আহমেদাবাদে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে সদম্ভ হাজিরা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। অস্ট্রেলিয়ান ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার রিচার্ড মার্লেসের সঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম নিজের নামের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শাহের সঙ্গে বসে ম্যাচ উপভোগ করেন তিনি। তবে তাঁর উপস্থিতিতে তাঁর স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়তে পারেনি ভারত। তাঁর হাত থেকেই ট্রফি নিয়েছেন প্যাট কামিন্স।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে পর্যুদস্ত হয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। ফাইনালে হৃদয়বিদারক হারের পর ভারতীয় ড্রেসিংরুমে শোকের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। চোখের জলে মাঠ ছেড়েছিলেন কোহলি, রোহিত, সিরাজরা। মন খারাপের ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছিল টিম ইন্ডিয়ার সমস্ত তারকারা। আর ভারতীয় তারকাদের সান্ত্বনা দিতে ড্রেসিংরুমে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আর এই ঘটনা নিয়েই এবার সরব হয়েছেন কীর্তি আজাদ। যিনি ভারতের প্ৰথমবার বিশ্বকাপ জয়ে কপিলের দলের অন্যতম স্থপতি ছিলেন। তিনি সরাসরি মোদির বিপক্ষে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, টিমের ড্রেসিংরুমে গিয়ে আইসিসির নিয়মকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজেপির টিকিটে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন। পরে অবশ্য বিক্ষুদ্ধদের তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন কীর্তি আজাদ। তিনি বর্তমানে কট্টর মোদি-বিরোধী হিসাবেই দিল্লির রাজনীতিতে পরিচিত। তিনি মোদির ভারতীয় ড্রেসিংরুমে পদর্পনের পরেই লম্বা টুইট করে বসেন। যেখানে তিনি পরপর লিখতে থাকেন "যে কোনও দলের কাছে ড্রেসিংরুম হয় ভীষণ পবিত্র এক স্থান। প্লেয়ার এবং সাপোর্ট স্টাফ ছাড়া আইসিসি কাউকেও এখানে প্রবেশের অনুমতি দেয় না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ড্রেসিংরুমের বাইরে কোনও এক জায়গায়, ব্যক্তিগত যোগাযোগের স্থানে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারতেন। আমি কোনও রাজনীতিবিদ নয়, একজন ক্রীড়াবিদ হিসাবে এই কথা বলছি।"
"এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি চাইবেন তাঁকে শুভেচ্ছা অথবা সান্ত্বনা জানানোর জন্য সমর্থকরা তাঁর শয়নকক্ষ, ড্রেসিংরুম, ব্যক্তিগত শৌচালয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করুক।"
বিশ্বকাপ ফাইনালে বিসিসিআই সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারতের প্ৰথম বিশ্বজয়ী ক্যাপ্টেন কপিল দেবকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে। যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় গোটা দেশে। সেই ইস্যুতেও বিসিসিআইকে একহাত নিয়ে কীর্তি আজাদের টুইট, "সবশেষে একটা কথা বলতে চাই। যে ব্যক্তি ভারতের হয়ে প্ৰথম বিশ্বকাপ জয় করল সেই ১৯৮৩-র কপিল দেবকেই আমন্ত্রণ জানানো হল না। এখন আমাকে বলা হোক, কে রাজনীতি করছে?"
যাইহোক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ড্রেসিংরুমে টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করায় সত্যি কী নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে? আইসিসির নিয়ম কী জানাচ্ছে, দেখে নেওয়া যাক-
ক্রিকেটে দুর্নীতি আটকানোর জন্য আইসিসির তরফে PMOA (প্লেয়ার এন্ড ম্যাচ অফিসিয়াল এরিয়া) সংক্রান্ত নিয়ম ঢেলে সাজানো হয়েছে। বলা হয়েছে, PMOA যার মধ্যে রয়েছে ড্রেসিংরুমও। প্রতিটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে এই PMOA-এর মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন একমাত্র ক্রিকেটার এবং সাপোর্ট স্টাফ। ম্যাচ ভিউ এরিয়া (ডাগ আউট) ব্যবহার করতে পারবেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। ডাইনিং এরিয়ার মধ্যে থাকবেন ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ এবং ম্যাচ আধিকারিকরা। তবে আইসিসির দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকরা চাইলে যে কোনও জায়গায় প্রবেশ করতে পারবেন।
আরও বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি তিনি নিজের পদাধিকার বলে যেই হোন না কেন, আইসিসির তরফে কোনও সরকারিভাবে স্বীকৃত শংসাপত্র ছাড়া ড্রেসিংরুমে প্রবেশ করতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রীর এই প্রবেশ নিয়ে যতই বিতর্ক দানা বাঁধুক না কেন, ভারতীয় ক্রিকেটাররা কিন্তু মোদির এই কাণ্ডে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সোমবার ভারতের পরাজয়ের পর রবীন্দ্র জাদেজা এবং মহম্মদ শামি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেন। ড্রেসিংরুমে নরেন্দ্র মোদির বেশ কিছু ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সঙ্গেসঙ্গেই। যে ছবিতে মোদিকে দেখা যাচ্ছে একাধিক ভারতীয় তারকাকে সান্ত্বনা দিতে।
শামি নিজের পোস্টের ক্যাপশনে লিখেছেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে গতকাল দিনটা মোটেই ভালো ছিল না আমাদের জন্য। দলকে সমর্থনের জন্য সকল ভারতীয়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিশেষ ধন্যবাদ ড্রেসিংরুমে এসে আমাদের উৎসাহিত করার জন্য। আমরা শীঘ্রই কামব্যাক করব।”
জাদেজা নিজের পোস্টে লিখলেন, “আমাদের টুর্নামেন্ট দারুণ গেল। অল্পের জন্য শেষ হল না। আমাদের সকলের হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। তবে সমর্থকদের ভালোবাসা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ড্রেসিংরুমে আসা আমাদের আরও চাঙ্গা করে দিয়েছে।”