Advertisment

লর্ডসে আজ ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বনাম নিউজিল্যান্ডের বোলিং

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার বিশ্বকাপ বিশেষজ্ঞ শরদিন্দু মুখোপাধ্যায় জানালেন, আজ কোন কোন বিভাগে থাকবে আলাদা করে নজর। দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটার আশা করছেন, একটা হাড্ডাহাড্ডি ফাইনালই দেখবে ক্রিকেটবিশ্ব।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ICC worldcup 2019 final preview by saradindu mukherjee:

লর্ডসে আজ ইংল্য়ান্ডের ব্য়াটিং বনাম নিউজিল্যান্ডের বোলিং

আর কয়েক'টা ঘণ্টা। তারপরেই বাইশ গজ পেয়ে যাবে একেবারে নতুন একটা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ইংল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডের মধ্যে কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে? শেষ হাসি কে হাসবেন, ইয়ন মর্গ্যান না কেন উইলিয়ামসন? রবিবাসরীয় মহারণের জন্য প্রস্তুত লর্ডস। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় ফাইনালের পূর্বাভাস দিলেন আমাদের বিশ্বকাপ বিশেষজ্ঞ শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়।

Advertisment

জেসন রয় আর জনি বেয়ারস্টোর জুটি কি আজ চাপে রাখবে নিউজিল্যান্ডকে?

ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ওপেনিং জুটিকে নিয়ে আলাদা করে কথা বলতেই হবে। তাঁরা চারটি পরপর শতরানের পার্টনারশিপ করেছেন এই টুর্নামেন্টে। সারা পৃথিবীকে জানান দিয়েছেন, তাঁদের উইকেট নেওয়ার পরেই ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারের দিকে তাকাতে পারবে প্রতিপক্ষ। একে অপরের এমন পরিপূরক হয়েছেন, যে কখনও বেয়ারস্টো ধরে খেললে, অসম্ভব আক্রমণাত্মক হয়ে যান রয়। আবার রয় আটকে গেলে বেয়ারস্টো পুষিয়ে দেন।

এরপর বলব জো রুটের কথা। আমার চোখে বিশ্বকাপের সেরা তিন নম্বর ব্যাটসম্যান। যিনি খেলাটাকে ধরতেও জানেন, আবার সময়মতো যে কোনও বোলারকে টার্গেট করে রানের গতি বাড়াতেও পারেন। ইংল্যান্ড ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে এতটাই শক্তিশালী যে, জস বাটলারের মতো প্লেয়ারকে ছয় নম্বরে রাখতে পারে তারা। যিনি নিজেই একজন ম্যাচ উইনার।

মাঝখানে অধিনায়ক মর্গ্যান রয়েছেন। বাঁ-হাতে ব্যাট করেন। দুদিকে রিভার্স সুইপ খেলে যে কোনও স্পিন আক্রমণকে ছত্রভঙ্গ করতে পারেন।

কী বলবেন ইংল্যান্ডের বোলিং লাইন-আপ নিয়ে?

আমার মতে এই বিশ্বকাপে বোলিং সেনসেশন জোফ্রা আর্চার। তাঁর গতি রয়েছে, সঙ্গে সুইং। অ্যাকিউরেসি নিয়ে গিয়েছেন অন্য পর্যায়ে। হাতে রয়েছে ইয়র্কার আর স্লোয়ারের মতো অস্ত্র। প্রতিটা দলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন অবলীলায়। আর্চারের দৌলতেই ইংল্যান্ডের পেস বোলিং বিভাগ যে এই বিশ্বকাপের সর্বশ্রেষ্ঠ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর্চারের সঙ্গেই বলব ক্রিস ওকসের কথা। অত্যন্ত অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। নতুন বলেই উইকেট তুলে নেন। যেটা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করে দেখালেন।

ওকসের ব্যাটিংও যে কতটা ভাল, সেটা পাঠকদের একবার মনে করিয়ে দিতে চাইব। কিছুদিন আগে ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে তিনি কিন্তু শতরান করেছিলেন। তিন এবং চার নম্বর পেসার হিসেবে রয়েছেন বেন স্টোকস ও মার্ক উড। স্টোকস বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। আর মার্ক উড এমন একজন খেলোয়াড় যাঁকে নিয়ে আলোচনা কম হয়, সেভাবে আলোকিত হন না তিনি। কিন্ত এই উডই ইংল্যান্ডের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বল করেন। পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, উড কীভাবে সতীর্থদের সাহায্য করেছেন। গতি, বাউন্সার, স্লোয়ার এবং ইয়র্কার। সবই মজুদ তাঁর অস্ত্রভাণ্ডারে।

আদিল রশিদ ঠিক সময় ফর্মে ফিরেছেন। আগে একটু শর্ট বল করছিলেন। কিন্তু এখন শুধরে নিয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের ড্রাইভ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। লেগস্পিন আর গুগলিটা মারাত্মক বিষাক্ত। রশিদের কল্যাণেই ইংল্যান্ড একজন মাত্র স্পিনার খেলানোর সাহস দেখাতে পেরেছে। যদি প্রয়োজন পড়ে, জো রুটও কিন্তু অফস্পিন বল করে দিতে পারেন।

ভারতকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের কি আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে? তাদের বোলিং কতটা ফারাক গড়ে দিতে পারে?

বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ভারতকে হারিয়ে অবশ্যই তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে। ওরা কিন্তু ছোট রানের মধ্যেই বিপক্ষকে বেঁধে রাখার ক্ষমতা রাখে। সেটা ভারতের বিরুদ্ধেই প্রমাণ করে দিয়েছে। ওদের বোলিংয়ের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসবে ট্রেন্ট বোল্টের নাম। হাতে সুইং আছে। লকি ফার্গুসনের হাতে আছে গতি। ম্যাট হেনরির সিম মুভমেন্ট। অবশ্যই দুজন অলরাউন্ডার - জিমি নিশাম এবং কলিন ডে গ্রান্ডহোম রয়েছেন।

নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং কি তাদের চিন্তায় রাখবে?

এই একটা জায়গায় কিউয়িরা কিন্তু ব্রিটিশদের থেকে পিছিয়ে আছে বলব। ওদের ওপেনাররা রান পাচ্ছেন না। ব্যাটসম্যান বলতে সেই কেন উইলিয়ামসন আর রস টেলর। তাঁরাই দলটাকে টানছেন। নিজেদের অভিজ্ঞতা আর ব্যাটিং নৈপুণ্য কাজে লাগিয়ে খেলে যাচ্ছেন। চাপের মধ্যে নিউজিল্যান্ড কিন্তু এই দুজনের দিকেই তাকিয়ে থাকছে। শেষের দিকে নিশামের মতো অলরাউন্ডাররা মাঝেমধ্যে জ্বলে উঠছেন। ফলে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ রয়েছে। ইংল্যান্ড ওদের এই দুর্বলতাটাকেই কাজে লাগাবে।

এর সঙ্গে একটা কথা বলব। নিউজিল্যান্ড যদি ২৮০-৩০০ রান করে দেয়, তাহলে ওরাও কিন্তু ইংল্যান্ডকে যথেষ্ট বেগ দেবে। ভুলে গেলে চলবে না, ইংল্যান্ড তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শেষরক্ষা করতে পারেনি। যদি নিউজিল্যান্ড বড় রান তুলে দেয়, তাহলে কিন্তু ওরাও ভেঙে পড়তে পারে চাপের মুখে। যে দলই হোক, টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে একটা ভাল রান করার চেষ্টা করবে। যদি না আবহাওয়া বাদ সাধে।

ম্যাচের এক্স-ফ্যাক্টর কী হতে চলেছে? কারা এগিয়ে থাকবে?

আমি বলব ইংল্যান্ডের ওপেনার বনাম নিউজিল্যান্ডের পেস বোলিং। একটা কথা বলব আবারও। চারটে ব্যাক-টু-ব্যাক ১০০ রানের পার্টনারশিপ করেছে রয়-বেয়ারস্টো জুটি। এটা কোনও ছেলেখেলা নয়। ওরা যে কোনও দলের বিরুদ্ধে যখন তখন জুটি বেঁধে ১০০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দিতে পারে।

একক বিশ্বকাপে এর আগে কোনও ওপেনিং জুটি চারটে শতরানের পার্টনারশিপ করেনি। আমরা ওপেনিং জুটি বলতে ভগবানের পর্যায় রাখি গর্ডন গ্রিনিজ-ডেসমন্ড হেইনজ, ম্যাথিউ হেডেন-অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে। তাঁদের রেকর্ডও ভেঙে ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন রয়-বেয়ারস্টো।

ওপেনিং জুটি ১০০ করে দিলে মিডল অর্ডারের চাপটা অনেকটা কমে যায়। এরপর রয়েছেন জো রুট আর মর্গ্যান। দেখতে গেলে পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা পরীক্ষিতই হন নি সেভাবে। নিউজিল্যান্ড যদি শুরুতেই ওপেনিং জুটিকে সরিয়ে দিতে পারে তাহলে কিন্তু ইংল্যান্ড চাপে পড়ে যাবে।

এর আগেও আমার কলামে একটা কথা বলেছি। যে রানই নিউজিল্যান্ড করুক না কেন, তার থেকে অতিরিক্ত ২০-৩০ রান বেশি ধরেই চলতে হবে ইংল্যান্ডকে। কারণ একটাই। নিউজিল্যান্ড বিশ্বের এক নম্বর ফিল্ডিং সাইড। অসাধারণ রানআউট আর দুর্দান্ত কিছু ক্যাচ আবারও দেখতে চলেছি আমরা। সেভাবেই কিন্তু ইংল্যান্ডকে এগিয়ে যেতে হবে।

তুল্যমূল্য বিচারে আমি ইংল্যান্ডকেই ৬০-৪০ এগিয়ে রাখব। যদিও বিশ্বকাপের ফাইনালে এভাবে কিছু বলা যায় না। তাহলে কপিল দেবের ভারত ওরকম ভয়ঙ্কর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারত না। তবুও পুরো দল হিসাবে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখব। ভারতকে হারানোর পর আর জেসন রয় দলে ফেরার পর কিন্তু ইংল্যান্ড দলটাই পুরো বদলে গিয়েছে।

আজ কিন্তু উইম্বলডন ফাইনালও, একই দিনে জোড়া মেগা ম্যাচ। কী বলবেন?

সত্যি বলতে, বিরাট ধন্ধে পড়ে গিয়েছি আমি। কোন দিকে চোখ রাখব বলুন তো! একই দিনে এরকম দুটো ম্যাচ। একদিকে বিশ্বকাপ ফাইনাল, অন্যদিকে আবার উইম্বলডন ফাইনালে রজার ফেডেরার আর নোভাক জকোভিচ মুখোমুখি। আমি রজারের বিরাট বড়মাপের ফ্যান। আরও একটা বিষয় হচ্ছে, লর্ডস থেকে অল ইংল্যান্ড কোর্টের দূরত্ব কিন্তু বেশি নয়। আমি ১৩ বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়েছি। বুঝতে পারছি ওখানে আজ আবহাওয়া ঠিক কীরকম! তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার পাঠকদের বলব, আপনারাও আমার মতো দুটো ম্যাচেই চোখ রাখুন। চ্যানেল পাল্টে পাল্টে টেনিস আর ক্রিকেটের মজা উপভোগ করুন।

England New Zealand Cricket World Cup
Advertisment