বিশ্বক্রিকেটের নতুন শক্তি হিসাবে আবির্ভাব ঘটেছে আফগানিস্তানের। চলতি বিশ্বকাপের সেরা চমক হিসাবে উঠে এসেছে আফগানিস্তান। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা- তিন প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বধ করে সেমিফাইনালের দৌড়ে অবিশ্বাস্যভাবে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছে হাসমাতুল্লাহ শাহিদিরা। গোটা বিশ্বের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নূর আহমেদ, মহম্মদ নবি, রশিদ খান, নভিন উল হক, ফজলহক ফারুখি, রহমনুল্লাহ গুরবাজ, মুজিব উর রহমানরা দাপিয়ে খেলছেন।
টি২০ ক্রিকেটে ফ্রিল্যান্সিং ক্রিকেটারদের নিয়েই এবার বিশ্বকাপ মাতিয়ে দিচ্ছে আফগানিস্তান। দেশে ক্রিকেট পরিকাঠামোই নেই। কয়েক মাস আগেও ভারতে হোম ম্যাচ খেলতেন আফগানিস্তান ক্রিকেটাররা। বিসিসিআইও আফগানিস্তানের উন্নতিতে সহায়ক হয়েছে। দেরদুন, নয়ডায় ক্রিকেট মাঠ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে স্রেফ আফগান ক্রিকেটারদের জন্য। তাতেই সোনা ফলছে বিশ্বকাপে।
২০১৫-য় প্ৰথমবার বিশ্বকাপের মঞ্চে আবির্ভাব। সেবারেই আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিলেন রশিদ খানরা। ২০১৯-এ একটি ম্যাচ-ও জিততে পারেনি আফগানরা। সেই আক্ষেপ এবার সুদে আসলে পুষিয়ে দিচ্ছেন আফগানরা। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিন আক্রমণ নিয়ে একের পর এক ম্যাচে ঝলসে দেওয়া পারফরম্যান্স করছেন তাঁরা।
আর আফগানিস্তান ক্রিকেটের উল্কা গতিতে উত্থান হঠাৎ বাংলাদেশ ক্রিকেটের অধঃপতন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।১৯৯৯ থেকে টানা বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। এমনকি তৎকালীন আইসিসির সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নতি ত্বরান্বিত করার জন্য টেস্ট খেতাব-ও দিয়ে দেন। তবে তারপর থেকে একধাপ-ও এগোয়নি বাংলাদেশ।
সাত বিশ্বকাপ খেলা হয়ে গেলেও একবার-ও সেমিতে পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ অর্জন ২০১৫-য় কোনওরকমে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আড়াই দশক কাটিয়ে ফেলার পরেও এখনও তথাকথিত ছোট দলের ট্যাগ ঝেড়ে ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। বিক্ষিপ্তভাবে হেভিওয়েট দলকে হারালেও বাংলাদেশ কখনই ধারাবাহিকভাবে জয়ের রাস্তায় থাকেনি। চলতি বিশ্বকাপ-ই যেমন দেখিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান তো বটেই এমনকি নেদারল্যান্ডসও সেরকম সুযোগ সুবিধা পেলে শক্তি-সামর্থ্যে ছাড়িয়ে যেতে পারে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ যেখানে ছয় ম্যাচে মাত্র এক জয় নিয়ে কার্যত সেমিফাইনালের দৌড় থেকেই ছিটকে গিয়ে। অন্যদিকে, সেই তুলনায় আফগানিস্তান তিন জয় এবং নেদারল্যান্ডস জোড়া জয় নিয়ে সেমিফাইনালের দৌড় টাইগারদের থেকে ভালো পজিশনে রয়েছে।
আর বাংলাদেশের ক্রিকেটের বছরের পর বছর এমন শোচনীয় পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ স্বয়ং বীরেন্দ্র শেওয়াগ-ও। শ্রীলঙ্কা ম্যাচে আফগানিস্তান দুর্ধর্ষ জয় পাওয়ার পরই শেওয়াগ টুইটারে লিখে দিয়েছেন, "ওয়াও আফগানিস্তান, কী দুরন্ত পারফরম্যান্স! আফগানরা যা স্পিরিট দেখিয়েছে, তা থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে ২৫ বছর খেলে ফেলল। অথচ বড় দলগুলোকে এখনও টানা হারাতে পারে না। আফগানিস্তান ক্রিকেটাররা তো অনেক অল্প সময়ে এই কাজ করিয়ে দেখাল। অল্প সময়ের মধ্যে সবথেকে উন্নতি করা দল ওঁরাই।"
আফগানিস্তান যেখানে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছে, সেখানে বাংলাদেশ সম্ভবত আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাদ পড়তে পারে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, আয়োজক পাকিস্তানের সঙ্গে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ে সেরা সাত দল ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ বর্তমানে রয়েছে নয় নম্বরে। একমাত্র ইংল্যান্ড ১০ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশের নিচে।
সবমিলিয়ে এই হতাশার ঢেউ কবে শেষ হবে পদ্মাপাড়ের ক্রিকেটে, সেই প্রতীক্ষাতেই রয়েছেন বাংলাদেশের সমর্থকরা।