বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়নি। অথচ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে হঠাৎ করেই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে বিসিসিআই। ভারত-পাক ম্যাচের আগে রুপোলি অনুষ্ঠান মাতাবে আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। মাঠে বৃহস্পতিবার পাকিস্তান টিম তখনও পৌঁছয়নি। ভারতীয় দল-ও অনুশীলনে নামেনি। তবে মোদি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার মহড়া হয়ে গেল জাঁকালো অনুষ্ঠানের।
এই প্ৰথমবার চলতি বিশ্বকাপে হয়ত কানায় কানায় ভরা স্টেডিয়ামে দেখা যাবে। এক লাখের বেশি আগত দর্শকদের বিনোদনের জন্য ম্যাচের আগেই বিনোদনের আয়োজন করা হচ্ছে। ম্যাচের ৪৮ ঘন্টা আগে ৪০×৩০ মিটার অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে মহড়া দেওয়া হল মূল অনুষ্ঠানের। দারুণভাবে রিহার্সাল সম্পন্ন হল লক্ষ্মীবারে।
মূল অনুষ্ঠান মাতাতে দেখা যাবে অরিজিৎ সিং, সুখবিন্দর সিং, শঙ্কর মহাদেবন, নেহা কক্কর, সুনিধি চৌহানের মত বলিউডের নামি-দামি গায়ক-গায়িকাদের।
গোটা অনুষ্ঠানের মহড়া চলল আর্ট ডিরেক্টর প্রশান্ত বিচারের তত্ত্বাবধানে। প্রয়াত নিতিন দেশাইয়ের সহকারী ছিলেন। বর্তমানে নিজস্ব প্রোডাকশন ফার্ম রয়েছে। নাম জেসমিন আর্টস। এর আগে একাধিক বলিউডি প্রোজেক্টে সফলভাবে যুক্ত থেকেছেন তিনি। লাগান, যোধা আকবর, জওয়ান-এর মত ফিল্মে প্রোডাকশন টিমের হেড ছিলেন তিনি। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কস জানিয়েছেন, "এমন একটা মঞ্চ বানাতে চলেছি আমরা যাতে ২০০-র বেশি লোক একসঙ্গে পারফর্ম করতে পারে। টার্ফের এতে কোনও ক্ষতি হবে না। আইপিএল, WPL-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করেছি আমরা। এবার গোয়ায় ন্যাশনাল গেমসের উদ্বোধনেও আমরা যুক্ত থাকছি।"
লগানে আশুতোষ গোয়ারিকরের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি জানাচ্ছেন, "লগানের তুলনায় এটা (ক্রিকেট বিশ্বকাপ) তো কিছুই নয়। ভুজে আমরা ছয় মাস ছিলাম সেবার। গোটা একটা গ্রাম তৈরি করতে হয়েছিল। যোধা আকবর-ও কঠিন ছিল। তবে ফিল্ম সিটিতে এর সেট অনেকটাই তৈরি ছিল।"
বিচারের আর্ট ডিরেক্টরের টিমে রয়েছেন মুম্বইয়ের ২৩ জন এবং আহমেদাবাদের কর্মী। মুম্বইয়ের কর্মীদের আবার বলিউডের সেটে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই কর্মীদের মধ্যে সেলভন, গোপাল জানাচ্ছেন, "আমরা জওয়ানের সেটে কয়েকদিন আগেই কাজ করে এলাম। শাহরুখ খান দারুণ ব্যক্তি। উনি প্রায়ই আমাদের সঙ্গে এসে গল্প করতেন। চিনা চরিত্রের ব্যাপারে নিশ্চয় আপনারা জানেন। ওঁরা সকলেই মুম্বইয়ের এরে কলোনিতে থাকে। ওই সিনেমার ডিরেক্টর, আর্ট ডিরেক্টর সকলেই তামিল।"
প্রশ্ন হল, যে বিশ্বকাপ কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখেনি, সেই ইভেন্টে হঠাৎ করেই গ্রুপ পর্বের একটি ম্যাচে এরকম জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দর্শকদের আবেগ, ভিউয়ারশিপের দিক থেকে বিবেচ্য হলে ভারত বনাম পাক দ্বৈরথ বরাবর-ই আলাদা। তবে আয়োজক হিসাবে নিরপেক্ষতার সঙ্গে বিশ্বকাপের সমস্ত ম্যাচ একইভাবে জমকালো করার, প্রমোট করার দায়িত্ব বিসিসিআইয়ের। জয় শাহের বোর্ড যে বিশ্বকাপের আয়োজন নিয়ে প্ৰথম থেকেই ল্যাজে গোবরে দশায় পড়েছে, তা আর নতুন কিছু ব্যাপার নয়। ভেন্যু বাছাই, ধর্মশালার আন্ডার প্রিপেয়ার্ড টার্ফ হোক বা টিকিট কেলেঙ্কারি, সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অনুপস্থিতি গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের মুখ পুড়িয়েছে জয় শাহের বিসিসিআই। নতুন করে ভারত-পাক ম্যাচের আগে সুরেলা অনুষ্ঠান নিয়ে ফের একবার প্রশ্নের মুখে বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেট বোর্ড।
বিশ্বকাপে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান না করার জন্য বোর্ডের তরফে যুক্তি ছিল, দিনের আলোয় ম্যাচ শুরুর আগে পর্যাপ্ত লেজার শো, লাইটিংয়ের বন্দোবস্ত করা সম্ভব নয়। সেই একই যুক্তি খাটলে, শনিবার ভারত-পাক ম্যাচের আগে কীভাবে বর্ণজ্জ্বল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে? প্রশ্ন অনেক, উত্তর জানা নেই।