নেদারল্যান্ডস: ২২৯/১০
বাংলাদেশ: ১৪২/১০
অনেক আশা করে বিশ্বকাপে বাঘ শিকার করতে এসেছিল নেদারল্যান্ডস। তবে ডাচ বাহিনীকে হতাশই করল কলকাতা। টাইগার বাহিনী ইডেন গার্ডেন্সে কোনওরকম গর্জনই করতে পারল না। নেদারল্যান্ডস টুঁটি চিপে ধরে কার্যত হারাল পদ্মাপাড়ের ক্রিকেটারদের। তারপরেই ফের একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠে গেল বাংলাদেশকে বিশ্বক্রিকেটের টাইগার বলা যায়! অজস্র মিম, ভিডিওর বন্যা বইয়ে দিল কলকাতা ম্যাচ।
আড়াই দশক বিশ্ব ক্রিকেটে অতিক্রান্ত। তবে এখনও সাবালক নয় বাংলাদেশ। বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। তবে এখন বিক্ষিপ্তভাবে বড় দল হারানো বাদ দিয়ে ট্রফির ভাঁড়ার সেই শূন্যই।
নিজেদের সামর্থ্যের সঙ্গে স্বপ্নের যে আসমান জমিন ফারাক- এই বিশ্বকাপ প্রতি মুহূর্তে শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট অভিযান শুরু করেছিল সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ। তারপর যত দিন গিয়েছে, ততই কাদায় পুঁতে গিয়েছে টাইগারদের বিশ্বকাপ অভিযান। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যে স্রেফ পাত্তা পাবে না বাংলাদেশ, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। ভাবা হয়েছিল শক্তি-সামর্থ্যের বিচারে অন্তত কাছাকাছি থাকা আফগানিস্তান এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের পাশাপাশি দু একটা অঘটন ঘটিয়েও ফেলতে পারে বাংলাদেশ। কোথায় কী!
ক্রিকেট মহলের ব্যাখ্যা, আফগানিস্তান বর্তমানে যে ছন্দে ক্রিকেট খেলছে তাতে প্ৰথম ম্যাচে চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের জয়ই বরং অঘটন বিবেচনা করতে হবে। নেদারল্যান্ডস শনিবার যে ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশকে বধ করল, তা কোনওভাবেই অঘটনের ব্র্যাকেটে পড়ে না। বরং যে স্মার্ট ক্রিকেটে উড়ন্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল কমলা ক্রিকেটাররা, সেই ম্যাচেরই যেন রিপিট টেলিকাস্ট দেখল কলকাতা।
ডিফেন্ড করার জন্য নেদারল্যান্ডসের পুঁজি বেশি ছিল না। মাত্র ২২৯ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ডাচ দল। অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস ৮৯ বলে ৬৮ করেন। টপ অর্ডারের ব্যাটার ওয়েসলি বারেসি ৪১ করেন। শেষ দিকে সাইব্রান্ড এঙ্গেলব্রেখট ৬১ বলে ৩৫ কর দলকে ২২৯ রানে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
এই রান ডিফেন্ড করতে নেমেই সপ্রতিভ ক্রিকেট উপহার দিয়ে গেল নেদারল্যান্ডস। লিটন-তানজিদের ওপেনিং জুটি ডাচ বোলাররা ভাঙলেন শর্ট বলের কৌশলে ফেলে। মন্থর সূচনা করার পর লিটন অহেতুকভাবে আরিয়ান দত্তকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে।উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন। ক্রমাগত ডট বল খেলে নিজেদের ওপর চাপ নিজেরাই বাড়িয়েছিলেন দুই বাংলাদেশি ওপেনার। শেষে চাপ হালকা করতে গিয়েই আউট হয়ে যান লিটন।
লোগান ভ্যান উইক তানজিদের জন্য শর্ট বলের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। সেই শর্ট বলেই লুজ পুল শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান তিনি। প্ৰথম ৬ ওভারেই ১৯/২ হয়ে যাওয়ার পর যে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি তৈরি হল তা আর কাটিয়ে উঠতে পারল না বাংলাদেশ।
মিরাজ-শান্ত ইনিংসকে সঠিক রাস্তায় ফেরানোর জন্য চাপ বাড়িয়ে ফেললেন একের পর এক ডট বল খেলে। টানা ২০ ডট বল খেলেন মিরাজ-শান্ত জুটি। পরিসংখ্যান বলছে, পাওয়ার প্লে-তে সবমিলিয়ে বাংলাদেশি টপ অর্ডার ৪৫ ডট বল খেলে গেল।
পরে চাপ হালকা করে শান্ত-র বাউন্ডারি, আরিয়ান দত্তের এক ওভারে মিরাজ জোড়া বাউন্ডারি, একটা ওভার বাউন্ডারি আসে। ঠিক যখন মনে হচ্ছিল মিরাজ-শান্তর জুটিই জয়ের রাস্তায় ফেরাবে বাংলাদেশকে। তখনই পল ভ্যান মিকারেনের ওয়াইড ইয়র্কার স্লিপে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন শান্ত।
ক্যাপ্টেন সাকিব সেই শর্ট লেংথের বলের জাজমেন্ট করতে ব্যর্থ হয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন কিছুক্ষণ পরেই। বাংলাদেশি ইনিংসের হয়ে একমাত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মেহেদি মিরাজ। তবে বাস ডে লিডকে ড্রাইভ করতে গিয়ে আউট হয়ে যান মিরাজ। সাত বলের ব্যবধানে জোড়া উইকেট পতনে বাংলাদেশ সেই যে ফ্রিজারে ঢুকে পড়ল, তা আর বেরিয়ে আসতে পারেনি টাইগাররা।
বাংলাদেশি ইনিংসের পুরোটাই নির্ভর করেছিল দলের দুই অভিজ্ঞতম তারকা মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মুশফিকুর রহিমের ইনিংসের মেয়াদ দাঁড়ায় মাত্র ৫ বলের। মিকারেনের ইনসুইংগার পড়তে না পেরে স্ট্যাম্পে বল টেনে এনে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ৩৩তম ওভারে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ। চলতি বিশ্বকাপে একাধিকবার দেশের লজ্জা বাঁচিয়েছেন তিনি। হারের ব্যবধান কমিয়ে এনেছেন একক প্রচেষ্টায়। শনিবার মাহমুদুল্লাহের ৪১ বলে ২০ রানের কষ্টার্জিত ইনিংস খতম হয় হতাশ হয়ে বড় শট খেলার তাড়নায়। মেহেদি হাসানকে নিয়ে ৩৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে টানছিলেন তিনি। তবে মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে দুজনেই সাজঘরে ফেরেন। ওখানেই বাংলাদেশের জয়ের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটে।