ম্যাচ তখন ফিনিশ লাইনে। এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের দর্শকরা তখন গুণছেন এক, দুই, তিন- এভাবে। যেন ১৯৮৮ সালের বলিউডি সিনেমা, 'তেজাব'-এর গানের কলি। টিম ইন্ডিয়া রোহিত শর্মার ভাবনা তখন, 'নয় হয়ে গেছে, দশ এবং এগারোর অপেক্ষা'। ঠিক যেমনটি ম্যাচের আগের দিন দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড় দাবি করেছিলেন। নয়টির মধ্যে নয়টিতে জয়ের সঙ্গেই, কোনও একটি বিশ্বকাপে ভারতীয় দল সবচেয়ে বেশি ম্যাচে জয়ী হল। তবে, টিম রোহিতের এখনও অর্ধেক কাজ হয়েছে। বাকি আছে বুধবার ওয়াংখেড়েতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল। দিন তো আর, তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারে না! কিন্তু, তার আগে রবিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুর বাতাসে বাজির গন্ধ মেখে ঘন ধোঁয়াশার সামনে, 'মেন ইন ব্লু' লম্বা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
শ্রেয়স আইয়ার এবং কেএল রাহুলের সেঞ্চুরির পাশাপাশি, দল ৪১০/৪। অথচ, এই দুই ব্যাটসম্যান ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়েই সন্দেহ ছিল। অনেকে বলতে পারেন, এটা সম্ভব হয়েছে নেদারল্যান্ডসের বোলিং ইউনিটের জন্য। কিন্তু, অন্যান্য দলগুলো, তাদের সকলের তো বোলিং ইউনিট খারাপ নয়! তবে, ভারতের বোলিং বিভাগকে ৪৭.৫ ওভার পর্যন্ত খেলেছে ডাচরা। করেছে ২৫০ রান। এটাও কিন্তু ফেলনা নয়।
অনেকেই বলছেন, বোর্ডে লেখা একটি বিশাল রান, যা নেদারল্যান্ডসের নাগালের বাইরে ছিল। ভারতীয় দল তাই তার আক্রমণ ভাগকে পুরোপুরি উজাড় করতে চায়নি। বরং, বুধবারের সেমিফাইনালের জন্য তা সঞ্চয় করছে। আগের আট ম্যাচে ভারতীয় বোলিং বিভাগ যে খেলা দেখিয়েছে, স্বভাবতই রবিবার তা দেখাতে চায়নি। বিরাট কোহলি, শুভমান গিল, সূর্যকুমার যাদব এবং রোহিত শর্মা রাতে তাদের যে ৭.৪ ওভার বল করেছেন, তা যেন একটা বিষয়ই তুলে ধরেছে। সেটা হল, তারা নিউজিল্যান্ডের জন্য দলের ফাস্ট বোলারদের সতেজ রাখতে চান। কারণ, সেমিফাইনালের আগে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময়। তার মধ্যেই কুলদীপ যাদব বাউন্ডারি বাঁচানোর জন্য সাহসী চেষ্টা চালিয়েছেন। সহ-অধিনায়ক কেএল রাহুল এরপরই তাঁকে ধীরগতিতে চলার ইঙ্গিত দেন। যেন তাঁরা চাইছিলেন, নিজেদের শক্তি মেপে নিতে। মানে, ম্যাচটা যতদূর যায় যাক। তারপরও কিন্তু, ফিল্ডিং একেবারে নিম্নমানের হয়নি। সেটাই যেন বুঝিয়ে দিয়ে টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছেন, যে তিনি দলের খেলায় সন্তুষ্ট। রোহিত বলেন, 'এটি একটি দীর্ঘ টুর্নামেন্ট। এই নয়টি ম্যাচেই আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে খুশি। প্রত্যেকেই চেষ্টা করেছে। সবাই দলের দায়িত্ব নিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় খেলা হয়েছে। এটা একটা ভালো চ্যালেঞ্জ।'
রোহিত জানিয়েছন, 'টুর্নামেন্টে টানা চারটি ম্যাচে রান তাড়া করেছি। যেখানে আমাদের প্রথমে ব্যাট করতে হয়েছিল, সেখানেও আমরা ভালো করেছি। স্পিনার এবং পেসাররা নিজেদের কাজ করেছেন। ড্রেসিংরুম প্রাণবন্ত থেকেছে।' রোহিত কিছু বাড়িয়ে বলেননি। ব্যাট হাতে প্রতিটি ম্যাচেই ভারত ছিল নির্দয়। নেদারল্যান্ডস ম্যাচেই যেমন ওপেনার রোহিত এবং গিল প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৯১ রান করে দলের গতি ঠিক করে দেন। সেই পথ ধরেই দল যেন শিকারে নেমে পড়েছিল। যদিও রোহিত, গিল এবং কোহলি- যাঁরা তিন অঙ্ক পূর্ণ করলে দর্শকদের উচ্ছ্বাস আরও বাড়ত, খেলার মাঝপথেই যেন উইকেট ছুড়ে এলেন। শ্রেয়াস আইয়ার এবং কেএল রাহুলের অবশ্য তাতে সুবিধাই হয়েছে। বাকি ওভারগুলো থেকে তাঁরা উপকৃত হয়েছেন।