পাকিস্তান বনাম আফগানিস্তান সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের শেষে। আফগানিস্তান ক্রিকেটাররা তখন বেনজির জয়ের পর চিপক প্রদক্ষিণ করছেন। দর্শকদের অভিবাদন কুড়োচ্ছেন। গোটা ম্যাচ জুড়েই আফগানি ক্রিকেটারদের জন্য গলার শির ফুলিয়ে চিৎকার করে গিয়েছেন ভারতীয় দর্শকরা।
সেই সময়েই ধারাভাষ্যকার ইরফান পাঠান সম্প্রচারকারী চ্যানেলের হয়ে হাতে বুম হাতে মাঠে ছিলেন। আর উদযাপনের মেজাজে থাকা রশিদ খানকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি। চ্যানেলের আলোচনা ছেড়ে পাঠান সরাসরি আফগানদের সেলিব্রেশনে যোগ দেন। রশিদ খানের সঙ্গে ভাঙড়া নাচতে থাকেন। সেই ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল।
বরাবরের পাকিস্তানি সমালোচক ইরফান পাঠান আপাতত পাক-মুলুকে একনম্বর ভিলেন। পাকিস্তানি ইউটিউবার, সংবাদমাধ্যম তো বটেই এমনকি প্রাক্তন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররাও নিয়ম করে তুলোধোনা করছেন ভারতীয় প্রাক্তন অলরাউন্ডারকে। প্ৰশ্ন উঠে গিয়েছে, সম্প্রচারকারী চ্যানেলের হয়ে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় সবসময় নিরপেক্ষ হতে হয়। সেই নিয়ম ভেঙেছেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রাক্তন উইকেটকিপার-ব্যাটার কামরান আকমল একহাত নিয়েছেন, ইরফান পাঠানকে। এআরওয়াই নিউজ চ্যানেলে কামরান বলে দিয়েছেন, "ইরফান পাঠানের নাচ দেখে বিস্মিত হয়েছি। অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় দলের পাকিস্তানকে হারানোর ঘটনা এখনও মনে করতে পারি। তখনও কিন্তু ওঁকে এতটা খুশি দেনি। আফগানিস্তান পাকিস্তানকে হারানোয় ওঁদের আনন্দ অনুমেয়। তবে পাঠানের নাচ দেখে খারাপ লাগছে। শুধু আমার নয়, গোটা পাকিস্তানের।
কেন আফগানদের জয়ে মাঠে নাচলেন তিনি। ইরফান পাঠান নিজের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। লিখেছেন, "আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। রশিদ খান আমাকে বলেছিল ওঁরা পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতবে। আমি কথা দিয়েছিলাম, আফগানরা জিতলে নাচব।"
চলতি বিশ্বকাপেই পাঠান বারবার অভিযোগরত পাকিস্তান দলকে একহাত নিয়েছিলেন। ভারতে এসে অভিযোগের বন্যা বইয়ে দিয়েছে পাকিস্তান দল। ভারতের কাছে আহমেদাবাদে হারের পর বিস্ফোরকভাবে পাক টিম ডিরেক্টর মিকি আর্থার সরাসরি দর্শকদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন। সেই ম্যাচেই আবার মহম্মদ রিজওয়ানকে ধর্মীয় কটূক্তির মুখে পড়তে হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে পাকিস্তান। এমনকি আইসিসির কাছে অভিযোগও দায়ের করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
পাকিস্তানের এরকম ধারাবাহিক অভযোগের পাল্টা দিয়েছিলেন এবার ইরফান পাঠান। স্টার স্পোর্টসে হিন্দিতে কমেন্ট্রি করার ফাঁকে পাঠান পাক দলকে একহাত নিয়ে নিজের এক পুরোনো অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন। বলেন, "সেবার ভারতীয় দল পাকিস্তানে খেলতে গিয়েছিল। পেশোয়ারে আমাদের খেলা ছিল। পাকিস্তানি সমর্থকরা আমাদের লক্ষ্য করে পেরেক ছুঁড়ছিল। একটা পেরেক সরাসরি চোখের তলায় আঘাত করে। সেই সময় ম্যাচ ১০ মিনিটের জন্য বন্ধও রাখতে হয়। গোটা সফর আমরা দারুণ কাটাচ্ছিলাম। অতিথি দল হিসেবে আমরা কিন্তু অভিযোগের পথে হাঁটিনি আমরা। এতে গোটা সফরের তাল কেটে যেতে পারত।”
মিকি আর্থারকেও একহাত নিয়েছেন তিনি। বলে দিয়েছেন, “উনি ম্যাচের পর নিজেদের খেলার বিশ্লেষণ করেননি। বরং দর্শকদের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন। আরে আপনারা নিজেদের খেলার দিকে ফোকাস করুন। দর্শকদের কাজ দর্শকদের করতে দিন। অযথা বিষয়গুলি টানবেন না। ভাল খেললে ভারতের দর্শকরা নিশ্চয় সমাদর করবে।”
সবমিলিয়ে, পাঠান যে আপাতত পাক মুলুকে সবথেকে অপছন্দের ব্যক্তি, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।