হায়দরাবাদে জনসমর্থনের ঢেউয়ে ভেসে গিয়েছিল পাকিস্তানি দল। বিমানবন্দর থেকে স্টেডিয়াম, হোটেল- কাতারে কাতারে সমর্থক হাজির হয়েছিলেন পাক তারকাদের একঝলক দেখার জন্য। বিশ্বকাপের শুরুতে টানা দুই সপ্তাহ নিজামের শহরে ছিলেন বাবর আজমরা। জোড়া প্রস্তুতি ম্যাচ সহ ওয়ার্ল্ড কাপের প্ৰথম দুই ম্যাচেও রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে খেলেছিলেন পাক তারকারা।
প্রবল জনসমর্থনের ঢেউয়ে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল পাক দল। বিরিয়ানি, আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলেন তারকা ক্রিকেটাররা। এরপর চেন্নাই, আহমেদাবাদ, ধর্মশালা সহ একাধিক ভেন্যু ঘুরেছে শাহিন-হ্যারিসরা। তবে হায়দরাবাদের সদ্য বিশ্বকাপের স্মৃতি যেন ফিরিয়ে দিল শহর কলকাতাই। ইডেনে বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্যালারিতে দাপট বেশি থাকল পাকিস্তানেরই।
বাংলাদেশের সঙ্গে কলকাতার নাড়ির টান। একই সংস্কৃতি, ভাষা বয়ে চলেছে দুই বাংলায়। তবে শহর কলকাতা মঙ্গলবারের সমর্থন বরাদ্দ রেখেছিল পাকিস্তানের জন্যই। মেটিয়াব্রুজ, পার্ক সার্কাস, তোপসিয়া, রাজাবাজার থেকে শয়ে শয়ে সমর্থক ভিড় করেছিলেন ইডেন গার্ডেন্সে। বাংলাদেশি সমর্থকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাক্ষণই তুমুল চিৎকার করে গেলেন পাক সমর্থকরা।
এমনিতে কলকাতার সঙ্গে পাকিস্তানের বহু স্মৃতি জড়িয়ে। ১৯৯৯-এ শোয়েব আখতারের সেই স্পেল। রাহুল দ্রাবিড়, শচীন তেন্ডুলকারকে নাড়িয়ে দেওয়া সেই স্পেলের মাধ্যমেই বিশ্ব ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ শোয়েব আখতারের। তারপর যতবার পাক দল কলকাতায় এসেছে উষ্ণ অভ্যর্থনায় মুড়ে নিয়েছে শহর।
২০১৬-য় টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপে খেলতে এসে কলকাতার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন সফরকারী পাক দলের বহু তারকা। মহামেডান মাঠে জুম্মার নামাজ আদায় করেছিলেন সরফরাজ আহ্মেদজ ইমাদ ওয়াসিমরা। তারপর কেটে গিয়েছে সাত বছর। বহু পালা বদলের সাক্ষী থেকেছে পাক ক্রিকেট। সরফরাজকে সরিয়ে পাক দলের নেতা হিসাবে আবির্ভাব ঘটেছে বাবর আজমের। তবু পাকিস্তানকে আপন করে নিতে অসুবিধা হয়নি কলকাতার।
কলকাতার বিরিয়ানির বহু নাম শুনেছেন। তাই পাকিস্তান দল হোটেলের খাবার বন্ধ রেখে সরাসরি জোম্যাটোর মাধ্যমে বিরিয়ানি অর্ডার করেছিলেন। এমনিতে চলতি ওয়ার্ল্ড কাপে ডায়েটের কোনও বাছবিচার করছেন না পাক তারকারা। কলকাতায় এসেও সেই ট্র্যাডিশন বজায় রেখেছে পাকিস্তান। পার্ক সার্কাসের বিখ্যাত 'জাম জাম' রেস্তোরাঁর বিরিয়ানির সঙ্গেই পাক তারকারা অর্ডার করেছিলেন চিকেন চাপ, ফিরনি, কাবাব এবং শাহি টুকদা। 'জাম জাম' রেস্তোরাঁর মালিক শাদমান ফৈজ পরে সংবাদসংস্থাকে জানান, "অললাইন ফুড ডেলিভারি এপের মাধ্যমে অর্ডার এসেছিল। বিরিয়ানি, কাবাব এবং চাপ অর্ডার করা হয়েছিল। রবিবার সন্ধে সাতটার পর অর্ডার করা হয়। প্ৰথমে আমরা জানতাম না এই অর্ডার পাকিস্তানি ক্রিকেট দলের তরফে করা হয়েছে। পরে অবশ্য জানতে পারি। আশা করব ওঁদের বিরিয়ানি ভালো লেগেছে। যে কোনও দেশের লোকেরা এখানকার বিরিয়ানি ট্রাই করতে পারেন। কলকাতার নিজস্ব ঘরানার বিরিয়ানি রয়েছে। যা গোটা বিশ্বেই জনপ্রিয়।" মন ভরে খেয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন ফখর জামান, মহম্মদ রিজওয়ানরা।
কলকাতায় এসে পাক তারকারা যেন নিজেদের ঘরেই পা রেখেছেন। পুজোর আবহে কলকাতায় পা রেখে বিমানবন্দর তো বটেই হোটেলেও ব্যাপক উৎসাহের স্রোত টের পেয়েছেন। ইডেনে অনুশীলন করতে নেমেই হাজারে হাজারে সমর্থকদের ভিড় প্রত্যক্ষ করেছেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা।
আর বাংলাদেশ ম্যাচে কার্যত খুঁজেই পাওয়া যায়নি টাইগার সমর্থকদের। সারাক্ষণই ডিজে-র তরফে বাজানো হল দিল দিল পাকিস্তান। স্টেডিয়ামে জুড়ে ধ্বনিত হল 'পাকিস্তান জিতেগা' স্লোগান। বাবরের প্রতিকৃত আঁকা হল স্টেডিয়ামে বসেই। যাতে সই করলেন পাক ক্যাপ্টেন স্বয়ং। তিনি নিজেও আপ্লুত এত ভালবাসায়। বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনালে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলার পরেই তৃপ্ত বাবর তাই মঙ্গলবার বলে দিলেন, "আমাদের সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ সমর্থকদের।"
কলকাতা আপাতত পাকিস্তানের-ই, বাংলাদেশের নয়!