অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। প্রথমে ব্যাট হাতে গুরবাজের বিধ্বংসী ইনিংস, ইকরামের অনবদ্য হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে ইংল্যান্ডের সামনে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ২৮৫ রানের টার্গেট ছুড়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান। আর সেই রান চেজ করতে নেমেই ইংল্যান্ডের হেভিওয়েট ব্যাটিং লাইনআপ ধসে যায় মাত্র ২১৫ রানে। মুজিব, রশিদ, নবিদের স্পিনের কোনও জবাব-ই ছিল না ইংরেজদের কাছে।
ঘটনা হল, এই নিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় জয় পেল আফগানরা। ২০১৫ ওয়ার্ল্ড কাপে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছিল আফগানরা। ২০১৯-এ একটি ম্যাচেও জয় পাননি রশিদ খানরা। এমনিতে শক্তি সামর্থ্যের বিচারে ইংল্যান্ডের সঙ্গে কোনও তুলনায় হয়না আফগানদের। ইংল্যান্ড যেখানে বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি, সেখানে আফগানিস্তান উদীয়মান শক্তি। সেই হিসাবে আফগানিস্তানের জয়কে কোনওভাবে খাটো না করেই 'অঘটন' বলা অত্যুক্তি হবে না।
ঘটনা হল, আফগানিস্তানের জয়ের সঙ্গেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের জয়কে একই ব্র্যাকেটে জুড়ে দিয়েছে পাকিস্তানি ফ্র্যাঞ্চাইজি। পিএসএল-এ অংশগ্রহণকারী ইসলামাবাদ ইউনাইটেড বিতর্কিতভাবে বলে দিয়েছে, আফগানিস্তান আর ভারত দুই ম্যাচেই অঘটনের ফলাফল হল।
আফগানিস্তান যেখানে উঠতি শক্তি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে আত্মপ্রকাশ করার প্রচেষ্টা জারি রেখেছে, সেখানে ভারত বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দল। দু-বার ওয়ানডে ওয়ার্ল্ড কাপ জয়ী ভারত টি২০ বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও জিতেছে। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ভারত কাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার। তাই ক্রিকেটীয় যুক্তি বিবেচ্য হলে, পাকিস্তানকে হারানো ভারতের কাছে মোটেও অঘটন নয়। বরং যোগ্য দল হিসাবেই পাকিস্তানকে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে দুরমুশ করেছে ভারত।
এত যুক্তির অবশ্য ধার ধারেনি ইসলামাবাদ ইউনাইটেড। নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে ভারত এবং আফগানিস্তানের ক্রিকেটীয় শক্তিকে একই সারিতে রেখে খোঁচা দেওয়ার ইঙ্গিত করেছে। রবিবার আফগানিস্তানের জয়ের পরেই টুইটারে লিখে দেওয়া হয়েছে, "দু-দিনে দুটো অঘটন ঘটল। ওয়ার্ল্ড কাপ এবার যথেষ্ট সারপ্রাইজ নিয়ে হাজির হচ্ছে।"
ঘটনা হল, ভারত এবারই পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে প্ৰথম জয় পেল না। ১৯৯২ সাল থেকে যতবার দুই দল মুখোমুখি হয়েছে, ততবারই ভারতের সামনে আত্মসমর্পণ করেছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপের মঞ্চে মুখোমুখি সাক্ষাতে ভারতের পক্ষে ফলাফল ৮-০। ১৯৯২ সাল থেকে প্রত্যেক বিশ্বকাপের সংস্করণে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। ২০০৭ সালের সংস্করণ বাদে।
যাইহোক, ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের এই খোঁচা দেওয়া টুইট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। সঙ্গেসঙ্গেই ক্রিকেট মহলে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। পাল্টা দিয়েছেন ভারতীয় সমর্থকরা।
ম্যাচে ভারতের অলরাউন্ড ক্রিকেটের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান। বাবর আজমের ফিফটি এবং মহম্মদ রিজওয়ানের ৪৯ বাদে কোনও ব্যাটারই ভারতীয় বোলারদের সামনে নূন্যতম চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিতে পারেনি। মহম্মদ সিরাজ শুরুতে ছন্দে না থাকলেও পরে দুর্দান্তভাবে কামব্যাক করেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জোড়া উইকেট শিকার করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তিনি। বুমরার অফকাটার, স্লোয়ারেরও কোনও জবাব ছিল না পাক ব্যাটসম্যানদের। বুমরাজ সিরাজ, কুলদীপ, জাদেজা সকলেই দুটো করে উইকেট শিকার করেন। ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন রোহিত শর্মা। ৮৬ করে আউট হন তিনি। শ্রেয়াস আইয়ার-ও হাফসেঞ্চুরি করে যান। ভারত ১৯ তারিখে পরবর্তী ম্যাচে নামবে বাংলাদেশের বিপক্ষে।