আফগানিস্তান: ২৯১/৫
অস্ট্রেলিয়া: ২৯৩/৭
অবিশ্বাস্য। অকল্পনীয়। ওয়াংখেড়েতে যা ঘটল তা দৃষ্টিবিভ্রম ঘটায়। তান্ডব চালিয়ে হারের মুখ থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ওয়ানডে ক্রিকেটের সম্ভবত সেরা কামব্যাক ইনিংসের সাক্ষী থাকল ওয়াংখেড়ে। ২৯২ রান চেজ করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া একসময় ৯১/৭ হয়ে গিয়েছিল।
সেই ম্যাচ যে অজিরা জিতবে, দূরতম কল্পনাতেও ভাবা যায়নি। সেই ম্যাচ-ই ঐতিহাসিকভাবে জিতিয়ে দিলেন ম্যাক্সওয়েল। ১২৮ বলে ২০১ রানের ইনিংসে আফগানদের সেমিফাইনালে পৌঁছনোর স্বপ্ন আপাতত থামিয়ে দিলেন একাই। একদিনের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা কামব্যাক ইনিংস খেলে গেলেন তিনি।
আফগানিস্তানের রূপকথা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ম্যাড ম্যাক্সের তান্ডবে । পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরাও হারের দরজায় পৌঁছে গিয়েছিল। কোমাতে চলে যাওয়া যাকে বলে আর কী! সেখান থেকেই ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় ইনিংসে ভর করে ড্যাং ড্যাং করে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের নিশ্চিত করে ফেলল অজিরা। অস্ট্রেলিয়ার কাছে জয়ের জন্য ২৯২ রানের চ্যালেঞ্জিং টার্গেট ছুড়ে দিয়েছিলেন। সেই রানের মধ্যে ম্যাক্সওয়েল একাই করলেন ২০১। ২১ বাউন্ডারির পাশাপাশি ১০ টা ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে গেলেন। ১৫৭.০৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করলেন পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে।
তার আগে অজি ব্যাটিং ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল রশিদ নভিনদের দুরন্ত বোলিংয়ের সামনে।
২৯১ রানের পুঁজি ডিফেন্ড করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ ধসে গিয়েছিল নভিন উল হক এবং আজমাতুল্লাহ ওমরজাইয়ের শুরুর স্পেলে। দ্বিতীয় ওভারেই ট্র্যাভিস হেডকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নভিন উল হক। ষষ্ঠ ওভারে মিচেল মার্শকে শিকার করেন অজমাতুল্লাহ ওমরজাই। স্টিভ স্মিথ, ক্যামেরন গ্রিন এদিন নামেননি। বদলে নেমেছিলেন মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
৪৩/২ হয়ে যাওয়ার পরেও ভাবা যায়নি অজি ব্যাটিং আফগানদের সামনে এভাবে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করে বসবে। তবে নবম ওভারে ওমরজাই ওপেনার ওয়ার্নার, এবং উইকেটকিপার জস ইংলিশকে ফেরানোর পরেই অসাধারণ জয়ের গন্ধে উদ্বেল হয়ে ওঠে মুম্বই। পাওয়ার প্লেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।
এরপরে সময় যত গড়িয়েছে ততই অজি ব্যাটিংয়ের হাড়-কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছিল। ৪ উইকেট খুইয়ে ফেলার পর অজি ব্যাটিং পুরোটাই দাঁড়িয়েছিল মার্নাস লাবুশেনের অভিজ্ঞতার ওপর। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি রান আউট হয়ে যান। অজি লোয়ার অর্ডারে ধস নামান রশিদ খান। সেখান থেকেই অজিদের স্কোর দাঁড়িয়েছিল ৯১/৭-এ। প্রায় ২০০ রান তখনও বাকি ছিল। প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার বলতে ছিলেন কেবল ম্যাক্সওয়েল। তিনিই সেই রান চেজ করে দেখিয়ে দিলেন। ক্যাপ্টেন প্যাট কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে। যিনি অন্যপ্রান্তে ৬৮ বল ফেস করলেন। কোনওরকমে পার্টনারশিপ টিকিয়ে রাখার তাগিদে করলেন ১২রান। অষ্টম উইকেটে অবিচ্ছেদ্য পার্টনারশিপে দুজনে যোগ করলেন ২০২ রান। যার পুরোটাই এল ম্যাক্সওয়েলের বল্লা থেকে।
তার আগে আফগানিস্তান প্ৰথমে ব্যাট করে বড়সড় স্কোর করে ইব্রাহিম জাদরানের শতরানে ভর করে। ইনিংসে ওপেন করতে নেমে পুরো ৫০ ওভার-ই অপরাজিত থাকেন জাদরান। ১৪৩ বলে ১২৯ করার পথে তিনিই বিশ্বকাপে প্রথম আফগান ব্যাটার হিসাবে সেঞ্চুরির কৃতিত্ব অর্জন করেন। শেষদিকে ঝড় ওঠে রশিদ খানের ব্যাটে। ১৮ বলে ৩৫ করে দলকে প্রায় তিনশোর কাছাকাছি পৌঁছে দেন।
টসে জিতে প্ৰথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। রহমনুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান দলকে ভালো সূচনা উপহার দিয়েছিলেন। গুরবাজ হ্যাজেলউডের শিকার হওয়ার আগে ২৫ বলে ২১ করে যান। ওপেনিং জুটিতে ওঠে ৩৮ রান। রহমত শাহের (৩০) সঙ্গে দ্বিতীয় জুটিতে ইব্রাহিম ৮৩ রান যোগ করেন। এই জুটিতে ভাঙন ধরান ম্যাক্সওয়েল। অধিনায়ক হাসমাতুল্লাহ শাহিদিও (২৬) বেশিদূর খেলতে পারেননি। তবে ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে সাহায্য করে যান। নবি এবং ওমরজাইকে (২২) ডেথ ওভারে ফিরিয়ে দেন ম্যাক্সওয়েল, হ্যাজেলউড।
শেষদিকে, রশিদ খান এবং ইব্রাহিম জাদরান রান তোলার গতি বাড়ান। গোটা ইনিংস জুড়েই মন্থর খেলছিলেন শতরানকারী ইব্রাহিম। তবে শেষদিকে মারণ মূর্তি ধরেন তিনি। রশিদ খানের সঙ্গে শেষ পাঁচ ওভারে ৫৮ রান যোগ করেন তিনি। সবমিলিয়ে নিজের ইনিংসে ৮টা বাউন্ডারির পাশাপাশি তিনটে ওভার বাউন্ডারিও হাঁকান তিনি। রশিদ খান প্রায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে ঝড় তোলেন। হাঁকান দুটো বাউন্ডারি, তিনটে বিশাল ছক্কা।