রোমাঞ্চকর ম্যাচ জিতে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপের দরজার দিকে ঠেলে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। চেন্নাইয়ে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পাকিস্তানকে ১ উইকেট হাতে নিয়ে হারাল প্রোটিয়াজরা। বৈশ্বিক কোনও টুর্নামেন্টে এই প্রথমবার পাকিস্তান টানা চার হার হজম করল। ১৯৯৯-এর পর দক্ষিণ আফ্রিকাও প্ৰথমবারের মত পাকিস্তানকে ওয়ার্ল্ড কাপের মঞ্চে হারাল।
নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ধুঁকতে ধুঁকতে জিতেছিল পাকিস্তান। তারপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐতিহাসিক রান চেজ করে জয়ে পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড কাপের সূচনা দারুণ করেছিল। তবে ভারত ম্যাচ থেকেই সব ওলট পালট হয়ে যায়। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান এবং সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার হজম করল পাকিস্তান।
ছয় ম্যাচে মাত্র দুটো জয়। তবে এখনও পাকিস্তানের খাতায় কলমে সেমিতে পৌঁছনোর সুযোগ রয়েছে। কীভাবে? মিলিয়ে নেওয়া যাক অঙ্ক।
পাকিস্তান: ৬ ম্যাচে ৪ হার। সেমিফাইনালের দৌড় থেকে কার্যত আউট পাকিস্তান। এখনও তিন ম্যাচ বাকি বাবর আজম বাহিনীর। মুখোমুখি হতে হবে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশের। শেষ তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিততে হবে এখন পাকিস্তানকে। তারপরেও অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ফলাফলের ওপর নির্ভর করতে হবে পাকিস্তানকে। ভারতের সঙ্গে কমবেশি সেমিতে পৌঁছেই গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ড। বাকি এক স্থানের জন্য লড়াই পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তান বাকি তিন ম্যাচের একটিতে হারলেই খাতায় কলমে ফুলস্টপ পড়ে যাবে বিশ্বকাপ অভিযানে। পাকিস্তান চাইবে বাকি তিন ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা এবং অস্ট্রেলিয়া যেন নিজেদের বাকি ম্যাচ হারে।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ছয় ম্যাচে পাঁচ জয় নিয়ে লিগ টেবিলের এখন শীর্ষে প্রোটিয়াজরা। পাকিস্তানকে হারানোর পর নেট রান রেটের হিসাবে ভারতকে টপকে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনাল কার্যত নিশ্চিত। বাকি ম্যাচগুলোর একটিতে জিতলেই দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিতে সরকারিভাবে কোয়ালিফাই করে যাবে।
ভারত: পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতে সেমিফাইনালের বৃত্তে ঢুকে গিয়েছে ভারত। আর একটা জয়েই কনফার্ম হয়ে যাবে ভারতের সেমিফাইনাল জায়গা।
নিউজিল্যান্ড: নিউজিল্যান্ড বর্তমানে আট পয়েন্টে রয়েছে। সেমিফাইনালে পৌঁছনোর বিষয়ে ফেভারিট হলেও কিউইরা আট পয়েন্ট রয়েছে। চার জয় পেয়েছে। সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার জন্য নিউজিল্যান্ডকে এখনও দুটো ম্যাচ জিততে হবে।
অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়া পাঁচ ম্যাচের তিনটিতে জয় পেয়েছে। প্রাথমিক জোড়া হারের ধাক্কা সামলে অজিরা টানা জয়ের হ্যাটট্রিক করে বসেছে। বাকি পাঁচ ম্যাচের তিনটে জিতলেই অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডসের মত কম শক্তিশালী দলের বিপক্ষে অজিদের খেলতে হবে।
শ্রীলঙ্কা: শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ অভিযান আশাপ্রদ না হলেও টানা দুটো জয় লঙ্কানদের সেমিফাইনালের দৌড়ে তুলে এনেছে। শেষ চারের জায়গা পাকা করতে হলে শ্রীলঙ্কাকে বাকি ম্যাচের সবগুলোই জিততে হবে।
আফগানিস্তান: এবার বিশ্বকাপে তিন অঘটনের দুটোই আফগানদের দখলে। প্রথমে ইংল্যান্ড, তারপর পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানরা সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে রয়েছে। আরও দুটো জয় আফগানদের পক্ষে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থ্রিলার আরও উত্তেজক জায়গায় পৌঁছে দেবে।
বাংলাদেশ: পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটা জয়। খাতায় কলমে এখনও সেমির আশা থাকলেও বাংলাদেশ সম্ভবত নিজেরাও বুঝে গিয়েছে নিজেদের বিশ্বকাপ-ভবিষ্যৎ।
ইংল্যান্ড: ডিফেন্ডিং বিশ্বকাপজয়ীদের জন্য দুঃস্বপ্নের অভিযান হয়ে রইল এবার। হারের পর হার। ইংল্যান্ড ক্রিকেটাররা নিজেরাও স্বীকার করে নিয়েছে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন তাঁরা।
নেদারল্যান্ডস: সেমিফাইনালের আশা করছে না ডাচ শিবির। তবে নেদারল্যান্ডস চাইবে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করার আগে অন্তত আরও একটা অঘটন ঘটিয়ে টুর্নামেন্ট স্মরণীয় করে রাখতে।