ভারতে ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিসিসিআইয়ের ভূমিকা। আইসিসির তরফে সূচি ঘোষণা করেও বদলাতে হয়েছিল দু-দুবার। এরপরে টিকিট বন্টন, বিক্রি প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচিত হয়েছে বিসিসিআই। শুধু তাই-ই নয় সবথেকে জ্বালাময়ী ক্ষোভের জন্ম হয়েছিল কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াই বিশ্বকাপের সূচনা করা নিয়ে। প্ৰথম ম্যাচে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড আহমেদাবাদে যখন খেলতে নেমেছিল ভর-দুপুর বেলা তখন মেরেকেটে স্টেডিয়ামে হাজির হাজার চারেক দর্শক। পরে সেই সংখ্যা আরও বাড়লেও জয় শাহের বিসিসিআই অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে পারেনি।
বিশ্বকাপের ভেন্যু বাছাই নিয়ে একগাদা বিতর্ক চালু হয়েছিল আগে থেকেই। মোহালি, নাগপুর, তিরুবন্তপুরমের মত ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামে কোনও ম্যাচ ফেলা হয়নি। কৌলীন্য বর্জিত আহমেদাবাদে বিশ্বকাপের সমস্ত বড় বড় ম্যাচ রাখা হয়েছে। উদ্বোধনী এবং ফাইনাল ম্যাচ। ভারত-পাক দ্বৈরথ সব-ই হবে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এর সঙ্গে ধর্মশালায় কেন ম্যাচ আয়োজন করা হল, তা নিয়ে রাজনীতিতেও চর্চা চালু হয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সোহদর এবং বিসিসিআইয়ের প্রভাবশালী কর্তা অরুণ ধূমলের জন্যই কি ধর্মশালায় ম্যাচ ফেলা হয়েছে? বলা হচ্ছিল, যে ভেন্যুতে বিশ্বকাপ আয়োজন করা হচ্ছে, তাতে রাজনৈতিক সংস্রব রয়েছে।
আর বিশ্বকাপ শুরু হতেই বিসিসিআইয়ের কপালে চিন্তা বাড়িয়েছে ধর্মশালার আউটফিল্ড। বিশ্বকাপে এই ভেন্যুতে প্ৰথম ম্যাচে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান। সেই ম্যাচেই আউটফিল্ডের দুরবস্থা প্রকট হয়েছে। ফিল্ডাররা বল রুখতে গেলেই স্লিপ করে যাচ্ছেন। আউটফিল্ডে অধিকাংশ জায়গাতেই চাকলা উঠে গিয়েছে। ইনজুরির প্রবল সম্ভবনা রয়েছে এই আউটফিল্ডে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে উঠেই আফগান কোচ জোনাথন ট্রট জানিয়েছিলেন, মুজিব-উর রহমানের যে বড়সড় চোট হয়নি, তাতে বড় স্বস্তি পেয়েছেন তিনি। ডিপ মিড উইকেটে বাউন্ডারি আটকাতে গিয়ে ডাইভ দিয়েছিলেন। কোনওরকমে বড়সড় ইনজুরির হাত থেকে রক্ষা পান তিনি।
এই স্টেডিয়ামেই মঙ্গলবার খেলতে নামছে ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ নয়, ইংরেজ ক্যাপ্টেন জস বাটলারের চিন্তায় কেবলই ধর্মশালা আউটফিল্ড। "দল হিসেবে কেউই এখানে নামতে চাইবে না। সকলেই বাউন্ডারি আটকানোর জন্য ডাইভ দেবেই। তবে সারফেস মোটেই আদর্শ নয়। আমরা কোনও অজুহাত দিচ্ছি না। তবে এমন জায়গায় দল হিসেবে কেউই যেতে চাইবে না।" বলেছেন ইংরেজ অধিনায়ক।
বাটলার জানাচ্ছেন, আইপিএলের সময় এই স্টেডিয়ামের যে সারফেস ছিল, তা এখন বদলে গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, "যে কোনও সময়েই ইনজুরি হতে পারে। তবে এটা এমন এক সারফেস যেখানে সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে। দেশের জার্সিতে খেলতে নামার জন্য যা একদমই উচিত নয়। দেশের জার্সিতে খেলতে নামলে সেরাটা দেওয়া উচিত। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ফাস্ট বোলারদের দ্রুত গতিতে বল করতে হবে। তবে আমরা পেশাদার। আমরা মানিয়ে নিতে পারব।"
"স্বাভাবিকভাবে বল দেখলে যে কোনও ফিল্ডার ঝাঁপ দিতে চাইবে। জানি আমাদের প্রতিপক্ষ দলও নিজেদের চোট আঘাত থেকে দূরে রাখতে চাইবে। এটা অদ্ভুত এক পরিস্থিতি। আশা করব, দুই দলের যেন কোনও ক্রিকেটার চোটের কবলে না পড়েন।"
প্ৰথম ম্যাচের পর ধর্মশালা আউটফিল্ডকে 'গড়পড়তা' রেটিং দিয়েছিল আইসিসি। ইংল্যান্ড বনাম বাংলাদেশ ম্যাচের জন্যও এই মাঠ উপযুক্ত, এমনটা আয়োজকদের তরফে বলা হয়েছে।
ঘটনা যাই হোক, বিসিসিআইয়ের এই ভেন্যু বাছাই ফের একবার প্রশ্নের মুখে পড়ল এই ঘটনায়।