিজে নেমেই আউট হয়ে যান মাত্র একটা বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। দুই তারকাই মাত্র চার রান করেন। মিডল অর্ডারে শ্রেয়স এবং ওপেনিংয়ে গিলের ওপর অনেক দায়িত্ব ছিল। দুজনেই আউট হয়ে গিয়ে ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয় ত্বরান্বিত করেন।
৩) ট্র্যাভিস হেডের ড্রপ ক্যাচ: ২০০৩-এ রিকি পন্টিং, গিলক্রিস্ট ভারতের ভাগ্য পুঁতে দিয়েছিলেন ব্যর্থতার চাদরে। রবিবার সেই স্মৃতি ফিরিয়ে দিলেন ট্র্যাভিস হেড। চোটের কারণে টুর্নামেন্টেই খেলা নিয়ে যাঁর সংশয় তৈরি হয়েছিল। বিশ্বকাপে কিউই ম্যাচে খেলতে নেমেই সেঞ্চুরি করে গিয়েছিলেন। আর ফাইনালের মঞ্চে টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং লাইনআপকে সাধারণ স্তরে নামিয়ে আনলেন হেড। হেডের ব্যাটে ভর করেই এল অজিদের ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জয়। ভারতের চিরকালীন নেমেসিস হয়ে গেলেন তিনি। ১২০ বলে ১৩৭ করে যখন ফিরলেন তখন জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া।
আর হেড সেঞ্চুরিই করতে পারতেন না। প্ৰথম ওভারেই তাঁর ক্যাচ মিস না হলে। জসপ্রীত বুমরার বলে খোঁচা লেগে বল স্লিপে চলে যায়। গিল এবং কোহলির মাঝে বল পড়ে। সেই ক্যাচ নিলে ম্যাচের ফলাফল আলাদা হতেই পারত।
৪) ভারতীয় বোলারদের অফ ফর্ম: গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় বল করে গিয়েছেন বুমরা-শামিরা। এর আগে ২২৯ রান ডিফেন্ড করেছে ভারত। এই টুর্নামেন্টেই। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৮৩, শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ রানে মুড়িয়েও দিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। তবে আসল দিনেই ভারতীয় বোলাররা জ্বলে উঠতে পারলেন না। ২৪১ রানের পুঁজি নিয়ে শামি-বুমরারা নিলেন মাত্র ৩ উইকেট।
৫) খারাপ ফিল্ডিং: ভারতের দুর্দশা একদম প্রকট হয়ে গেল ফিল্ডিংয়েও। দুই দলের ফিল্ডিং আসলে ম্যাচের ফারাক গড়ে দিল। অজিরা যেখানে ফিল্ডিংয়ে কমপক্ষে ৩০ রান সেভ করলেন। সেখানে ভারতীয় দলের ফিল্ডিং হল অত্যন্ত সাধারণ মানের। উইকেটের পিছনে সেভাবে কিপ করতে পারলেন না রাহুল। অজস্র অতিরিক্ত রান খরচ করলেন ভারতীয় ফিল্ডাররা। ম্যাচে আদতে যা ফারাক গড়ে দিল পুরোপুরি।