Advertisment

ধোনির কান্না মুছে দিল শামির ৭, কোহলির ১১৭! বিশ্বজয়ের মাঠেই এল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার টিকিট

জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে ভারত ৩৯৭ রান তুলে দিয়েছিল স্কোরবোর্ডে

author-image
Subhasish Hazra
New Update
kohli-shami

ফাইনালে ভারত (টুইটার)

ভারত: ৩৯৭/৪

নিউজিল্যান্ড: ৩২৭/১০

Advertisment

সেই ওয়াংখেড়ে। সেই বিশ্বকাপ। ১২ বছর আগে ওয়াংখেড়ের এক রাত অমরত্ব দিয়ে গিয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। বুধবারের রাত আরও একটা স্মরণীয় মুহূর্তের জন্ম দিয়ে গেল। বিরাট কোহলির শ্রেষ্ঠত্বে শিলমোহর দিয়ে গেল সেমিফাইনালের রাত। ৫০তম ওয়ানডে শতরান করে যিনি শচীনের সেঞ্চুরির মুকুট কেড়ে নিলেন। তাঁর-ই সামনে। সেই সঙ্গে এল শ্রেয়স আইয়ারের দুর্ধর্ষ শতরান। জোড়া হাফসেঞ্চুরি এবং মহম্মদ শামির ৭ উইকেট সমেত ভারত সেমিফাইনালের যুদ্ধ জিতে ফাইনালে পোঁছে গেল। ধোনিকে ইতিহাসে তুলে ধরা মাঠ বদলা নিল মাহির স্বপ্নভঙ্গের।

চার বছর আগে ম্যাঞ্চেস্টারের এক যুদ্ধে কিউইরা সেমি থেকে ছিটকে দিয়েছিল ভারতকে। রান আউট হয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছেড়েছিলেন বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক। ধোনির সেই কান্নার জবাব মিলল ওয়াংখেড়েতে। তাঁর-ই স্বপ্নের মাঠে। প্রতিশোধের লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানে হারিয়ে ভারত তৃতীয়বার বিশ্বজয়ী হওয়া থেকে আর মাত্র একটা ম্যাচ দূরে রইল।

স্কোরবোর্ডে পুঁজি ছিল ৩৯৭ রানের। সেই রান ডিফেন্ড করতে গিয়েই যে কালঘাম ছুটে যাবে ভারতের কে ভেবেছিল! ওয়াংখেড়েতে কয়েকদিন আগেই ওয়ানডের ইতিহাসে সর্বসেরা রান চেজ দেখেছিল। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অলৌকিক ইনিংস খেলে মুছে দিয়েছিলেন আফগানদের। পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন রশিদ-মুজিবদের।

সেই ম্যাচের রোমাঞ্চকর স্মৃতিই ফের ঘুরে ফিরে এসেছিল মুম্বইয়ে। আর ম্যাক্সওয়েলের মত অদৃশ্য জেদ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন ড্যারেল মিচেল। যাঁর ব্যাটিং বিক্রমে ৩৯৭ রানের নিরাপদ স্টেশনকেও অনিশ্চিত দেখাল। ভারতের জয়কে সংশয়ের মেঘে ঢেকে দিয়েছিলেন তিনি একাই। মহম্মদ শামির শিকার হয়ে ফেরার আগে যিনি ১১৯ বলে ১৩৪ রানের সাইক্লোন ইনিংসে ভারতীয়দের বুকে হৃদকম্প এনে দিয়েছিলেন।

ওয়াংখেড়ের স্লো পিচে রান চেজ করতে নেমে নিউজিল্যান্ডকে ওয়ান চেঞ্জে বল করতে এসে ধসিয়ে দিয়েছিলেন শামি। নিজের পরপর দু-ওভারে কনওয়ে এবং রচিন রবীন্দ্রকে ফিরিয়ে দেন। ৩৯/২ হয়ে যাওয়ার পরও ভারতীয় বোলাররা যে এরকম কাঁপুনি হজম করবে, কে ভেবেছিল! যাবতীয় রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে দিয়েছিল ড্যারেল মিচেল-কেন উইলিয়ামসনের পার্টনারশিপ। দুজনে তৃতীয় উইকেটে ১৮১ রান যোগ করে দিয়ে হঠাৎ করেই কিউইদের অসম্ভব জয়ের সম্ভবনা জাগিয়ে দিয়েছিলেন।

স্লো পিচে আসলে বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না। সেই পিচেই সোনা ফলিয়ে গেলেন সেই শামি। দুই ওপেনারকে ফেরানোর পর শামি জোড়া ব্রেক থ্রু নিয়ে হাজির হলেন ৩৩তম ওভারে। উইলিয়ামসন-মিচেল জুটি যখন ভারতীয় বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে দিচ্ছিলেন সেই সময় শামি একই ওভারে পরপর ফিরিয়ে দেন কিউই ক্যাপ্টেন এবং টম ল্যাথামকে। ক্যাপ্টেন কেনের সহজ ক্যাচ ফেলেছিলেন শামি।

সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেই যেন শামি শিকার করলেন উইলিয়ামসনকে। প্যাডে ফুলার লেন্থে বল করেছিলেন। ফ্লিক করতে গিয়ে সূর্যকুমার যাদবের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন উইলিয়ামসন। টম ল্যাথামকে শামি ফেরান গুড লেন্থের বল ভিতরে ঢুকিয়ে।

হঠাৎ করেই ২২০/৪ হয়ে গিয়ে কিউইরা প্রায় ম্যাচ থেকেই ছিটকে গিয়েছিল। আশার প্রদীপ হিসাবে একমাত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মিচেল। গ্লেন ফিলিপসের সঙ্গে মিচেলের ৭৫ রানের পার্টনারশিপে আবার কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল ভারতকে। পায়ে ক্র্যাম্প নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন কিউই ব্যাটার। সিরাজ রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করে মিচেলকে পা স্ট্রেচ করে খেলাতে বাধ্য করছিলেন।

তবে ফিলিপস-মিচেল জুটিতে বুমরা ভাঙন ধরাতেই কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের জয়। এরপর মিচেল একপ্রান্ত আগলে খেলে গেলেও অন্যপ্রান্তে উইকেট পতন অব্যাহত থাকে। শেষমেশ কিউই ব্যাটিংয়ের প্রতিরোধ থেমে যায় ৩২৭ রানে।

তার আগে টসে জিতে রোহিত ব্যাটিং নেন। উড়ন্ত সূচনা করে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। যথারীতি। ২৯ বলে ৪৭ রানের ঝড় তোলা ইনিংসের পর রোহিত ফিরে যান। রোহিত আউট হওয়ার পর গিয়ার বদলান শুভমান গিল। ৪১ বলে ফিফটি পূরণ করে যান তিনি। নিশ্চিত শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন। তবে মুম্বইয়ের কুখ্যাত ডিহাইড্রেশনের শিকার হন। পায়ে ক্র্যাম্প লাগায় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। ৭৯ রানে ফিরতে হয় তাঁকে।

গিল রিটায়ার্ড হার্ট হলেও রান তোলার গতিতে ভাঁটা পারেনি। শ্রেয়স আইয়ার কিউই বোলারদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ খাড়া করেন। আক্রমণাত্মক ইনিংসে শ্রেয়সও কোহলির সঙ্গে ঝোড়ো পার্টনারশিপ গড়ে যান। কোহলির সঙ্গে তালমিলিয়ে সেঞ্চুরি করে যান তিনিও। শেষদিকে কেএল রাহুল ২০ বলে ৩৯ করে দলকে ৩৯৭ রানের পাহাড়ে চাপিয়ে দেন। গিল পরে ক্রিজে নামেন। ৮০ রানে অপরাজিতও থাকেন।

কোহলির মঞ্চে, ধোনির প্রতিশোধ পূর্ণ হওয়ার মাঠে ইতিহাস গড়লেন মহম্মদ শামিও। নকআউট ম্যাচ। তাও আবার ভারতের শক্ত গাঁট নিউজিল্যান্ড। সেই দলের বিপক্ষেই সাত-সাতটা উইকেট দখল করলেন। নতুন বলে ওয়ান চেঞ্জে এসে বরাবর ভয়ানক তিনি। পুরোনো বলেও সমান ভয়ানক তিনি। কতটা প্রমাণ পেল কিউইরা। ম্যাচে একসময় জাঁকিয়ে বসেছিল নিউজিল্যান্ড। একাধিকবার ব্রেক থ্রু দিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনলেন। ৭ উইকেট নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগার আপাতত তাঁর-ই দখলে। পিছনে ফেললেন স্টুয়ার্ট বিনিকে। ৫৭/৭ ফিগার সমেত শামি আপাতত বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম পঞ্চাশ উইকেটের মালিক। স্টার্ক, মালিঙ্গাকে পিছনে ফেলে এই কীর্তি গড়লেন তিনি। গ্রুপ পর্বের একাধিক ম্যাচ না খেলেও তিনি বিশ্বকাপের সর্বাধিক উইকেট সংগ্রাহক।

সবমিলিয়ে কোহলি-ধোনির মঞ্চে ম্যাচ সেরা তাঁকে ছাড়া আর কাউকে ভাবা সম্ভব ছিল না!

Indian Team Virat Kohli ICC Cricket World Cup Cricket World Cup New Zealand Cricket Team New Zealand Indian Cricket Team
Advertisment