ভারত: ৪১০/৪
নেদারল্যান্ডস: ২৫০/১০
সেমিফাইনালের চার দল আগেই নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। রবিবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভারত বনাম নেদারল্যান্ডস মুখোমুখি হয়েছিল নিয়মরক্ষার লড়াইয়ে। সেমিতে নামার আগে ভারতের সামনে ছিল ছন্দ ধরে রেখে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়ার যুদ্ধ। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডস অঘটনের লক্ষ্যে নেমেছিল।
তবে এই ম্যাচের ওপরেই দুরু দুরু বুক নিয়ে নজর রাখছিল বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডস অঘটন ঘটিয়ে ভারতকে হারালেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় হয়ে যেত বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কা একমাত্র দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল। ভাগ্য সংশয়ে ছিল বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডস-এর। রবিবারের ম্যাচের ওপরেই ছিল দুই দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়টি।
আর এই ম্যাচে বাংলাদেশকে হতাশ করেনি ভারত। নেদারল্যান্ডসকে উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ছিটকে দিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড কাপের সেরা আট দলের মধ্যে থাকা নিশ্চিত হয়ে গেল ভারতের জয়ের সঙ্গে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবে টাইগার বাহিনী।
নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ভারতের জয় নিয়ে সংশয়ের কোনও অবকাশই রাখেননি রোহিতরা। প্ৰথমে ব্যাট করে ভারত ৪১০ তোলার পর ডাচরা কতক্ষণ যুঝতে পারে, সেটাই ছিল দেখার। অরেঞ্জ আর্মি অবশ্য প্রতিরোধ গড়ে তুলে স্কোরবোর্ডে ২৫০ পর্যন্ত পৌঁছল। যে ভারতীয় বোলারদের সামনে বিশ্বকাপের বাঘা বাঘা দলের হাঁটু কেঁপে গিয়েছে, লজ্জার হার হজম করতে হয়েছে, পূর্ণশক্তির সেই ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডস টিকল ৪৭.৫ ওভার। ভারত বিশ্বকাপে টানা নবম জয় পেল ১৬০ রানের ব্যবধানে।
নেদারল্যান্ডসের হয়ে ওপেনার ম্যাক্স ও'ডড (৩০), কলিন আকারম্যান (৩৫), এঙ্গেলব্রেখট (৪৫) রান পেলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডাচ তারকা নিদামানুরু হাফসেঞ্চুরিও করলেন। সবমিলিয়ে বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে সন্তোষজনক ব্যাটিং পারফরম্যান্স উপহার দিল নেদারল্যান্ডস।
হার্দিক পান্ডিয়া চোটের শিকার হওয়ার পর পাঁচ বোলারেই বাজিমাত করেছে ভারত। নকআউট পর্বে যাতে প্রয়োজনের মুহূর্তে অতিরিক্ত বোলার ব্যবহারের অপশন থাকে, সেই জন্যই ভারত এদিন পরীক্ষা নিরীক্ষার পথে হাঁটল। বিরাট কোহলি, শুভমান গিল, সূর্যকুমার যাদবদের কয়েক ওভার বল করিয়ে প্রস্তুত রাখা হল আপদকালীন পরিস্থিতির জন্য। এমনকি ক্যাপ্টেন রোহিত-ও কয়েক ওভার হাত ঘোরালেন। শামি-বুমরা-সিরাজরাও যেমন বিশ্রাম পেলেন, তেমন কোহলি-গিলদের সক্ষমতাও যাচাই হয়ে গেল। কোহলি তো ডাচ ক্যাপ্টেন স্কট এডওয়ার্ডসকেও আউট করলেন। রোহিত শেষদিকে শিকার করলেন হাফসেঞ্চুরিয়ন নিদামানুরুকে।
টসে জিতে রোহিত ব্যাটিং প্র্যাকটিস সেরে রাখতে চেয়েছিলেন। তাই ব্যাটিং নিতে দ্বিধা করেননি। আর রোহিতদের পরিকল্পনা পুরোপুরি কাজে লেগে গেল। টপ অর্ডারের প্ৰথম পাঁচ ব্যাটার-ই হাফসেঞ্চুরি বা তার থেকে বেশি রান করে গেলেন। রোহিত-গিল-কোহলির অর্ধশতরানের মঞ্চে জোড়া বিস্ফোরক শতরান করে গেলেন কেএল রাহুল, শ্রেয়স আইয়ার।
ভারতকে মারকাটারি সূচনা উপহার দেন রোহিত-গিলের ওপেনিং পার্টনারশিপ। মাত্র ১১ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ১০০ তুলে দেন দুজনে। শুভমান গিল ৩৪ বলে ৫১ করে আউট হন। রোহিত ৫৪ বলে ৬১ করেন। বিরাট কোহলি তিন নম্বরে নেমে ৫৬ বলে ৫১ করে যান।
নেদারল্যান্ডসকে আরও ব্যাকফুটে ফেলে দেয় শ্রেয়স আইয়ার-কেএল রাহুলের বিস্ফোরক পার্টনারশিপ। মাত্র ১২৮ বলে ২০৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে যান দুজনে। আর দুজনের ব্যাট থেকেই বেরোয় শতরান।
রোহিত শর্মার ৬৩ বলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শতরানের কীর্তি পিছনে ফেলে কেএল রাহুল বিশ্বকাপে ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম সেঞ্চুরি করে গেলেন রবিবার।
রাহুলের সঙ্গেই রবিবার সেঞ্চুরির দেখা পেলেন শ্রেয়স আইয়ার। ৯৪ বলে ১২৮ রানের বিধ্বংসী এল তাঁর ব্যাট থেকেও। বিশ্বকাপে এটাই শ্রেয়সের প্রথম শতরান।
কেএল রাহুল শেষ পর্যন্ত ৬৪ বলে ১০১ করে আউট হন। বিশ্বকাপে মোটামুটি পারফর্ম করছিলেন রাহুল। তবে সেমিফাইনালে নামার আগে তাঁর শতরান তাঁকে নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে যাবে। ৯ ম্যাচে তাঁর রান দাঁড়াল ৩৪৭।