বাংলাদেশ: ২৫৬/৮
ভারত: ২৬১/৩
বাঘের গর্জন কোথায়, পুণের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার মাঠে ফের শোনা গেল ম্যাও ম্যাও। ভারতের সামনে দাঁড়াতেই পারল না বাংলাদেশ। বিশ্ব ক্রিকেটের একমাত্র স্বঘোঘিত টাইগার বাহিনী। মাঠে না হলেই মাঠের বাইরে প্রতাপ বেশ। সেই টাইগার বাহিনীকেই কাগুজে বাঘ করে ছাড়ল টিম ইন্ডিয়া।
পিচ ঢালা রাস্তার মত পিচে কোনওরকমে কেঁদে কঁকিয়ে ২৫৬ তুলেছিল বাংলাদেশ। এই পুঁজি নিয়ে ফর্মে থাকা ভারতকে আটকানো অনেকটা পা ছাড়া সাইকেল চালানোর মতই বিষয়। সেটা সম্ভব নয়। হয়-ওনি।
সামান্য রানের টার্গেটের সামনে রোহিত শর্মা যে গতিতে রানের বাইক ছোটাচ্ছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল টার্গেট বোধহয় ৪০০ +। রোহিত-গিল মিলে পাওয়ার প্লেতেই কার্যত গিলে খেলেন বাংলাদেশি বোলারদের সমস্ত প্রতিরোধের স্বপ্ন। রোহিত শর্ট বলে টাইমিংয়ের হেরফের ঘটিয়ে ফিফটির ঠিক আগেই ফিরলেও ভারতের রানের গতি আটকায়নি। শ্রেয়স আইয়ার হোক বা বিরাট কোহলি, কেএল রাহুল কেউই রানের গতিতে ব্রেক কষেননি। ফলস্বরুপ ভারতের টানা চতুর্থ জয় এল ৫১ বল হাতে ৭ উইকেট নিয়ে।
রোহিত-গিল-শ্রেয়সরা ইচ্ছাকৃতভাবে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেও কখনই মনে হয়নি বাংলাদেশের এই ম্যাচে কোনও অস্তিত্ব রয়েছে। কোহলি দুর্বল বাংলাদেশি বোলারদের সামনে শাসন করে গেলেন বাকিটা সময়। এমনিতে একপেশে ম্যাচে শেষদিকে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার আমদানি হল কোহলির শতরানকে কেন্দ্র করে। পুঁজি অল্প হওয়ায় কোহলির একসময় শতরান হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। সিঙ্গলস নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। শেষ বলে সিঙ্গলস নিচ্ছিলেন। অবশেষে কোহলির আক্ষেপ ঘুচল ৪২তম ওভারে। ওভারের চতুর্থ বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ ফিনিশ করলেন। নিজের ৪৮তম ওয়ানডে শতরান পূর্ণ করে গেলেন।
হাইরোডের মত পিচ। ভুল না করলে উইকেট হারানো কার্যত অসম্ভব। ব্যাটিং স্বর্গের এই পিচে ভারতের কালঘাম ছুটে গিয়েছিল শুরুর দিকে। হার্দিক পান্ডিয়া মাত্র নবম ওভারেই গোড়ালি মচকে মাঠ ছাড়েন। অপশন ছিল না ক্যাপ্টেন রোহিতের হাতে। শার্দূল ঠাকুরও রান বিলিয়ে দেওয়ার খেলায় মেতেছিলেন। ২০ ওভারের আগেই বাংলাদেশের একসময় স্কোর ছিল ১১০/১। ভাবা হচ্ছিল, ৩২০+ স্কোর না করা কার্যত অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
ভারতের বোলিংয়ে এমনিতে বৈচিত্র্যের অভাব নেই। স্পিন হোক না পেস পিচ সহায়ক হলেই ফায়দা তুলতে দ্বিধা করেন না সিরাজ-কুলদীপরা। তবে একদম পাটা পিচে ভারতীয় বোলাররা কেমন পারফর্ম করেন, সেদিকে নজর ছিল। সেই পরীক্ষায় বৃহস্পতিবার অন্তত সসম্মানে উত্তীর্ণ।
তবে বাংলাদেশের ইনিংসের উড়ন্ত শুরুর সময় একাধিক প্রশ্ন ভেসে আসছিল টিম ইন্ডিয়ার অন্দরমহলে। অশ্বিন অথবা শামিকে বসিয়ে রেখে শার্দূলকে খেলানো কতটা যুক্তিযুক্ত? হার্দিকের অনুপস্থিতি কীভাবে সামাল দেবেন ক্যাপ্টেন রোহিত?
এমনিতে ফ্ল্যাট ট্র্যাকে ভারতের তর্কাতীতভাবে সেরা বোলার রবীন্দ্র জাদেজা। পিচে স্কিড করিয়ে উইকেট তুলে নিতে জুড়ি মেলা ভার তারকার। সেই জাদেজাই লক্ষ্মীবারে ভারতকে ম্যাচে ফেরালেন নিজের অভিজ্ঞতা, স্কিল, সহজাত প্রতিভার সংমিশ্রণে।
সাকিবের অনুপস্থিতিতে যিনি বাংলাদেশকে এদিন নেতৃত্ব দিলেন সেই নাজমুল হাসান শান্তের ব্যাটিং দুর্বলতা আগেই প্রকট হয়ে গিয়েছিল জাদেজাদের কাছে। শরীর থেকে অনেকটা দূরে নিয়ে গিয়ে শট খেলার প্রবণতা রয়েছে তাঁর। লেগ বিফোর হওয়ার একদম আদর্শ ক্যান্ডিডেট যাঁকে বলে! কুলদীপ এই ফাঁদেই ফেলতে চাইলেন শান্তকে। তবে শান্তকে শেষমেশ শান্ত করলেন জাদেজা। হালকা লো বলে স্কিড করিয়ে প্যাডে বল আছড়ে ফেললেন জাড্ডু।
লিটন দাসের জন্য জাদেজার অস্ত্র ছিল লেন্থ অথবা ফুলার বল। লিটন অবশ্য জাদেজার বিরুদ্ধে ভালো খেলছিলেন। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে টানছিলেন তিনি। তবে জাদেজা দ্রুতই নিজেকে শুধরে নেন। লেন্থ বদল করে ব্যাক অফ দ্য লেন্থে নিয়ে যান নিজেকে। সেই লেন্থ থেকেই স্কিড করানো চালু করলেন তিনি। এতেই শুরু হয় সমস্যার সূত্রপাত। কাট করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার টাইমিংয়ের গন্ডগোল করে ফেলতে শুরু করলেন।
২৮ তম ওভারেই ধুরন্ধর জাদেজা বুঝে যান, লিটন ডাউন দ্য মিডল হাঁকানোর চেষ্টা করবেন তাঁকে। স্রেফ লেন্থের অদলবদল ঘটিয়ে জাদেজা বড় শট খেলতে বাধ্য করলেন লিটনকে। সেই শটেই লং অনে ক্যাচ তুলে বিদায় সেট হয়ে যাওয়া তারকার।
অন্যপ্রান্তের জাদেজাকে যোগ্য সঙ্গত করে যাচ্ছিলেন কুলদীপ। তিনিই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের প্ৰথম রক্ত বের করে দেন। হাফসেঞ্চুরিয়ন ওপেনার তানজিদ হাসানকে আউট করে। সিরাজের বরাবরের অস্ত্র ক্রস সিম। পাক ম্যাচে ভারতকে সিরাজ ম্যাচে ফেরান ক্রস সিমের একটা স্পেল। সিরাজ একই ভঙ্গিতে পুনেতে ভারতকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সেই স্ক্র্যামবেলড সিমে। মেহেদি হাসানের উইকেট অবশ্য যতটা সিরাজের। তার থেকেও বেশি কেএল রাহুলের। লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বল ব্লাইন্ড স্পট থেকে ঝাঁপ দিয়ে তালুবন্দি করে যান কেএল রাহুল। চলতি বিশ্বকাপের যা অন্যতম সেরা ক্যাচ হিসাবেই রয়ে গেল।
বুমরা বাংলাদেশের ইনিংসের শেষদিকে ফিরলেন স্বভাবসিদ্ধ কাটার, ইয়র্কার সমেত। এমনকি প্রথম স্পেলে যথেচ্ছ রান বিলিয়ে দেওয়া শার্দূল-ও শেষের দিকে আঁটোসাঁটো বোলিং করে গেলেন। ৯ ওভার ফিনিশ করলেন ৫৯/১ রানে। পাটা পিচ, হার্দিক পান্ডিয়ার অনুপস্থিতি- ভারতকে থামাতে পারল না, দমাতে পারল না, এটাও কি কম স্বস্তির?