/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/10/ban-sa.jpg)
আফ্রিকান ঝড়ে কুপোকাত বাংলাদেশ (টুইটার)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৮২/৫
বাংলাদেশ: ২৩৩/১০
বাংলাদেশের চামড়া কার্যত গুটিয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তুখোড় ফর্মে থাকা প্রোটিয়াজদের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই অজানা আশঙ্কায় কাঁপুনি ধরে গিয়েছিল টাইগারদের শিবিরে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। বিশাল ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৪৯ রানে হেরে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে প্রায় ছিটকে গেল বাংলাদেশ। ৩৮৩ রানের পাহাড়ের সামনে ব্যাট করতে নেমে টাইগাররা অলআউট ২৩৩ রানে। খাতায় কলমে এখনও সম্ভবনা থাকলেও সেই সমীকরণ গণিতবিদদেরও লজ্জা দেবে।
বাংলাদেশের হয়ে রান চেজ করতে নেমে একাই লড়াই চালিয়ে গেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশি ব্যাটিং লাইনআপ ঘিরে কয়েকদিন ধরেই সমালোচনা চলছে। সেই জন্যই এদিন মাহমুদুল্লাহকে ছয়ে তুলে আনা হয়েছিল। মিরাজকে লোয়ার অর্ডারে পাঠিয়ে। আর সেই মাহমুদুল্লাহর ব্যাটেই লজ্জা কিছুটা হলেও এড়াল বাংলাদেশ। ৮১/৬ হয়ে গিয়েছিল একসময় বাংলাদেশ। সেখান থেকেই লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গী করে মাহমুদউল্লাহ দুর্ধর্ষ শতরান (১১১ বলে ১১১) করে গেলেন। নাহলে একশোর মধ্যেই গুটিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশি ইনিংস। ওয়াংখেড়েতে বাংলাদেশের সম্ভ্রম বাঁচিয়ে গেলেন তিনি। হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল প্ৰথম ইনিংসের শেষেই। সেই হার-ই সম্মানজনক পর্যায়ে নামিয়ে আনলেন রিয়াদ।
ইংল্যান্ডকে ওয়াংখেড়েতে পাড়ার দলের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্ৰথমে ব্যাট করতে নেমে ৩৯৯ তুলে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের কাছে স্বান্তনার বিষয় একটিই হতে পারে। ইংরেজদের হেভিওয়েট ব্যাটিং লাইনআপ ৩৯৯ রান খরচ করলেও বাংলাদেশের বোলারদের পিটিয়ে ছাতু করে ক্লাসেন-ডিককরা 'মাত্র' ৩৮২ রান তুলতে সমর্থ হল। সেই হিসাবে নিজেদের পিঠ নিজেরাই চাপড়াতে পারেন বাংলাদেশি বোলাররা।
চলতি ওয়ার্ল্ড কাপে মারণ ফর্মে রয়েছেন কুইন্টন ডিকক। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলতি বিশ্বকাপেই জোড়া শতরান করে বাংলাদেশ ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন ডিকক। আর চলতি ওয়ার্ল্ড কাপের তৃতীয় শতরান তুলে ফেলতে ভুল করেননি তারকা। সাকিব-হাসান-মেহেদিদের নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করে ১৪০ বলে ১৭৪ করে গেলেন। ১৫ বাউন্ডারির সঙ্গে সাতটা পেল্লায় ছক্কা হাঁকালেন তিনি।
ডিককের মতই মারণ ফর্মে আবির্ভূত হলেন হেনরিখ ক্ল্যাসেন। ১৮৩-এর বেশি স্ট্রাইক রেট নিয়ে ৪৯ বলে ৯০ করে গেলেন। দুটো বাউন্ডারির পাশাপাশি আটটা ছক্কা বেরোল ক্ল্যাসেনের ব্যাট থেকে।
STOP THAT Quinton de Kock! 😍
He reaches 150 with a six 🔥 pic.twitter.com/STwe8NZEWW— Sky Sports Cricket (@SkyCricket) October 24, 2023
পাওয়ার প্লে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলেছিলেন মুস্তাফিজুর, শরিফুল ইসলামরা। স্বপ্নের ডেলিভারিতে শরিফুল আউট করেন রেজা হেন্ড্রিক্সকে। রাসি ভ্যান ডার ডুসেন-ও ঠিক তারপরেই আউট হয়ে যান। ৩৬/২ হয়ে গিয়ে যে চাপ তৈরি হয়েছিল প্রোটিয়াজ ব্যাটিং অর্ডারে, তা আলগা হয় ডিকক-আইডেন মারক্রামের ১৪৩ রানের পার্টনারশিপে।
এরপরে মারক্রাম ফিরে যাওয়ার পর ওয়াংখেড়েতে তান্ডব চালান ডিকক, ক্ল্যাসেনরা। ডিকক দক্ষিণ আফ্রিকানদের হয়ে ব্যক্তিগত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করে আউট হওয়ার পর ডেথ ওভারে টর্নেডো নিয়ে হাজির হন কিলার মিলার-ও। মাত্র ১৫ বলে ৩৪ করে যান তিনি। হাঁকান চারটে বিশাল ছক্কা। শেষ ১০ ওভারে সাইক্লোন তুলল ১৪৪ রান।
টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকান তান্ডব এড়ানোর জন্য প্ৰথমে ব্যাট করতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। দুটো ম্যাচ বাইরে থাকার পর সাকিব প্ৰথম একাদশে ফেরেন তৌহিদ হৃদয়ের জায়গায়। তবে প্রত্যাবর্তনেই দুঃস্বপ্নের সাক্ষী থাকলেন তিনি। শরিফুল, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর, সাকিব নিজেও বল হাতে প্রহার হজম করেন।
আর বিশাল টার্গেট চেজ করতে নেমে দমবন্ধ হয়ে গেল দক্ষিণ বাংলাদেশের। শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে টাইগাররা। মার্কো জ্যানসেন, লিজার্ড উইলিয়ামস, জেরাল্ড কোয়েটজে, কাগিসো রাবাদাদের পেস, সুইং সামলাতে না পেরে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করে বসেন টাইগাররা।
৮১ রানেই হাফডজন উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। নিশ্চিত হারের মুখে দাঁড়িয়ে এরপর কিছুটা যেন নির্ভার হয়েই অনবদ্য ইনিংস উপহার দেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ চার উইকেটে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে যোগ করে যায় আরও ১৫২ রান। যা নিশ্চিতভাবেই অলরাউন্ড পারফরম্যান্স স্বত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভাবাতে বাধ্য হবে।
এমনিতে একটি সংস্করণের বিশ্বকাপে সর্বাধিক সেঞ্চুরির নজির রয়েছে রোহিত শর্মার। ২০১৯-এ পাঁচ-পাঁচটা সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। তবে ডিকক যদি এরকম মারণ ফর্মে থাকেন, তাহলে সেই রেকর্ড চূর্ণ হওয়ার সমূহ সম্ভবনা।