সরকারিভাবে এখনও ঘোষণা বাকি রয়েছে। খাতায় কলমে এখনও নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালে পৌঁছয়নি। তবে বাস্তব যুক্তির বিচারে আফগানিস্তান-পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ থেকে ছুটি করে দিয়ে নিউজিল্যান্ডের সেমিফাইনালে চতুর্থ দল হিসেবে প্রবেশ করে গিয়েছে বৃহস্পতিবার রাতেই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ওয়াংখেড়েতে ভারতের মোকাবিলা করতে নামছে কিউইরা।
চলতি বিশ্বকাপে মোটেই ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারেনি কিউইরা। টুর্নামেন্ট জুড়ে মোক্ষম সময়ে একাধিক দুর্বলতা প্রকট হয়ে গিয়েছে। তবে এই নিউজিল্যান্ডই ফের একবার ভারতের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হতে পারে, ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মত। দেখে নেওয়া যাক, কেন ভারতের ভয়ের যথেষ্ট কারণ রয়েছে-
পিক ফর্মে নিউজিল্যান্ড: ঠিক সময়ে ফর্মে ফিরেছে নিউজিল্যান্ড। একদম নকআউটের আগেই ছন্দে কিউইরা। নকআউট পর্বে কেন উইলিয়ামসনরা বরাবর ভারতের আতঙ্ক। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বাজিমাত করে প্রতিপক্ষকে ছিটকে দেওয়া নিউজিল্যান্ডের ট্রেডমার্ক স্টাইল। টেস্ট চ্যাম্পিয়ন্সশিপ ফাইনাল, ওয়ার্ল্ড কাপের সেমিফাইনাল- ভারত তো কিউইদের সবথেকে বড় শিকার।
চাপ সামলানোর দক্ষতা: চাপ সামলাতে নিউজিল্যান্ড সিদ্ধহস্ত। টানা তিনটে হার হজম করে কিউইরা একসময় সেমিফাইনালের দৌড় থেকে কার্যত ছিটকে গিয়েছিল। তবে পাকিস্তান ম্যাচে হারলেও ব্যাট হাতে দুরন্ত ভঙ্গিতে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিল। স্কোরবোর্ডে ৪০০ তুলে।
চোট সারিয়ে ঠিক সময়ে ছন্দে ফেরা: বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন লকি ফার্গুসন। তিনিই দলের এক্স ফ্যাক্টর। গত কয়েকটি ম্যাচে চোটের কারণে খেলতে পারেননি তিনি। এমনকি কেন উইলিয়ামসন বাংলাদেশ ম্যাচে চোট পাওয়ার পর টানা ডাগ আউটে বসে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। পাকিস্তান ম্যাচে দুরন্ত ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন ঘটে তাঁর। এমনকি অফ ফর্মে থাকা ট্রেন্ট বোল্টও ছন্দে ফেরার বার্তা দিয়েছেন শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে উইকেট নিয়ে। ব্যাট হাতে ডেভন কনওয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫২ করার পর টানা নিষ্প্রভ থেকেছেন। তিনিও ফর্মে ফেরাদের দলে নাম লিখিয়েছেন ঠিক নকআউট পর্বের আগে। চার তারকার প্রত্যাবর্তন, ফর্মে ফেরা ভারতকে ভোগানোর পক্ষে যথেষ্ট।
কিউইদের ব্যাটিং শক্তি: নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং শক্তি টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা। রচিন রবীন্দ্র থেকে এগারো নম্বরে ব্যাট করতে নামা টিম সাউদি সকলেই ব্যাট হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। ওয়াংখেড়ের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে শামি-সিরাজ-জাদেজাদের সামনে চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি থাকবে হেভিওয়েট কিউই ব্যাটিং লাইনআপ।
ওয়াংখেড়ের কন্ডিশন: ধর্মশালায় ভারত যখন গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ব্ল্যাক ক্যাপসদের মুখোমুখি হয়েছিল, ভাবা গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের ভারতের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। তবে বাস্তবে ভারতের অলরাউন্ড ক্রিকেটে ভেসে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এবার অবশ্য পরিস্থিতি আলাদা। ধর্মশালার মত ভারতীয় বোলাররা ততটা সাহায্য পাবেন না ওয়াংখেড়ের পিচ থেকে। তাছাড়া ভারতকে ব্যাকফুটে ফেলার জন্য কিউইরা কাইল জেমিসনকে ব্যবহার করতে পারে। দীর্ঘদেহী জেমিসন ওয়াংখেড়ের পিচ থেকে আচমকা বাউন্স আদায় করে চমকে দিতে পারেন গিল-কোহলিদের। ওয়াংখেড়েতে নতুন বলে সামান্যতম সুবিধা পেলেও বোল্ট, জেমিসনরা ভারতকে নাস্তানাবুদ করতে পারার সামর্থ্য রাখে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে দীর্ঘদিন খেলার সূত্রে বোল্ট ওয়াংখেড়ের কন্ডিশন ভালোই জানেন। নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বোল্ট মারণ ফর্মে ধরা দিতে পারেন।
পছন্দ আন্ডারডগ ট্যাগ: নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে ফিনিক্স পাখির মত উত্থান ঘটিয়েছে। কার্যত সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছিল ব্ল্যাক ক্যাপসরা, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন সেমিফাইনালে তাঁরা। আর আন্ডারডগ হিসেবে নিউজিল্যান্ড সবসময় খেলতে পছন্দ করে। ফোকাস যখন তাঁদের ওপর থাকে না, তখনই মারণ মূর্তি নিয়ে আবির্ভাব ঘটে তাঁদের।
রোহিত শর্মাদের কি ভয় লাগছে?