নেদারল্যান্ডস: ২৪৫/৮
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০৭/১০
৪৮ ঘন্টাও কাটেনি। চলতি বিশ্বকাপ প্ৰথম অঘটনের সাক্ষী থেকেছিল। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে অসহায়ভাবে হারিয়েছিল আফগানিস্তান। সেই অঘটনের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ফের একবার। নেদারল্যান্ডস ধর্মশালায় হেভিওয়েট নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে দিয়ে টুর্নামেন্টে চরম উত্তেজনা হাজির করল। নেদারল্যান্ডসের ২৪৬ রানের টার্গেট চেজ করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা থেমে গেল মাত্র ২০৭ রানে। ৩৮ রানের জয়ে ইতিহাস গড়ে ক্রিকেটে কমলা বিপ্লবের জন্ম দিয়ে গেল মঙ্গলবার। হারিয়ে দিল এমন এক দলকে যাঁদের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম ফেভারিট ধরা হচ্ছে।
প্ৰথম দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কাকে যেভাবে দুরমুশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, তাতে ভাবা হচ্ছিল প্রোটিয়াজরা এবার সেমিফাইনাল তো বটেই কাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার। তবে তৃতীয় ম্যাচেই পা হড়কাল ক্রিকেট জগতের সবথেকে বড় চোকার্সদের।
বৃষ্টি বিঘ্নিত ধর্মশালায় নেদারল্যান্ডসকে প্ৰথমে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল সাউথ আফ্রিকা। দুই ইনিংসে ম্যাচ কমে দাঁড়িয়েছিল ৪৩ ওভারের। নেদারল্যান্ডস একসময় দক্ষিণ আফ্রিকান পেস ব্যাটারির সামনে ১৪৭/৭ হয়ে গিয়েছিল। ৩৪ ওভারে স্কোরবোর্ডে নেদারল্যান্ডস কার্যত আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছিল শুরুতেই। কাগিসো রাবাদা, জোড়া উইকেট নিয়ে, মার্কো জ্যানসেন এবং জেরাল্ড কোয়েটজে একটি করে উইকেট নিয়ে নেদারল্যান্ডসকে ধসিয়ে দিয়েছিল। তবে এই ম্যাচ যে এরকম সমাপ্তির হবে, কে ভেবেছিল!
প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ডাচরা সাইব্রান্ড এঙ্গেলব্রেখট এবং তেজা নিদামানুরুর ৩২ রানের জুটি গড়ে কিছুটা রক্ষা করেন। এরপরেই কার্যত ওয়ান ম্যান শো চলল এডওয়ার্ডস-এর ব্যাটে। ব্যাটিং ভরাডুবির সামনে অন্যরকম ভেবেছিলেন ডাচ ক্যাপ্টেন স্কট এডওয়ার্ডস। অষ্টম উইকেটে পাল্টা লড়াই চালিয়ে এডওয়ার্ডস ৩৭ বলে ৬৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে যান প্রাক্তন প্রোটিয়াজ তারকা রুলফ ভ্যান ডার মারউইকে সঙ্গে নিয়ে।
১০ নম্বরে নেমে স্কোরবোর্ড ঝড় তুলে দেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত তারকা আরিয়ান দত্ত। তিন ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে ২৪৫/৮-এ পৌঁছে দেন তিনি। স্কট এডওয়ার্ডস ৬৯ বলে ৭৮ করে অপরাজিত থাকেন।
১৯৮৩-র সেই অলৌকিক বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন কপিল দেব জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধেই ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক সেই ১৭৫ রানের ইনিংস খেলে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবারের ধর্মশালা যেন অতীতের সেই স্মৃতি তুলে আনল। এদিনের ৭৮ রানের ইনিংস কপিলের সেই অবিশ্বাস্য ১৭৫-এর তুলনায় কোনওভাবেই কম নয়। পরিস্থিতি বিবেচ্য হলে।
দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুটা খারাপ করেনি। কুইন্টন ডিকক এবং তেম্বা বাভুমা ওপেনিং জুটি যথাযথ করেছিলেন। তবে ব্যাটিং অর্ডারে শীঘ্রপতন ঘটে যায় হঠাৎ-ই। ৮ থেকে ১২ ওভারের মধ্যে ৩৬/০ থেকে হঠাৎ-ই ৪৪/৪ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপরে হেনরিখ ক্লাসেন এবং ডেভিড মিলার ধরে নিয়েছিলেন খেলা। তবে দলগত ৮৯ রানের মাথায় আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ক্লাসেন (২৮)। এরপরে সময় যত গড়িয়েছে ততই নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
৪৩ করে মিলার আউট হওয়ার পরই কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায় ডাচদের দুর্ধর্ষ জয়। জেরাল্ড কোয়েটজে (২২) এবং কেশব মহারাজ (৪০) লোয়ার অর্ডারে লড়াই চালালেও অঘটন এড়াতে পারেননি।
নেদারল্যান্ডসের হয়ে ভ্যান বিক, মিকারেন, ভ্যান ডার মারউই, বাস ডে লিড সকলেই দুটো করে উইকেট দখল করে যান।