Advertisment

রোহিত-কোহলি-গিলরা ঠিক এই এই ছকেই আউট হবেন কিউই ম্যাচে! টিম ইন্ডিয়া ব্যাটারদের দুর্বলতা ফাঁস

ভারতীয় ব্যাটারদের কার কোথায় দুর্বলতা, দেখে নিন একনজরে

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
team-india

টিম ইন্ডিয়া (বিসিসিআই টুইটার)

সেরা ফর্মে রয়েছেন ভারতীয় ব্যাটাররা। তবে ভারতীয় হেভিওয়েট ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পুরোদস্তুর তৈরি হয়ে মাঠে নামছে নিউজিল্যান্ড। রোহিত-কোহলিদের কীভাবে থামানো যেতে পারে, মহাতারকাদের দুর্বলতা ঠিক কোন জায়গায় বিশ্লেষণ করে দেখল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-

Advertisment

বিরাট কোহলি:

কিউইদের সম্ভাব্য প্ল্যান- বাঁ হাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের নিখুঁত লাইন লেন্থে বোলিংয়ে কোহলিকে আটকে রাখা।

কোহলি বাঁ হাতি স্পিনারদের বিরুদ্ধে বেশ অস্বস্তিতে থাকেন। এই ঘটনা যদি দূরে সরিয়েও রাখা যায়। স্যান্টনারের ভারতের বিপক্ষে ওয়ার্ল্ড কাপের দুটো ম্যাচের (২০১৯, সেমিফাইনাল এবং ২০২৩ ধর্মশালায় গ্রুপ পর্বের ম্যাচে) পরিসংখ্যানে আলোকপাত করা যাক। ম্যাঞ্চেস্টারে ভারতের বিপক্ষে ১০ ওভার বোলিং করে কিউই স্পিনার ২ টো মেডেন সহ মাত্র ৩৪ রান খরচ করেন। তুলে নেন জোড়া উইকেট। ধর্মশালায় এই ফিগার ছিল ১০-০-৩৭-১।

বিশ্বমানের সিমারে ভর্তি একটা দলে স্যান্টনার নিখুঁত লাইন লেন্থে বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখায় সিদ্ধহস্ত। পাওয়ার প্লে শেষ হলে কোহলি ক্রিজে নামলেই স্যান্টনারের হাতে বল তুলে দিতে পারেন কেন উইলিয়ামসন। ভারতের প্ৰথম ছয়ে কোনও বাঁ হাতি ব্যাটার না থাকায় রানের গতি কমিয়ে রাখতে নিউজিল্যান্ডের বড় বাজি হতে পারেন স্যান্টনার।

রবীন্দ্র জাদেজার মতই ব্যাটসম্যানের কানায় লাগানোর কৌশলে ততটা বিশ্বাসী নন স্যান্টনার। আঁটোসাঁটো লাইন লেন্থে বোলিং করে ব্যাটসম্যানকে রানের জন্য মাথা খুঁড়ে মারা- এটাই স্যান্টনারের স্ট্র্যাটেজি। বিশ্বকাপে অন্যান্য বাঁ হাতি স্পিনাররাও ভারতের বিপক্ষে কমবেশি সফল। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ভারত দুরন্ত শুরু করার পর মিডল অর্ডারকে আটকে দিয়েছিলেন কেশব মহারাজ। এমনকি আইপিএলের হোম গ্রাউন্ড বেঙ্গালুরুতে কোহলি শিকার হন নেদারল্যান্ডস স্পিনার রুলফ ভ্যান ডার মারউই। ওয়াংখেড়েতে কোহলি কীভাবে স্যান্টনারকে সামলান, সেটাই দেখার বিষয় হতে চলেছে।

এতদিন পর্যন্ত ভারতীয় ওপেনারদের উড়ন্ত সূচনার সৌজন্যে কোহলিকে মিডল অর্ডারে রনংদেহী মূর্তিতে অবতীর্ণ হতে হয়নি। কোহলি নিরাপদে ব্যাটিং করে দলকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দিয়েছেন। কোহলিকে যদি স্যান্টনার আটকে দিতে পারেন, তাহলে ভারতের বিপদ বাড়বে। রান তোলার গতি কমে গেলে অন্য প্রান্তের ব্যাটাররা ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে বাধ্য হবেন। ভারতীয় ওপেনাররা ওয়াংখেড়েতে ভালো সূচনা এনে দিতে ব্যর্থ হলে, পুরো চাপ নিতে হবে কোহলিকে। সেই সময়ই স্যান্টনারের স্পেল ম্যাচের নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াতে পারে। স্যান্টনারের মোকাবিলা করার জন্য ভারত চাইবে মিডল অর্ডারে শ্রেয়স এবং কোহলি দলকে টানুন। দুজনেই স্পিনারদের বিপক্ষে ভালো ফুটওয়ার্ক সমেত ব্যাটিং করেন।

শ্রেয়স আইয়ার:

কিউইদের সম্ভাব্য প্ল্যান- লকি ফার্গুসনকে গতিময় বাউন্সার সমেত হাজির করা

এই দ্বৈরথ ম্যাচের অন্যতম ফলাফলের অন্যতম ফ্যাক্টর হতে পারে। ভারতীয় পিচে সিম মুভমেন্ট সেভাবে কার্যকর করা সম্ভব নয়। এমন অবস্থায় নিউজিল্যান্ডের রণকৌশল হতে পারে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের শর্ট বলে যাচাই করে নেওয়া। আর এই প্ল্যানিংয়ের আসল চরিত্র লকি ফার্গুসন।

শর্ট বলে শ্রেয়সের দুর্বলতা প্রকট হয়ে যাওয়ার পর নিজের টেকনিকে সামান্য অদল বদল করেছেন তিনি। তবে ফার্গুসনের গতিমত শর্ট বল তাঁর টেকনিকের কড়া পরীক্ষা নেবে। এছাড়াও হঠাৎ হঠাৎ ফার্গুসনের তীব্র গতির ইয়র্কার ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে ফার্গুসনকে শর্ট বল ফেলতে হবে মাথার সমান উচ্চতায় যে পজিশন থেকে হুক শট মারা দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে। শর্ট বল ট্যাকটিক্স-এ ব্যাটারদের ফুটওয়ার্ক তো বটেই মানসিকতাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। কোমর থেকে নিচ উচ্চতার বল শ্রেয়সের স্ট্রোক প্লের জন্য আদর্শ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেঞ্চুরি কর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়েছেন শ্রেয়স। তাঁর এবার মিডল অর্ডারের পারফরম্যান্স প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট।

সূর্যকুমার যাদব:

কিউইদের সম্ভাব্য প্ল্যান- ট্রেন্ট বোল্টকে ফুল লেন্থে বোলিং করিয়ে প্যাডে আছড়ে ফেলা

বাঁ হাতি পেসারদের ইন ডিপার, বিশেষ করে প্যাড এবং পা লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা বলে সূর্যকুমারের দুর্বলতা রয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই সূর্যকুমারকে আটকে দিয়েছিলেন অজি তারকা মিচেল স্টার্ক। এবার বিস্ফোরক এই ব্যাটারকে এই কৌশলেই থামানোর কাজ করতে পারেন ট্রেন্ট বোল্ট। সোজাসুজি ডেলিভারি সূর্যকুমার বরাবর লেগ স্ট্যাম্পে ফ্লিক করার মুডে থাকেন। এই কারণেই লেগ বিফোরের সম্ভবনাও বেশি রয়েছে তাঁর।

স্পিনাররাও সূর্যের বিরুদ্ধে স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বোলিং করেন। ব্যাট হাতে বরাবর রান তোলার মেজাজে থাকেন স্কাই। আর এই জন্যই স্পিনারদের সামনে সূর্যের আউট হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। স্যান্টনার স্ট্রেটারে সিদ্ধহস্ত। গতির হেরফের ঘটিয়ে ব্যাটারকে বিভ্রান্ত করতে পারেন। স্যান্টনার বনাম সূর্যকুমারের দ্বৈরথ বুধবার অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে।

সূর্যকে থামানোর জন্য অন্য অস্ত্র হতে পারেন লকি ফার্গুসন। ওয়াংখেড়ের বাউন্ডারি ছোটখাটো। উইকেটের পিছন দিয়ে আনঅর্থোডক্স শট খেলেন স্কাই। এই কারণেই লকি ফার্গুসনের কাছে অপশন থাকবে ভারতীয় তারকাকে সাত তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠানো।

তবে সূর্যকুমারের বিপক্ষে সমস্ত এই রণকৌশল তিনি ক্রিজে নামা মাত্রই প্রয়োগ করতে হবে। একবার ক্রিজে থিতু হয়ে গেলে কিউই বোলারদের কিন্তু নাভিশ্বাস তুলে দিতে পারেন তিনি।

শুভমান গিল:

কিউইদের সম্ভাব্য প্ল্যান- ভিতরে ঢুকে আসা ফুল লেন্থের বলে দুর্বলতা

গিলের এই পুরোনো দুর্বলতা আগেও কাজে লাগিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ভিতরে ঢুকে আসা ফুল লেন্থের বল মোকাবিলা করার সময় গিলের সামনে ঝোঁকার ক্ষেত্রে সামান্য বিলম্ব করার প্রবণতা রয়েছে। কিউইদের কাইল জেমিসন তো বটেই টিম সাউদিও এই দুর্বলতা পড়ে ফেলে ব্যতিব্যস্ত করেছিলেন অতীতে। জেমস আন্ডারসন, কাগিসো রাবাদা সমস্যায় ফেলেন এই কৌশলে। ইংল্যান্ড ম্যাচে ক্রিস ওকস বোল্ড করেন এই ডেলিভারিতেই। গিল নিজেও নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন।

রবীন্দ্র জাদেজা:

কিউইদের সম্ভাব্য প্ল্যান- বগল লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা শর্ট বল

শরীর লক্ষ্য করে শর্ট বলের বাউন্সার বৃষ্টি করাই কিউইদের লক্ষ্য হতে চলেছে। এমন বলে বরাবর অস্বস্তিতে থাকেন জাদেজা। জাদেজা পুল শট হাঁকানোর চেষ্টা করেন। তবে লেগ স্লিপ বরাবর বল উঁচুতে উঠে যায়।২০১৯-এর সেমিতেও কিউইরা এই ছকে আটকাতে চেয়েছিলেন জাদেজাকে। এমনকি গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও ম্যাট হেনরি, ফার্গুসন এই কৌশল নেন। তবে জাদেজা বিপদ এড়ান ফাইন লেগের গ্যাপ ব্যবহার করে। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে শর্ট বলের ক্ষেত্রে জাদেজার কোনও সমস্যা নেই। পয়েন্টের ওপর দিয়ে হাঁকিয়ে দিতে দ্বিধা করেন না। তবে বগল লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা বলেই জাদেজার যত অস্বস্তি।

রোহিত শর্মা:

কিউইদের সম্ভাব্য প্ল্যান- ইনিংসের শুরুতে দুদিকে সুইং

রোহিত শর্মাকে থামানোর সবথেকে বড় উপায় ক্রিজে নাম মাত্রই আউট করে ফেলা। এই বিশ্বকাপে কেবলমাত্র অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কা রোহিতকে সাত তাড়াতাড়ি আউট করতে পেরেছে। জস হ্যাজেলউড উইকেটের সামনে শিকার করেন মারকুটে তারকাকে। শ্রীলঙ্কান বাঁ-হাতি সিমার মধুশঙ্কা রোহিতকে আউট করেন চমৎকার অফ কাটারে। বাঁ হাতি সিমারদের দুই প্রান্তিক সুইংয়ে যে রোহিত এখনও বিভ্রান্ত প্রকট হয়ে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা ম্যাচেই। মধুশঙ্কা রোহিতকে ফেরান চমৎকার স্ট্র্যাটেজিতে। প্ৰথমে ইন সুইংগার দিয়েছিলেন মধুশঙ্কা। তারপরেই বাইরে বেরিয়ে যাওয়া অফ কাটার। রোহিত মানসিকভাবে ইনসুইংগার খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। শেষমেশ ভুল লাইনে কমিট করে বসেন তিনি।

মধুশঙ্কার কৌশলই নিতে পারেন ট্রেন্ট বোল্ট। এমনিতে ছন্দে না থাকলেও কিউই সিমার ওয়াংখেড়েতে শ্রীলঙ্কান বিরুদ্ধে হারানো ফর্ম ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। একইভাবে সাউদি লেট অফ কাটার সমস্যায় ফেলতে পারে বোল্টকে।

কেএল রাহুল:

কিউইদের সম্ভাব্য প্ল্যান- ফার্গুসনের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে গতিমত বল

অফ এবং লেগ সাইড দুই দিকেই শট খেলায় পারদর্শী। কেএল রাহুলের দুর্বলতা পঞ্চম স্ট্যাম্প বরাবর। যে চ্যানেলে বারবার উইকেটের পিছনে খোঁচা দিয়ে আউট হওয়ার ইতিহাস রয়েছে তাঁর। অফ সাইডে ড্রাইভ, কাট, গ্লাইড, ট্যাপ এবং লেগ সাইডে ফ্লিক, পুল সহ একাধিক শটের সম্ভার রয়েছে রাহুলের। তবে শরীর থেকে দূরের বলে খোঁচা দেওয়ার অভ্যেস এখনও রয়েছে তারকা ব্যাটারের। পিচ থেকে কোনও ফাস্ট বোলার যদি মুভমেন্ট আদায় করে নিতে পারেন, তাহলে রাহুল আটকে যেতে পারেন। সাউদির গতি কম থাকায় রাহুলের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

তবে রাহুলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন লকি ফার্গুসন। সুইংয়ে সেভাবে পারদর্শী নন ফার্গুসন। তবে লেন্থের অদলবদল ঘটিয়ে ফার্গুসন আতঙ্ক আমদানি করতে পারেন রাহুলের কাছে। ১৪০ প্লাস গতিতে বল করায় সোয়াইপ করে হাঁকানো-ও দুরূহ। ব্যাক অফ দ্য লেংথের ডেলিভারিতে ফার্গুসন যে বাউন্স আদায় করেন, তাতে রাহুলের কাছে ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন তিনি। শ্রীলঙ্কার দুষ্মন্ত চামিরা শর্ট অফ দ্য লেন্থের বল মিসটাইম করে আউট হয়ে যান রাহুল। সেই কৌশলই হয়ত প্রয়োগ করতে চাইবে নিউজিল্যান্ড।

Indian Team ICC Cricket World Cup Cricket World Cup New Zealand Cricket Team New Zealand Indian Cricket Team
Advertisment