শ্রীলঙ্কা: ৩৪৪/৯
পাকিস্তান: ৩৪৫/৪
৩৪৪ তুলেও হার মানল শ্রীলঙ্কা। হাসারাঙ্গা নেই। তারকা অলরাউন্ডারের অভিজ্ঞতা ভালোই মিস করল লঙ্কান ব্রিগেড। স্কোরবোর্ডে বিশাল রান তুলেও স্রেফ দুর্বল বোলিং, ফিল্ডিংয়ের কারণে পাকিস্তানের কাছে হার মানতে বাধ্য হল শ্রীলঙ্কা। বড় টার্গেটের সামনে পাকিস্তান দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে ফেললেও শেষমেশ বাবর আজমদের হয়ে সেরা পারফরম্যান্স করে গেলেন ওপেনার আসাদ শফিক এবং উইকেটকিপার মহম্মদ রিজওয়ান। শ্রীলঙ্কার জোড়া সেঞ্চুরির বদলা নিয়ে পাকিস্তানের হয়েও জোড়া সেঞ্চুরি ফিরিয়ে দিলেন শফিক, রিজওয়ান। ১০ বল বাকি থাকতে হাতে ৬ উইকেট নিয়ে এল ঐতিহাসিক জয়।
শেষদিকে শফিক আউট হয়ে গেলেও রিজওয়ান মাসল ক্র্যাম্প নিয়ে দলকে জিতিয়ে দিলেন। খোঁড়াতে খোঁড়াতে। রিজওয়ানের সঙ্গে ফিনিশিং টাচ দিলেন ইফতিকার আহমেদ। এর আগে বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে চার শতরানের নজির ছিল না। সেটা তো ঘটল-ই। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবথেকে বেশি রান চেজ করে জয়ের নজিরও গড়ল পাকিস্তান। হায়দারবাদে ইতিহাস গড়া জয় নিয়েই পাকিস্তান ১৪ অক্টোবর মুখোমুখি হবে ভারতের।
তার আগে টসে জিতে লঙ্কান অধিনায়ক দাশুন শানাকা ব্যাটিং নিয়েছিলেন। পাকিস্তান শুরুটা খারাপ করেনি। হাসান আলির অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল চেজ করে রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নিয়েছিলেন কুশল পেরেরা। তবে এরপরেই ম্যাচের গতি বদলে দেয় ওপেনার পাথুম নিশঙ্কা-কুশল মেন্ডিসের পার্টনারশিপ। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটাতে থাকেন দুজনে। সবথেকে অসহায় লাগে শাহিন আফ্রিদিকে। গোটা ম্যাচেই নিজের ছন্দে ছিলেন না তিনি। পাকিস্তান দুরবস্থা বাড়িয়ে ইমাম-উল-উক ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ ফেলে দেন।
কুশল মেন্ডিস-নিশঙ্কা দুজনে দ্বিতীয় উইকেটে ১০২ রান যোগ করে যান। এই জুটিতে ভাঙন ধরান শাদাব খান। ৫১ রানে ফিরতে হয় পাথুম নিশঙ্কাকে। তিনি ফিরলেও পাক বোলারদের ওপর অত্যাচার জারি রাখেন মেন্ডিস। ৬৫ বলে সেঞ্চুরি সম্পূর্ণ করে যান তিনি। শেষমেশ ৭৭ বলে ১২২ করে ফিরতে হয় তাঁকে। হাসান আলি টানা দু-উইকেট নিলেও পাকিস্তান সহজে রেহাই পাননি। সমরাবিক্রমা একপ্রান্ত ধরে রেখে সেঞ্চুরি করে যান তিনি। শেষ ১০ ওভারে নিয়মিত ব্যবধানে পাকিস্তান উইকেট দখল করলেও শ্রীলঙ্কা সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি রান তুলে দেয়।
পাকিস্তানের হয়ে সফলতম বোলার হাসান আলি। চার উইকেট শিকার করেন তিনি। হ্যারিস রউফ শেষ ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে যান তিনি।
বিশাল রান চেজ করতে নেমে দুঃস্বপ্নের সূচনা করেছিল পাকিস্তান। পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই ওপেনার ইমাম-উল হক এবং বাবর আজমকে হারিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তান। জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা হজম করে পাকিস্তানকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনে দেয় ওপেনার আসাদ শফিক এবং মহম্মদ রিজওয়ানের দুরন্ত পার্টনারশিপ। অফ ফর্মে থাকা ফখর জামানকে বসিয়ে আসাদ শফিককে নিয়েছিল পাকিস্তান। আর নেমেই পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপের অভিষেক স্বপ্নের করে গেলেন শফিক। দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি তো করলেন-ই সেই সঙ্গে রিজওয়ানের সঙ্গে ২০০+ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে দিলেন।
তাঁর দুরন্ত ইনিংসে শেষমেশ ইতি পড়ে পয়েন্টে পরিবর্ত ফিল্ডার দুশান হেমন্তের দুর্ধর্ষ ক্যাচে। এরপরেও ম্যাচে ফিরে আসার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে একাধিক ক্যাচ মিস, অজস্র ওয়াইড, দুর্বল ফিল্ডিংয়ের ফায়দা নিয়ে দলকে জিতিয়ে দেন মহম্মদ রিজওয়ান।
কয়েক সপ্তাহ আগেই এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করেছিল শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপ ছিল সেই অভিশাপ মেটানোর। সেই প্রতিশোধ নেওয়ার মঞ্চই যে শেষমেশ ইতিহাস গড়ার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াবে, কে ভেবেছিল!