পাকিস্তান: ২৭১/১০
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২৭৩/৯
ইতিহাস বদলে গেল। বিশ্বক্রিকেটের চিরন্তন চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা। বারবার ক্লোজ ম্যাচে রান চেজ করে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রোটিয়াজরা। এমনকি চলতি বিশ্বকাপেও নেদারল্যান্ডসের কাছে হার হজম করেছিল রান চেজ করে। দশকের পর দশকের সেই ট্র্যাডিশন। তবে এবার ভারতে সেই ট্র্যাডিশন বদলের ইঙ্গিত দিয়ে গেল। রান চেজ করে চরমতম থ্রিলারে দক্ষিণ আফ্রিকা এবার জিতে গেল। হারতে হারতে জিতে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাউন্ডারি ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারিতে আছড়ে পড়তেই বুক চাপড়ে হর্ষধ্বনিতে মেতে উঠলেন কেশব মহারাজ। আর টানা চার হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেল। হাফডজন ম্যাচ খেলে মাত্র চার পয়েন্ট নিয়ে আরও খাদের কিনারায় পৌঁছে গেল পাকিস্তান। খাতায় কলমে এখনও পাকিস্তানের সেমিতে পৌঁছনোর আশা থাকলেও সেটা 'খাতায় কলমেই'। শেষ তিন ম্যাচে নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টানা জয় পেতে হবে। একটা ম্যাচ হারলেই সরকারিভাবে বিদায়ের ঘন্টা বেজে যাবে বাবর বাহিনীর।
স্কোরবোর্ডে পাকিস্তানের পুঁজি ছিল মাত্র ২৭১ রানের। সেই রান ডিফেন্ড করার জন্য যা যা প্রয়োজন সেটাই কার্যত ফর্মুলা মেনেই ঠিকঠাক করেছিলেন বাবর আজমরা। পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই ফর্মে থাকা কুইন্টন ডিকক এবং ক্যাপ্টেন তেম্বা বাভুমাকে ফিরিয়ে দেন হ্যারিস, মহম্মদ ওয়াসিমরা। হাসান আলিকে বাইরে রেখে তরুণ মহম্মদ ওয়াসিমকে খেলানোর ফাটকা পুরোপুরি কাজে লেগে গিয়েছিল। চিপকের পিচে বাউন্স রয়েছে। ওয়াসিম জুনিয়র সেই পেস দুর্ধর্ষভাবে কাজে লাগিয়ে গেলেন। বারবার বাড়তি বাউন্সে সমস্যায় ফেললেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটারদের বাভুমার সঙ্গেই প্রোটিয়াজ ব্যাটিং লাইন আপের এই মুহূর্তে সবথেকে বিধ্বংসী ব্যাটার হেনরিখ ক্ল্যাসেনকেও এই বাউন্সের ফাঁদে ফেলে ফেরত পাঠালেন। ১০ ওভারে মাত্র ৫০ রানের বিনিময়ে তাঁর নামের পাশে ২ উইকেট।
রাসি ভ্যান দার ডুসেন, ক্ল্যাসেন, মিলার, এমনকি মার্কো জ্যানসেনকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পাক বোলাররা একদম গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত মুহূর্তে। কোনও প্রোটিয়াজ জুটিকেই ক্রিজে থিতু হতে দিচ্ছিলেন না পাক বোলাররা। একপ্রান্তে ক্রিজ আগলে স্রেফ পাল্টা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন আইডেন মারক্রাম। ৯৩ বলে ৯১ করে তিনি যখন ফেরেন প্রোটিয়াজদের তখনও জয়ের জন্য দরকার ২১ রানে।
হাতে ছিল ৩ উইকেট। মারক্রাম ফেরার পরের ওভারেই আউট কোয়েটজেও। পর্যাপ্ত ওভার বাকি থাকলেও তখন হাতে উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। হ্যারিস রউফ লুঙ্গি এনগিদিকে কট এন্ড বোল্ড করার পর ভাবা হয়েছিল পাকিস্তান হয়ত থ্রিলারে শেষ হাসি হাসতে চলেছে।
আর চিরাচরিতভাবে ফের একবার রান চেজ করতে নেমে চোকার্স তকমা বহাল রাখবে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে অন্যরকম ভেবেছিলেন কেশব মহারাজ।
তিনি তিন পাক পেসারের পুরো ওভারের কোটা ফুরোনোর অপেক্ষায় ছিলেন। শাহিন, ওয়াসিম এবং হ্যারিসের ওভার শেষ হতেই বাবর বাধ্য হয়ে বল তুলে দিয়েছিলেন মহম্মদ নওয়াজের হাতে। তবে গত বছর টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপে যেভাবে ভারতের বিপক্ষে শেষ ওভারে ১৭ রান ডিফেন্ড করতে পারেননি নওয়াজ, সেভাবেই এদিন ডুবিয়ে গেলেন পাকিস্তানকে।
কেশব মহারাজ লেগে নওয়াজের বল ফ্লিক করে বাউন্ডারি হাঁকাতেই চোখে মুখে অন্ধকার নেমে আসে বাবর-রিজওয়ানদের।
তার আগে টসে জিতে বাবর আজম প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মার্কো জ্যানসেন পাক ব্যাটারদের শুরুতেই আতঙ্ক নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। দুই ওপেনার আব্দুল্লা শফিক এবং ইমাম উল হককে সাত তাড়াতাড়ি আউট করে পাক ব্যাটিংয়ে ধাক্কা দেন। পাক ইনিংসের উদ্ধার কাজ চালায় বাবর-রিজওয়ানের পার্টনারশিপ। তবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই রিজওয়ানকে আউট করে দেন জেরাল্ড কোয়েটজে। ইফতিকার আহমেদও এদিন ভরসা জোগাতে পারেননি।
হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেই ক্যাপ্টেন বাবর নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন তাব্রিজ শামসির বলে স্কুপ করতে গিয়ে। এরপরে পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরায় শাদাব খান এবং সাউদ শাকিলের প্রতি আক্রমণাত্মক জুটি। দুজনে ৭১ বলে ৮৪ রান যোগ করে যান। ৩৬ বলে ৪৩ করে আউট হয়র যান শাদাব। তবে হাফসেঞ্চুরি করেন সাউদ শাকিল। ৫২ বলে ৫২ করে আউট হন তিনি।