হঠাৎ করেই আলোচনায় সাকিব আল হাসান। সম্পূর্ণ অক্রিকেটীয় আচরণে। নিজের গোঁ বজায় রেখে এঞ্জেলো ম্যাথিউসকে আউট করার সুবাদে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এর আগে এরকম আউটের সাক্ষী থাকেনি। তবে সাকিবের বদন্যতায় নতুন আউটের সাক্ষী থাকল ক্রিকেট বিশ্ব।
২৫তম ওভারে সমরাবিক্রমা আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন ম্যাথিউজ। জানা যাচ্ছে, খারাপ হেলমেটের কারণে ব্যাট করতে দ্বিধা করছিলেন ম্যাথিউস। চোট লাগার আশঙ্কা ছিল তাঁর। নতুন করে হেলমেট আনার নির্দেশ দেন। সাজঘর থেকে নতুন হেলমেট আসার সময়ের ফায়দা নেন সাকিব। তিনি আউটের দাবি করে বসেন নিয়ম মেনে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে যা খেলার স্পিরিটের পরিপন্থী।
সেই বিতর্কিত ওভারে বল করছিলেন সাকিব নিজেই। আম্পায়ারের পাশাপাশি ম্যাথিউজ তাঁকেও বোঝানোর চেষ্টা করেন হেলমেটের স্ট্র্যাপ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তাঁর। তাই ক্রিজে নেমেও সময়মত ব্যাট ধরতে পারেননি। আম্পায়ার আউট ঘোষণা করার পর ম্যাথিউসকে দেখা যায় আম্পায়ারের সঙ্গে রীতিমতো তর্ক জুড়ে দিতে। তিনি সাকিব তো বটেই আম্পায়ারের কাছেও নিজের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছিলেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী নিরুপায় আম্পায়ারও।
ম্যাথিউসকে আউট ঘোষণা করার পর চাইলেই আউট প্রত্যাহার করতে পারতেন সাকিব। ম্যাথিউস সাকিবকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আর্জিও জানান। কমেন্টেটর ইয়ান বিশপ জানিয়েছেন, সাকিবকে সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অন-ফিল্ড আম্পায়ার দু-বার অনুরোধ করেন। তবে বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন কর্ণপাত করেননি। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মাঠ ছাড়তে হয় ম্যাথিউজকে।
নিয়ম কী বলছে?
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, কোনও উইকেট পতনের পর নতুন ব্যাটসম্যানকে ৩ মিনিটের মধ্যে ক্রিজে স্ট্যান্স নিতে হবে। আর এই সময়ের মধ্যে ক্রিজে পৌঁছতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিস্ট ব্যাটারকে আউট বলে ঘোষণা করা হবে। তবে এই আউটের জন্য বিপক্ষ দলকে আউটের জন্য আম্পায়ারের কাছে আবেদন করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, এই উইকেট কোনও বোলারের শিকার বলে গণ্য হবে না।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এঞ্জেলো ম্যাথিউস প্ৰথম ব্যাটার যিনি এই আউটের শিকার হলেন। তিনি ক্রিজে নেমেও কোনও বল ফেস না করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন।
যাইহোক, এমন এমন অক্রিকেটীয় কারণের পরেই গোটা ক্রিকেট বিশ্বে নিমেষে খলনায়ক বনে যান সাকিব আল হাসান। গৌতম গম্ভীর ম্যাচে ধারাভাষ্য করছিলেন। তিনি টুইটারে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন। গৌতম গম্ভীর টুইটারে তারকা অলরাউন্ডারকে একহাত নিয়ে লিখে দেন, "দিল্লিতে যা ঘটল তা একদমই জঘন্য।" টিম ইন্ডিয়ার হয়ে খেলা প্রাক্তন তারকা এস বদ্রিনাথও ছেড়ে কথা বলেননি সাকিবকে। তিনি লিখেছেন, "আমি যদি সাকিব হতাম, তাহলে এরকম আউটের জন্য আবেদন করতাম-ই না। আর আমি ম্যাথিউজ হলে একটার জায়গায় একাধিক হেলমেট ভাঙতাম।"
গম্ভীরের পাশাপাশি ওয়াকার ইউনিস, আর্নল্ড রাসেলরাও ধুয়ে দিয়েছেন সাকিবকে। ওয়াকার তো বলেই দেন, "যা দেখলাম, সেটা মোটেই উপভোগ্য নয়। এটা মোটেও ক্রিকেট স্পিরিটের পক্ষে ভালো নয়। আমি একটু পুরোনো ঘরানার। ম্যাথিউসকে আউট করতে অনেক নাটক করতে হল।"
এমনকি মার্ক ওয়া, মাইকেল ভন, ডেল স্টেইনদের মত কিংবদন্তি বর্তমান প্রজন্মের উসমান খোয়াজ পর্যন্ত এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে তুলোধোনা করেছেন। মার্ক ওয়া চাচাছোঁলা ভাষায় টুইটারে লিখেছেন, "ক্রিকেটের স্পিরিটের কথা ভুলে যাও। নিয়ম ভুলে যাও। কীভাবে একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এমন আউটের কথা ভাবতে পারে, আবেদন তো দূর!" ডেল স্টেইন লিখেছেন, "যা হল মোটেই ভালো হল না।" মাইকেল ভনের বক্তব্য, "হেলমেট ইস্যুর জন্য টাইম আউট! এটা সত্যি নতুন ঘটনা।" উসমান খোয়াজা আবার নিয়ম প্রয়োগে গন্ডগোল দেখছেন। বলে দিয়েছেন, "এঞ্জেলো ক্রিজে থাকাকালীন হেলমেটের স্ট্র্যাপ ভেঙে যায়। এটা টাইম আউট কীভাবে? টাইম আউট নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। যদি ও সময়ে ক্রিজে না পৌঁছত, সেটা মানা যায়। এটা হাস্যকর হয়ে দাঁড়াল। ব্যাটসম্যান ক্রিজে আসা আর বল ফেস করার মধ্যে কোনও তফাৎ নেই!"
ক্রিকেট মহলের ব্যাখ্যা, মানকাড আউট তবু তর্কাতীতভাবে গ্রহণযোগ্য। সেক্ষেত্রে নন-স্ট্রাইকার এন্ডের ব্যাটার অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার লক্ষ্যে থাকেন। তবে টাইম আউট সম্পূর্ণ অন্য বিষয়। এখানে পরিস্থিতির শিকার হয়েই ব্যাটসম্যান ক্রিজে স্ট্যান্স নিতে দেরি করেছেন।
এই ঘটনার উত্তাপ এতটাই রয়ে গেল বাকি ম্যাচ জুড়ে যে বাংলাদেশের ব্যাটিং করার সময় বারবার তা ছায়া ফেলল। হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। তবে সাকিবকে ফেরান সেই এঞ্জেলো ম্যাথিউস-ই। আউট করে লঙ্কান অলরাউন্ডার ক্রুদ্ধভাবে সেন্ড অফ-ও দেন বাংলাদেশি অধিনায়ককে।
এর আগে নাগিন ড্যান্স করে বাংলাদেশ অপরিণতভাবে লঙ্কানদের বিপক্ষে জয় সেলিব্রেট করেছিল। তারপর এবার এই টাইম-আউটের বিতর্ক। দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক যা তলানিতে ঠেলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। সাকিব এমনটা না করলেই পারতেন।