বিশ্বকাপে ব্যাক-টু-ব্যাক দু'টো ম্যাচ হেরে দক্ষিণ আফ্রিকার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচটার কথা বলব। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টস জিতে ওদের বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটা আমি মানতে পারছি না। দক্ষিণ আফ্রিকা যদি প্রথমে ব্যাট করে ২৭০-৮০ রানও তুলে দিতে পারত তাহলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রীতিমত পরীক্ষায় পড়তে হতো।
বাংলাদেশকে কোনওভাবে অসম্মান না-করেই কথাটা বলছি। আগে বল করলে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে ওই ম্যাচে বেশ বেগ পেতে হতো। ওভালের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রথমেই ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা একটা বার্তা দিয়ে দিল ওদের ব্যাটিং নিয়ে। এবি ডিভিলিয়ার্সের অবসরের পর মিডল অর্ডার এখন ভঙ্গুর। শেষ দু'টো ম্যাচে সেটা প্রমাণিত।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ববন্দিত বোলিং লাইন আপে রয়েছেন কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, আন্দিলে ফেহলুকোয়াও ও ক্রিস মরিসের মতো নাম। প্রত্যেকেই প্রতিভাবান। কিন্তু ডেইল স্টেইনের অনুপস্থিতি ওদের ভোগাচ্ছে। পেস বোলিংয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার কেউ নেই। স্টেইনকে অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল দলটার। কিন্তু চোট আঘাতের জন্য স্টেইন বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছেন। তাঁর পরিবর্তে রাবাদাকেই পেস বিভাগের পুরোধার দায়িত্ব নিতে হবে। স্পিন বিভাগে কিন্তু ইমরান তাহির ছাড়া আর একজনও বিশ্বমানের বোলার নেই।
অন্যদিকে ভারতের কথা যদি বলি তাহলে প্রথমেই বলব, বিশ্বকাপের আগে ভারতের যা যা সমস্যা ছিল, তার পুরোটারই সমাধান হয়ে গিয়েছে। ওপেনিংয়ে রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ান ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে নিজেদের প্রমাণ করে দিয়েছেন।
দলের অ্যাকিলিস হিল ছিল চার নম্বর জায়গাটা। বিশ্বকাপে আসার আগে পর্যন্ত ভারত এই একটা বিষয় নিয়ে সন্দিহান ছিল। তারকাখচিত ব্যাটিং লাইন আপে চার নম্বরে কাকে নামানো হবে? কার্ডিফে সম্ভবত সেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছেন বিরাট কোহলি অ্যান্ড কোং। রাহুল সেঞ্চুরি করে উত্তরটা দিয়ে দিয়েছেন। বিরাটের অত্যন্ত পছন্দের খেলোয়াড় রাহুল। তিনি যদি এভাবে এই টুর্নামেন্টে খেলে দিতে পারেন, তাহলে চার নম্বর নিয়ে আর কোনও আলোচনাই হবে না। অন্যদিকে বিরাট আর এমএস ধোনি বিশ্বকে জানান দিয়েছেন, ওঁরা ফর্মে রয়েছে।
আমি চাইব আজ ভারত দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিন স্পিনারের (কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহাল ও রবীন্দ্র জাদেজা) মধ্যে থেকে কুলচাকে খেলাক। দক্ষিণ আফ্রিকা এমনিই স্পিন ভাল খেলতে পারে না। রিস্ট স্পিনারদের বিরুদ্ধে আরও সমস্যা হবে। শুধু ফাফ দু প্লেসি, জেপি ডুমিনি আর ডেভিড মিলার স্পিন খেলতে পারেন। আরেকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কুলচার রেকর্ডও যথেষ্ট ভাল।
চাইব ভারতের ওপেনিং স্পেলটা জসপ্রীত বুমরা আর বাংলার মহম্মদ শামি করুন। ভুবনেশ্বর কুমারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু ওঁকে ভীষণ সাদামাটা মনে হয়েছে আমার। হার্দিক পাণ্ডিয়া আর এমএস ধোনি শেষ দিকটায় হার্ড হিটিংয়ের চাপ সামলে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমার মনে হয় পাণ্ডিয়া তৃতীয় পেসারের কাজটাও করে দেবেন।
এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাই চাপে থাকবে। এবছর ওদের কাছ থেকে কারোর প্রত্যাশা ছিল না। ফলে ওরা মুক্ত মনে বিশ্বকাপ খেলতে পারত। কিন্তু পরপর দু'টো ম্যাচ হেরে নিজেরাই নিজেদের চাপে ফেলে দিয়েছে। অন্যদিকে কোহলিরা একদম ফুরফুরে মেজাজে খেলতে নামবে। প্রথম ম্যাচে অ্যাডভান্টেজ ভারত, চাপে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আজ ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে যে পাঁচটা দিকে আমার নজর থাকবে:
১) রোহিত-ধাওয়ানের দুরন্ত একটা শুরু
২) কোহলির অসাধারণ ব্যাটিং
৩) চাপমুক্ত ধোনিকে দেখতে চাই
৪) দক্ষিণ আফ্রিকার দীর্ঘদেহী পেসাররা যে কোনও পিচ থেকেই অতিরিক্ত বাউন্স আর গতি তুলে নিতে পারেন
৫) ফাফকে তাড়াতাড়ি প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠাতে হবে