সব সংঘাতের যেন মধুর পরিসমাপ্তি। দিল্লি মিলিয়ে দিল দুই ক্রিকেটারের ব্যক্তিত্বের সংঘাতকে। জসপ্রীত বুমরার অনবদ্য বোলিং কিংবা রোহিত শর্মার বিধ্বংসী ব্যাটিং নয়, ভারত বনাম আফগানিস্তান ম্যাচের সেরা মুহূর্ত হাজির হল ভারতীয় ইনিংসের ২৬তম ওভারে। রশিদ খান আউট করে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মাকে। তারপরেই ব্রেক নেওয়া হয়।
সেই বিরতিতেই মন মাতিয়ে দেওয়া দৃশ্য। নভিন উল হক এবং বিরাট কোহলি দুজনে আলিঙ্গনাবদ্ধ হলেন। সরিয়ে দিলেন আইপিএল সময়ের কুৎসিত সংঘাত। প্ৰথমে হালকা করে করমর্দন, তারপর পিঠ চাপড়ে দেওয়া- কোহলি তারপর জড়িয়ে ধরলেন আফগান পেসারকে। ফুলস্টপ পড়ে গেল সমস্ত দ্বন্দ্বের।
ভারত বনাম আফগানিস্তান ম্যাচের ব্লকবাস্টার এই মুহূর্তের জন্যই যেন অপেক্ষা করছিল ক্রিকেট মহল। আইপিএলে কোহলি-কাণ্ডের পরেই নভিন মাঠেই কোহলি ভক্তদের ব্যারাকিংয়েরে মুখে পড়েছিলেন। বুধবার কোহলির নিজের শহরে আরও একবার 'কোহলি, কোহলি' ধ্বনি তুলেছিলেন সমর্থকরা। অপদস্থ হওয়ার হাত থেকে বাঁচান কোহলিই। দর্শকদের কোহলি অনুরোধ করেন, যেন নভিনকে উত্যক্ত না করা হয়। যে ঘটনা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে একইভাবে স্মিথকে দর্শকদের ব্যঙ্গের হাত থেকে কোহলির বাঁচানোর অতীত-ঘটনা।
আইপিএলের সেই ঘটনার পাঁচ মাস অতিক্রান্ত। লখনৌ সুপার জায়ান্টস বনাম আরসিবি ম্যাচ চলাকালীন দুই দলের ক্রিকেটাররা ফুটবল মাঠের স্টাইলে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। যাতে নাম জুড়ে যায় বিরাট কোহলি, নভিন উল হক, কাইল মায়ার্স, এমনকি গৌতম গম্ভীরের নাম-ও। পুরো ঘটনার সূত্রপাত নভিন উল হক এবং বিরাট কোহলির করমর্দনের সময়। কাইল মায়ের্স যখন বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কথা বলছিলেন কোহলির সঙ্গে সেই সময় গম্ভীর আবার সরিয়ে দেন ক্যারিবীয় তারকাকে। কোহলি প্ৰথমে গম্ভীরকে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন কাঁধে হাত দিয়ে। তবে তারপরেই পরিস্থিতি বিশ্রী দিকে মোড় নেয়।
সেই অপ্রীতিকর ঘটনার শেষে দুই তারকাই সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অন্যকে নিশানা করেছিলেন। ম্যাচ এবং ম্যাচের পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ কোহলি টেনে নিয়ে গেলেন মাঠের বাইরেও। ম্যাচের পরেও আরসিবি ভিডিওয় কোহলি নতুন করে ইন্ধন জুগিয়ে বলে দিলেন, “মধুর একটা জয়। যদি তুমি দিতে পারো, তাহলে নিতেও প্রস্তুত থেকো। নাহলে দিতে যেও না।” তারপর ইন্সটা-য় লিখে দিলেন, “আমরা যেসব শুনি সেসব ফ্যাক্ট নয়, স্রেফ কারোর মতামত মাত্র। আমরা যা দেখি, তা সত্যি নয়, একটা দৃষ্টিভঙ্গির অংশ মাত্র।”
পাল্টা একাধিকবার কোহলিকে নিশানা করেন আফগান তারকা। কখনও আম-এর ছবি পোস্ট করে, কখনও আবার গম্ভীরকে GOAT বলে কোহলিকে ইঙ্গিতপূর্ণ নিশানা করেন। বিস্ফোরকভাবে পোস্ট করেছিলেন গাধা এবং বাঘের তর্কাতর্কি করার ভিডিও। সেই ভিডিওর শেষে লেখা ফুটে উঠতে দেখা যায়, “বোকা এবং উন্মাদ যে বাস্তব, সত্যিটা মানতে চায় না, স্রেফ নিজের মনগড়া কল্পনা, বিশ্বাসের জয় দেখে, তাঁর সঙ্গে তর্ক করা স্রেফ সময়ের অপচয়। এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছে, যাঁদের সামনে যতই তথ্য হাজির করা হোক না কেন, তাঁদের বোঝার দক্ষতার বাইরে। অনেকে আবার অহং, ঘৃণা, প্রতিশোধস্পৃহতায় অন্ধ হয়ে থাকে। নিজের ভুল না হলেও সবসময় তারা চায় তাঁরাই যেন ঠিক হয়।”
বিবিসি পুশতু-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নভিন বলে দেন, “ম্যাচরর সময় এবং ম্যাচের পরে ওঁর মোটেই এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। আমি মোটেই ঝামেলার সূত্রপাত করিনি। ম্যাচের শেষে সৌজন্য করমর্দনের সময় কোহলি লড়াই শুরু করে। আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন আমি এমন পরিস্থিতি কীভাবে সামলাই। ব্যাট করার জন্য হোক বা ম্যাচের পর মেজাজ কখনই হারাইনা আমি। ম্যাচ শেষে কী করেছি, সেটা সবাই দেখেছে। আমি করমর্দন করছিলাম। তবে কোহলি জোর করে আমার হাত চেপে ধরে। মানুষ হিসাবে এরপরে আমিও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি।”
ঘটনা হল, এসব তিক্ত স্মৃতি আপাতত অতীত। দুজনেই বন্ধু হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। প্রকাশ্যে বিশ্বকাপের মঞ্চে। কোহলি-নভিনের মিলনান্তক দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন লখনৌ সুপার জায়ান্টস মেন্টর গৌতম গম্ভীর। তিনি ছিলেন কমেন্ট্রি বক্সে। তিনি জানালেন, "প্রত্যেক ক্রিকেটারের নিজের জন্য রুখে দাঁড়ানোর অধিকার রয়েছে। কোন দেশ থেকে ক্রিকেটার আসছে, সেটা বড় বিষয় নয়, নিজের জন্য দাঁড়ানোর অধিকার থাকা উচিত সকলের। তবে মাঠের লড়াই মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। মাঠের বাইরে যেন সেই লড়াই না ছড়িয়ে পড়ে।"