হিতে বিপরীত হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজি। মিরপুরে কুৎসিত ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের কৌশল করেছিল বাংলাদেশ। তবে ধানক্ষেত পিচে নিউজিল্যান্ড কোনওরকমে ৪ উইকেটে জিতে বাংলাদেশকে সবক শিখিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের সেই পিচ স্ট্র্যাটেজিই এবার আইসিসির দরবারে। মঙ্গলবার আইসিসির তরফে রীতিমত প্রেস বিবৃতিতে বলে দেওয়া হল, মিরপুরের পিচ অসন্তোষজনক। আইসিসির ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন দুই দলের অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করে আইসিসির দফতরে পিচ রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। সেখানেই পিচ নিয়ে নেতিবাচক বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি। এই প্রেক্ষিতে মিরপুর ভেন্যু হিসাবে এক ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ করা হল।
কী বলা হয়েছে ডেভিড বুনের রিপোর্টে?
ডেভিড বুন জানিয়েছেন, "আউটফিল্ড বেশ ভালো ছিল। বৃষ্টির পরেও খেলতে সমস্যা হয়নি। তবে পিচ কিছুটা আন্ডার প্রিপেয়ার্ড ছিল। পিচের বাঁধুনি মোটেই শক্ত ছিল না। প্ৰথম দিন ঘাসের ক্লিপিংস দিয়ে আটকানো ছিল। প্রথম সেশন থেকে গোটা ম্যাচ জুড়েই বলের বাউন্স ধারাবাহিক ছিল না। বল ল্যান্ড করার সময়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পিচ ভেঙে যাচ্ছিল। স্পিন বোলারদের বল অনেক সময়েই ব্যাটাররা ফ্রন্ট ফুটে খেলার সময় কাঁধের ওপর উঠে যাচ্ছিল। আবার বল অনেক সময় নিচু হচ্ছিল।
পুরো বিষয়টি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। আইসিসির এই রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন তাঁরা ১৪ দিনের মধ্যে আবেদন করে।
কী ঘটেছিল?
তিনদিনেই খতম হয়ে গিয়েছিল মিরপুর টেস্ট। চারদিন খেলা হলেও দ্বিতীয় দিন বৃষ্টির কারণে এক বল-ও খেলা গড়ায়নি। মিরপুরে মাত্র তিন দিনের মধ্যে সমাপ্ত হয়ে যাওয়ার পর আলোচনায় উঠে এসেছে সেই কেন্দ্রের পিচ। এমনিতেই ক্রিকেট মহলে মিরপুরের পিচকে ‘ধানক্ষেত’ বলা হয়। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিততে মরিয়া হয়ে সেই পিচেই কারিকুরি ঘটানোর অভিযোগ উঠে গেল। বনবন ঘূর্ণি পিচে প্রথম দিনেই ১৫ উইকেটের পতন ঘটেছিল। দুই দলের স্পিনাররা গোটা টেস্টের ৩০ উইকেট শিকার করেছেন। এর মধ্যে কিউই স্পিনার আজাজ প্যাটেল দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ৯ উইকেট। খেলা হয়েছে মাত্র ১৭০ ওভার। ম্যাচের ফয়সালা হয়ে গিয়েছে মাত্র ১০৬৯ বলে।
ম্যাচ জিতে উঠে বাংলাদেশের পিচ নিয়ে সমালোচনা করতে ছাড়েননি কিউই অধিনায়ক টিম সাউদিও। বলে দিয়েছিলেন, “এই উইকেট বহুভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। মাত্র ১৭০ ওভারেই ম্যাচ খতম হয়ে যাওয়াতেই পর্যাপ্ত প্রমাণ মিলেছে। পিচ মোটেই ভালো ছিল না। ব্যাট এবং বলের মধ্যে লড়াই মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। গোটা কেরিয়ারে যত উইকেটে খেলেছি। তার মধ্যে এটাই সম্ভবত নিকৃষ্টতম পিচ। আবার-ও বলছি, ব্যাট-বলের লড়াইয়ে সুবিধা পেয়ে গেল বোলাররাই। এত কম ওভারে ম্যাচ খতম হয়ে যাওয়ায় তার-ই প্রতিফলন ঘটেছে। তবে তা সত্ত্বেও ছেলেরা যেভাবে জয় হাসিল করেছে, তা সত্যি প্রশংসনীয়।”
টিম সাউদি-ই নন শুধু, বাংলাদেশের স্পিন-স্ট্র্যাটেজিকে একহাত নিয়েছেন। কলঙ্কিত ম্যাচের পর হর্ষ ভোগলে বাংলাদেশকে সমালোচনায় ডুবিয়ে বলেছেন, “কখনও কখনও মাকড়শা নিজেদের জালেই জড়িয়ে যায়।”