নাটকীয়ভাবে পাকিস্তান হেরে গিয়েছে শুক্রবার। অল্পের জন্য জয়ের মুখ দেখা হয়নি। চলতি বিশ্বকাপের এখনও পর্যন্ত সেরা থ্রিলারে দক্ষিণ আফ্রিকা নার্ভ শক্ত রেখে টুর্নামেন্ট থেকে পাকিস্তানের বিদায়ের পথ প্রশস্ত করেছে।
ক্লোজ ম্যাচে রান চেজ করার সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্বলতা চিরকালীন। বারেবারেই সহজ অঙ্ক ঘেঁটে ঘ করে শেষে পা পিছলে হারের মুখ দেখতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। প্রোটিয়াজরা এই কারণেই যেন চিরকালীন চোকার্স। গত কয়েক দশকে যা বারবার হয়েছে, সেই পুরোনো রোগে পাকিস্তান ম্যাচেও আক্রান্ত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এই বিশ্বকাপ যেন দক্ষিণ আফ্রিকার পুরোনো মিথ ভাঙার।
চলতি ওয়ার্ল্ড কাপে ছয় ম্যাচে পাঁচটিতেই জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে চারবার-ই শুরুতে ব্যাটিং করে। একটি মাত্র যে হার, সেটাও নেদারল্যান্ডসের মত দুর্বল দলের বিপক্ষে রান চেজ করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও যে পুরোনো রোগের উপসর্গ ফুটে উঠবে তাতে আর আশ্চর্য কী!
টার্গেট মাত্র ২৭১। সেই রান চেজ করতে নেমেই প্রোটিয়াজরা নিয়মিত ব্যবধানে একের পর এক উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য কঠিন করে ফেলেছিল। বড় কোনও পার্টনারশিপ না হলেও অল্প বিস্তর সকলেই রান করে দলের মূল রানে অবদান রাখছিলেন। একমাত্র ক্রিজে টিকে গিয়েছিলেন আইডেন মারক্রাম।
রান রেট নিয়ে কার্যত কোনও হুমকিতেই ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকা। উইকেট বাঁচিয়ে জয় পাওয়াটাই ছিল চ্যালেঞ্জের। নিয়মিত ব্যবধান উইকেট হারালেও কখনই মনে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা এই ম্যাচ হারতে পারে। তবে ৪২ তম ওভার থেকে দ্রুত পট পরিবর্তন হতে থাকে। নব্বইয়ের কোটায় ব্যাট করতে থাকে মারক্রাম ওসামা মিরের বলে ঝুঁকি নিয়ে খেলতে গিয়েই আউট হয়ে যান। মারক্রাম ফেরার পরেও ভাবা যায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা এই ম্যাচ জিততে এরকম কালঘাম বের করতে হবে।
শেষ তিন উইকেট হাতে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার তখন জয়ের জন্য দরকার ছিল ৫৮ বলে ২১ রান। সেই সময়েই ক্রিজে ব্যাট করতে নেমেছিলেন কেশব মহারাজ। ব্যাট হাতে তিনিই ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ফিনিশ করার সেরা বাজি। তিনি ক্রিজে এসেই অন্যপ্রান্তে জোড়া উইকেট পতনের সাক্ষী থাকলেন। প্রথমে শাহিন আফ্রিদি আউট করেন জেরাল্ড কোয়েটজেকে। তারপর অসাধারণ ফলো থ্রু ক্যাচে হ্যারিস রউফ আউট করে দেন লুঙ্গি এনগিদিকেই। ঠিক এই সময়েই আচমকা মনে হতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ত শেষমেশ আর ফিনিশিং টাচ দিতে পারবে না।
তবে অন্যরকম ভেবেছিলেন কেশব মহারাজ। তিন পাক পেসারের ওভারের কোটা ফিনিশ হওয়ার পরই বাবর আক্রমণে আনতে বাধ্য হয়েছিলেন মহম্মদ নওয়াজকে। আর সেই সেই নওয়াজের বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারের যবনিকাপাত করে দেন কেশব মহারাজ।
আইডেন মারক্রাম ৯৩ করলেও মাত্র ১০ রান করেই দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটিংয়ের হিরো হয়ে যান কেশব মহারাজ। তাব্রিজ শামসিকে সঙ্গে নিয়ে যেভাবে তিনি ম্যাচ ফিনিশ করলেন, তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেট বিশ্ব। ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ধর্মে হিন্দু। নিজের ধর্ম নিয়ে বরাবর খুল্লামখুল্লা তিনি। ভারতে এলেই একাধিকবার ধর্মস্থানে যান ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকতে। ব্যাটে 'ওঁ' লেখা মন্ত্র। সেই ব্যাটেই হয়ে উঠল পাকিস্তান বধের অস্ত্র।
আর ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাকিস্তানকে হারানোর মূল নায়কই দুর্ধর্ষ জয়ের পর ইনস্টাগ্রামে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। লিখে দিয়েছেন, "ঈশ্বরের ওপর বরাবর বিশ্বাস রয়েছে আমার। কী অসাধারণ একটা স্পেশ্যাল জয় পেলাম আমরা। সামসি এবং মারক্রামের পারফরম্যান্স উপভোগ করতে পারাটা দুর্দান্ত। জয় শ্রী হনুমান।"
এমনিতেই ভারতের মাঠে নামাজ পড়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন মহম্মদ রিজওয়ান। সেই রিজওয়ানের দলকে হারানোর আনন্দেই কি আদতে জয় শ্রী হনুমান বললেন কেশব মহারাজ?