পাকিস্তান: ২৮২/৭
আফগানিস্তান: ২৮৬/২
ইতিহাস বদলে গেল। নতুন ইতিহাস গড়ার সাক্ষী থেকে গেল চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়াম। আগেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চলতি বিশ্বকাপের অঘটনের স্বাদ দিয়েছিল আফগানিস্তান। এবার আফগানদের কাছে ব্যাটে-বলের যুদ্ধে হার মানল পাকিস্তান। জয় এল কার্যত কোনও রোমাঞ্চ ছাড়াই। পাকিস্তান প্ৰথমে ব্যাটিং করে ২৮২-এর বেশি তুলতে পারেনি। সেই রান-ই আফগানিস্তান চেজ করল হাতে ৮ উইকেট নিয়ে। মাত্র দুই উইকেট হারিয়েই ঐতিহাসিক জয়ে পৌঁছল আফগানরা।
আফগানিস্তান ব্যাটিংয়ের সামনে কার্যত খাপই খুলতে পারেনি পাকিস্তানের বিখ্যাত বোলিং লাইনআপ। টপ অর্ডারের প্ৰথম চার তারকার তিনজন-ই হাফসেঞ্চুরি করলেন। দুই ওপেনার রহমনুল্লাহ গুরবাজ (৬৫), ইব্রাহিম জারদান (৮৭) তো বটেই, তিনে নামা রহমান শাহ-ও হাফসেঞ্চুরি করলেন ক্যাপ্টেন হাসমতুল্লাহ শাহিদিকে সঙ্গে নিয়ে। আফগান ক্যাপ্টেন ফিফটি না পেলেও দলের হয়ে ফিনিশিং টাচ দিলেন ৪৮ রানে অপরাজিত থেকে। দলের জয়ের বাউন্ডারিও এল হাসমাতুল্লাহ-র ব্যাট থেকে।
বিশ্বকাপ তো বটেই ওয়ানডে ক্রিকেটেও এর আগে আফগানিস্তান কখনও পড়শি পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পায়নি। সাতবারের মুখোমুখি সাক্ষাতে পাকিস্তান প্রত্যেকবারই জয়ের মুখ দেখেছিল। তবে সোমবারের পর এই ফলাফল ৭-১। সবথেকে বড় বিষয়, নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসেও এত বড় টার্গেট চেজ করে জয়ের মুখ দেখেননি রশিদ শাহ-রা। সেই রেকর্ডও গড়লেন তাঁরা।
পাকিস্তান টসে জিতে প্ৰথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আব্দুল্লা শফিক এবং ইমাম উল হকের ওপেনিং পার্টনারশিপ পাকিস্তানকে ভালো শুরুয়াত এনে দিয়েছিল। পাকিস্তান ব্যাটিং লাইনআপে প্ৰথম ব্রেক থ্রু এনে দেন আজমাতুল্লা ওমরজাই। ইমামকে (১২) ফিরিয়ে দেন। দ্বিতীয় উইকেটে ক্যাপ্টেন বাবর আজম-আব্দুল্লা শফিকের পার্টনারশিপ পাকিস্তানকে ১০৪ রান যোগ করে দলকে স্থিরতা এনে দেয়।
হাফসেঞ্চুরিয়ন শফিককে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় ধাক্কা দেন নূর আহমেদ। নূরের দ্বিতীয় শিকার ফর্মে থাকা পাক উইকেটকিপার ব্যাটার মহম্মদ রিজওয়ান। সাউদ শাকিলকে আউট করেন মহম্মদ নবি। এরপরেই ক্যাপ্টেন বাবর আজমের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। ৭৪ রানে তারকা ব্যাটারকও ফিরতে হয় নূর আহমেদের শিকার হয়ে। ২০৬/৫ হয়ে গিয়ে একসময় পাকিস্তানের বড় রান করার স্বপ্ন অনেকটাই শঙ্কায় ছিল।
আরও পড়ুন: ছক্কা মারার জন্য আরও প্রোটিন চাই! ভারতে এসে পাকিস্তানের ডায়েট নিয়ে বিস্ফোরক ইমাম
তবে শাদাব খান (৩৮ বলে ৪০), ইফতিকার আহমেদের (২৭ বলে ৪০) ৭৩ রানের ঝড়ো পার্টনারশিপ পাকিস্তানকে ২৮২-এ পৌঁছে দেয়। দুই তারকার মধ্যে ইফতিকার আহমেদ সবথেকে বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন। একসময় মনে হচ্ছিল হয়ত তিনশো-ও পেরিয়ে যাবে পাকিস্তান। তবে শেষ ওভারে নভিন উল হক জোড়া উইকেট তুলে নেন। আউট করেন শাদাব এবং ইফতিকারকে।
এই রান চেজ করতে নেমে আফগানিস্তানকে শুরুতেই জয়ের মঞ্চ গড়ে দেয় দুই ওপেনার। গুরবাজ রহমনুল্লাহ এবং ইব্রাহিম জাদরান ঝোড়ো পার্টনারশিপ পাওয়ার প্লেতেই চাপে ফেলে দেয় পাক বোলারদের। শাহিন আফ্রিদি, হাসান আলি নতুন বলে উইকেট তুলতে ব্যর্থ হন। হ্যারিস রউফ শাহিনের জায়গায় বল করতে এসেও সুবিধা করতে পারেননি। এমনকি শাদাব খান, ওসামা মির, ইফতিকার আহমেদদের স্পিনিং ত্রয়ীও সফল হয়নি।
কেকেআরে খেলা তারকা রহমনুল্লাহ গুরবাজ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলেছিলেন। চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। ৫৩ বলে ৬৫ রানের ইনিংসে নিশ্চিত শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন তরুণ তারকা। ৯ বাউন্ডারির সঙ্গে একটা ছক্কাও হাঁকান তিনি। তবে শাহিন আফ্রিদি দ্বিতীয় স্পেলে এসে ব্রেক থ্রু দেন। লেন্থ বল আড়াআড়িভাবে খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন গুরবাজ। প্ৰথম জুটিতেই ১৩০ উঠে যাওয়ার পর বেশ শক্তপোক্ত জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল আফগানিস্তান।
গুরবাজের মত আগ্রাসী ভূমিকা না হলেও ইনিংস গড়ছিলেন ইব্রাহিম জাদরান-ও। ধীরে ধীরে হাফসেঞ্চুরি করে তিনিও সেঞ্চুরির দিকে পা বাড়িয়েছিলেন। তবে চেন্নাইয়ের আর্দ্রতায় ক্র্যাম্প-এর শিকার হচ্ছিলেন বারবার। শেষমেশ ক্লান্ত জাদরান ব্যক্তিগত ৮৭ রানে আউট হন হাসান আলির বলে। দ্বিতীয় জুটিতে ইব্রাহিম-রহমত শাহ জুটি ৬০ রান যোগ করে যায়।
দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর হালকা হলেও চাপে পড়ে গিয়েছিল আফগানিস্তান। হাসান আলি, ইফতিকার আহমেদরা টানা ডট বল খেলে নিজেদের ওপর নিজেরাই চাপ বাড়িয়ে ফেলেছিলেন। তবে ক্যাপ্টেন হাসমাতুল্লাহ শাহিদি ক্রিজে জমে যাওয়ার পর আফগানিস্তান সহজ সরলভাবে জয়ে পৌঁছে যায়। তৃতীয় উইকেটে ৯৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে।
নেদারল্যান্ডস এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতি থেকে জয়ের দেখা পেয়েছিল পাকিস্তান। তবে তারপর টানা তিন ম্যাচ হারের হ্যাটট্রিক হয়ে গেল বাবর আজমদের। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার পর হার হজম করতে হল আফগানিস্তানের বিপক্ষেও।
সেমিফাইনালের আশাও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে প্রত্যেক ম্যাচের পর। এখনও ফর্মে থাকা নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা তো বটেই মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ডের। শেষ চারের পৌঁছনোর জন্য অন্তত তিনটি ম্যাচ জিততেই হবে বাবরদের। এই ফর্মের পাকিস্তান কি শেষমেশ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবেন, সময়-ই বলবে।