বিশ্বকাপের শেষবেলায় কোনও টুইস্ট না ঘটলে সেমিফাইনাল খেলছে নিউজিল্যান্ড। আফগানিস্তান, পাকিস্তান বৃহস্পতিবারের পর একপ্রকার ছিটকেই গেল বলা চলে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড়সড় ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার পরেই সেমিফাইনালের দরজা কার্যত খুলে ফেলল কিউইরা। কোনও অঘটন না ঘটলে ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের রিপিট ঘটিয়ে শেষ চারে ভারতের মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় সেমিফাইনাল দেখবে দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথ।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়ের পর ১০ পয়েন্টে গ্রুপ পর্বের অভিযান ফিনিশ করল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান শেষ ম্যাচ জিতে পয়েন্ট সংখ্যায় নিউজিল্যান্ডকে ছোঁয়ার সামর্থ্য রাখে। তবে নেট রানরেটে কিউইরা কার্যত ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল।
পয়েন্ট টেবিল অনুযায়ী, পাকিস্তানের নেট রানরেট ০.০৩৬। অন্যদিকে, আফগানিস্তান দাঁড়িয়ে -০.৩৩৮ নেট রানরেট সমেত। আফগানিস্তান যদি টুর্নামেন্টের অন্যতম ধারাবাহিক দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ ম্যাচে হারিয়েও দেয়, তা অঘটন হিসাবে বিবেচ্য হবে, শক্তি-সামর্থ্যের প্রেক্ষিতে। অফ ফর্মের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয় মোটেও সহজ হবে না। আগের ম্যাচেই নেদারল্যান্ডসকে উড়িয়ে দিয়ে জয় পেয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ম্যাচ জয়ের তাগিদ নিয়েই মাঠে নামবেন বেন স্টোকসরা। কারণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন না ইংরেজরা।
বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্যে পৌঁছল ২৩.২ ওভারে। লঙ্কানদের ১৭২ রানের টার্গেট চেজ করে জয় এল হাতে পাঁচ উইকেট নিয়ে। ওপেনিং পার্টনারশিপে ডেভন কনওয়ে-রচিন রবীন্দ্র ৮৬ রানের জুড়ি গড়ার পরেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় কিউইদের। মাইকেল আথারটন কমেন্ট্রি করার সময় বলেই দিলেন, বিশ্বকাপের চতুর্থ সেমিফাইনালিস্ট দল হিসেবে নিউজিল্যান্ড-ই খেলতে চলেছে।
গ্রুপ পর্বে পঞ্চম জয়ের পর নিউজিল্যান্ডের নেট রানরেট +০.৩৯৮ থেকে এই মুহূর্তে বেড়ে দাঁড়িয়েছে +০.৭৪৩। যা বাস্তব অঙ্কের হিসাবে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের পক্ষে ছোঁয়া কার্যত অসম্ভব। এই সমীকরণ মেনে পাকিস্তানকে জয় পেতে হলে প্ৰথমে ব্যাট করে ৩০০ করলে ইংল্যান্ডকে অলআউট করতে হবে ১৩ রানে। পাকিস্তান যদি প্ৰথমে বোলিং করে তাহলে ইংল্যান্ডকে ৫০-এর কমে অলআউট করতে হবে। তারপর সেই রান চেজ করতে হবে ২.৩ ওভারের মধ্যে। আফগানিস্তানের সেমিতে ওঠার সম্ভবনাও একই সঙ্গে সলিল সমাধিতে চলে গেল।
যেভাবে এল নিউজিল্যান্ডের জয়:
পাকিস্তান ম্যাচে বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিউজিল্যান্ডের সামনে। বৃহস্পতিবারও বেঙ্গালুরুর আকাশ জল ঢালতে উদ্যোগী হয়েছিল। কোনওভাবে বৃষ্টির জন্য কিউইরা পয়েন্ট হারালেই পোয়াবারো হত পাকিস্তানের। তবে এদিন আর হতাশ হতে হয়নি ব্ল্যাক ক্যাপস বাহিনীকে। ম্যাচ শুরুর ঠিক আগেই বৃষ্টির থেমে যায়।
ডার্ক ওয়ার্থ লুইসের কথা মাথায় রেখে নিউজিল্যান্ড টসে জিতে প্ৰথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রীলঙ্কা আরও একটা হতাশাজনক পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে গেল।তাঁদের বতর্মান ফর্মের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। ম্যাচের শুরু থেকেই লঙ্কানদের স্ট্র্যাটেজি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা ম্যাচ দীর্ঘায়িত করার দিকে ঝুঁকেছিল। তবে ব্যাটাররা ক্রিজে টিকতে পারলে তো! পাওয়ার প্লেতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা।
ওপেনার কুশল পেরেরা (৫১) এবং নয় নম্বরে নামা মহেশ থিকসানার (৩৮ নট আউট) ব্যাটে ভর করে শ্রীলঙ্কা কোনওরকমে স্কোরবোর্ডে ১৭১ খাড়া করে। আর নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্যই ছিল যত দ্রুত সম্ভব ম্যাচ ফিনিশ করে রানরেটে বাকিদের থেকে অনেক এগিয়ে যাওয়া। দুই ওপেনার রচিন রবীন্দ্র এবং ডেভন কনওয়ে ঝোড়ো সূচনাতেই তা নিশ্চিত করে যান। দুজনে ওপেনিং জুটিতে ৮৬ রান যোগ করে যান। ১৩তম ওভারে আউট হন কনওয়ে। এক ওভার পরেই ফেরেন রবীন্দ্র। তবে বাকি কিউই ব্যাটসম্যানরা রান তোলার গতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। ম্যাচ ফিনিশ হয় ২৪তম ওভারে।
এমনিতে পেস আক্রমণ কিউইদের শক্তির জায়গা। তবে বিশ্বকাপে পেস আক্রমণ-ই হয়ে দাঁড়িয়েছে 'এচিলিস হিল'। নতুন বলে চলতি বিশ্বকাপে একদমই ফর্মে নেই ট্রেন্ট বোল্ট। ম্যাট হেনরি টুর্নামেন্টের মোক্ষম লগ্নে চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন। লকি ফার্গুসনও বেশ কয়েকটি ম্যাচে চোটের কারণে খেলতে পারেননি। সেই কারণে নতুন বলে কিউইরা প্রত্যাশা মত ফর্ম দেখাতে পারছেন না। সেমিতে ভারতের বিপক্ষে এই দুর্বলতা কি বজায় রাখবেন ব্ল্যাক ক্যাপসরা, ওয়াংখেড়েই জবাব দিয়ে দেবে।