হৃদয় ভেঙে গিয়েছে ভারতের। বুক নেংড়ানো হার মন খারাপ করে দিয়েছে গোটা দেশের। ভারতের হার যেন হঠাৎ করেই শোকের দাবানল জ্বালিয়ে দিয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। রবিবার ফাইনালে খেলতে নেমেছিল ভারত ফেভারিট তকমা লাগিয়ে। তবে দিনের শেষে সেই হতাশাই সঙ্গী টিম ইন্ডিয়ার।
শেষবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। তারপর দশ-দশটা বছর কেটে গিয়েছে। আইসিসি ট্রফি জয় আর হয়নি। নেতৃত্বে কোহলি থেকে রোহিত শর্মা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে ভারত। তবে একদশকের ট্রফি ব্যর্থতা ঘোচেনি ভারত।
রোহিত শর্মারা টানা দশটা ম্যাচ জিতে খেলতে নেমেছিল ফাইনালে। আর ফাইনালেই ল অফ এভারেজের স্বীকার হয়ে গড়পড়তা ক্রিকেট উপহার দিল ভারত। তাতেই স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা চেপে বসছে। ট্র্যাভিস হেড একার হাতে খতম করে দিয়েছেন ভারতের বিশ্বজয়ী হওয়ার স্বপ্ন। স্লো পিচে ২৪০ রানের চ্যালেঞ্জিং টার্গেট খাড়া করেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি ভারত। প্ৰথম তিন উইকেট হারিয়ে অজিরা ধুঁকছিল।
তবে ট্র্যাভিস হেড-মার্নাস লাবুশেনে জুটি ভারতকে ছিটকে দেয় ম্যাচ থেকে। জয়ের জন্য যখন বাকি মাত্র ২ রান সেই সময়েই আউট হয়ে যান হেড। দুর্ধর্ষ শতরান করে। আর অস্ট্রেলিয়া উইনিং স্ট্রোক নেওয়ার পরেই ভারতীয় ক্রিকেটাররা আবেগে আক্রান্ত হন। বিশ্বকাপ জয়ের একদম শেষ প্রান্তে এসে এভাবে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা আর নিতে পারেননি রোহিত-বিরাটরা।
চলতি বিশ্বকাপই হয়ত ভারতের দুই সুপারস্টারের শেষ বিশ্বকাপ। আর হয়ত বিশ্বকাপের আঙিনায় পা পড়বে না মহম্মদ শামিরও। ভারত হেরে যাওয়ার পরেই চোখে জল নেমে এল রোহিত শর্মার। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা নিয়ে খেলে এসেছেন। রবিবারও কঠিন পিচে ৩১ বলে ৪৭ করে ভারতকে বড় রানের পাটাতন এনে দিয়েছিলেন। যা কাজে লাগাতে পারেনি ব্যর্থ ভারতের মিডল অর্ডার। বিশ্বকাপের এক সংস্করণে সবথেকে বেশি রান করা ক্যাপ্টেনদের তালিকায় তিনি আপাতত শীর্ষে। মাঠ ছেড়ে বেরোনোর সময় কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
বিরাট কোহলিও তীব্রভাবে চেয়েছিলেন এই বিশ্বকাপ তাঁর করে রাখতে। কোনও সংস্করণের ওয়ার্ল্ড কাপে সবথেকে বেশি রান করার নজির গড়েছেন তিনি। ফাইনালে প্যাট কামিন্সের বলে প্লেড অন হওয়ার আগে কোহলি ৫৬ রানের ইনিংসও খেলে যান। তবে ফিনিশিং লাইন পেরোতে পারলেন না তিনি। ২০১১-য় ভারতীয় বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। তবে সেই বিশ্বকাপে স্রেফ একজন পার্শ্বনায়ক হয়েই রয়ে গিয়েছেন তিনি। শচীন-যুবরাজ-ধোনি-গম্ভীর-হরভজনদের আড়ালে। ভাবা হয়েছিল শেষ বিশ্বকাপ জিতলে তাঁকেও হয়ত শচীনের মত কাঁধে চেপে মাঠ প্রদক্ষিণ করে সেন্ড অফ দেবেন দলের জুনিয়ররা। তবে তা স্বপ্নই রয়ে গেল।
ম্যাচ শেষেই হতাশায় আক্রান্ত হতে দেখা গেল তাঁকে। এমনকি চোখের জল ঢাকতে টুপি দিয়ে আড়াল করেন মুখ। সিরাজ আবার কেঁদে ভাসিয়ে দিলেন বোলিং শেষ করার পরেই। বুমরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। তবে তিনি সান্ত্বনা দেওয়ার-ও ঊর্ধে চলে গেলেন।
২০১৯-এর সেমিফাইনালে রান আউট হওয়ার পর ধোনির চোখে জল ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম ট্র্যাজিক অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। সেই ট্র্যাজেডির শরিক হয়ে গেলেন কোহলি-রোহিত দুজনেই। একসঙ্গে তাঁদের হয়ত বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যাবে না আর কোনওদিন।
সম্মিলিত হতাশার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা ম্যাচ শেষে বলে দিলেন, "ফলাফল আমাদের বিপক্ষে গেল। আমরা স্রেফ ভালো খেলতে পারিনি এদিন। স্কোরবোর্ডে আরও ২০-৩০ রান হলে ভালো হত। কোহলি এবং কেএল ভালো পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছিল। আমরাও ২৭০-২৮০'এ ফিনিশ করার কথা ভাবছিলাম। তবে আমরা নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকি। স্কোরবোর্ডে ২৪০ থাকলে উইকেট নিতে হয়। তবে আমাদের ম্যাচ থেকে বের করার জন্য হেড-লাবুশেনকে কৃতিত্ব দিতেই হয়।"
"আমার মনে হয়েছে পরের দিকে ব্যাট করা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে গিয়েছে। তবে এটা কোনও অজুহাত দিচ্ছি না। আমরা আসলে স্কোরবোর্ডে পর্যাপ্ত রান তুলতে পারিনি। দুই অজি ব্যাটারের পার্টনারশিপ আমাদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দিল।"