বিশ্বকাপ যেন পাকিস্তানের দুঃস্বপ্নের অভিযান হয়ে থাকছে। মাঠ এবং মাঠের বাইরে একাধিক বিতর্ক ধাওয়া করছে ১৯৯২-এর বিশ্বজয়ীদের। নেদারল্যান্ডস, শ্রীলঙ্কাএ বিরুদ্ধে টানা দুই জয়ে যেখানে পাকিস্তান সমর্থকদের ভরসা জুগিয়েছিল, তা এখন অস্তমিত। টানা চার হারে সেমিফাইনালের আগেই বিদায়ের মুখে পাক দল।
বিপর্যয়ের শুরুটা হয়েছিল ভারত ম্যাচ থেকে। তারপর অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান এবং সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হার হজম করার পর পাকিস্তান আপাতত টুর্নামেন্টের আগাম বিদায়ের টিকিট কেটে ফেলেছে। খাতায় কলমে এখনও পাক দলের সেমিতে যাওয়ার আশা বেঁচে রয়েছে।
তবে সেক্ষেত্রে শেষ তিন ম্যাচে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টানা জিততে হবে। সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কা এবং অস্ট্রেলিয়াকেও বাকি সমস্ত ম্যাচে হারতে হবে। এই দুই দলই সেমিফাইনালের লড়াইয়ে রয়েছে। ভারত, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা কার্যত শেষ চারের জায়গা পাকা করে ফেলেছে।
ঘটনা হল, এমন বিপর্যয়ের মঞ্চেই বড়সড় তথ্য এবার ফাঁস হয়ে গেল। করলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন তারকা রশিদ লতিফ। বলে দিলেন, পাঁচ মাসের বেতনই পাননি পাক দলের ক্রিকেটাররা। পাক ড্রেসিংরুমের অবস্থা মোটেই ভালো নেই। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে মহম্মদ নওয়াজ লুজ ডেলিভারিতে কেশব মহারাজকে কার্যত বাউন্ডারি উপহার দেওয়ার পরেই যেভাবে ক্যাপ্টেন বাবর আজম পাক স্পিনারের উদ্দেশ্যে বিশ্ৰী অঙ্গভঙ্গি করলেন, তাতেই স্পষ্ট পাক তারকাদের মধ্যে ফাটল ধরেছে। এবং তা বিশ্রীভাবেই।
একাধিক পাক মিডিয়ায় বলা হয়েছে, বিশ্বকাপ চলাকালীন ক্রিকেটাররা মোটেই পাক বোর্ডের তরফে পর্যাপ্ত সাহায্য পাননি। দলীয় অন্তর্কলহ ইস্যুতে শেষমেষ পাক বোর্ড বিবৃতি জারি করে পরিস্থিতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা কাজে আসেনি।
এই ইস্যুতেই এবার ইন্ধন জোগাল রশিদ লতিফের বক্তব্য। এমনিতেই বিশ্বকাপের পর বাবর আজমের নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়া কার্যত পাকা। এমনটাই বলা হচ্ছে। এমন আবহে রশিদ লতিফ জানিয়ে দিলেন, গত পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে ক্রিকেটারদের। এমনকি বাবর আজম টুর্নামেন্ট চলাকালীন পিসিবি চেয়ারম্যান জাকা আশরাফকে ফোন, টেক্সট করলেও তিনি রিপ্লাই দেননি।
পাকিস্তানি টিভি চ্যানেল পিটিভিতে লতিফ বলেছেন, "পাক মিডিয়ায় বহু জিনিস দেখানো হচ্ছে। অনেক কিছুই হয়ত ভুয়া খবর। আমি সত্যিটা বলছি। যেটা অনেকদিন চাপা রয়েছে। বাবর আজম গত কয়েকদিন ধরেই পিসিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। তবে উনি কোনও প্রত্যুত্তর দিচ্ছেন না। সালমান নাসের (পিসিবি সিইও), উসামা ওয়ালহাকেও (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ডিরেক্টর) মেসেজ করেছিল বাবর। পিসিবির তরফে নাকি বলা হয়েছে, বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের যে কেন্দ্রীয় চুক্তি রয়েছে তা পর্যালোচনা করা হবে।" বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই পাক ক্রিকেটারদের সঙ্গে বেতন নিয়ে ঝামেলা চলছিল পিসিবির। সেই জন্যই পাঁচ মাসের বেতন আটকে রয়েছে বাবর-শাহিনদের।
বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের পর পাক দলের একাধিক তারকা সেন্ট্রাল কন্ট্র্যাক্ট থেকে বাদ পড়তে পারেন হতাশাজনক পারফরম্যান্স-এর জন্য। বাবরকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া কার্যত পাকা। সরফরাজ আহমেদকে জাতীয় দলে ফেরানো হতে পারে। সরফরাজের সঙ্গেই নেতৃত্বের দাবিদার শাহিন আফ্রিদি এবং মহম্মদ রিজওয়ান।
বিশ্বকাপের পরে আগামী কয়েক মাসে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের নিয়ে কী কী হবে, সেদিকে নজর রয়েছে ক্রিকেট বিশ্বের।