অস্ট্রেলিয়া: ২০৮/৩
ভারত: ২০৯/৮
মাত্র কয়েক দিন আগেই ফাইনালের মঞ্চে অভিশপ্ত হয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। বিশ্বকাপ হারের অন্যতম খলনায়ক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদব। আর ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে বেরিয়ে টি২০-র চেনা জগতে ফিরতেই রুদ্রমূর্তিতে সূর্যকুমার যাদব।
অধিনায়ক হিসেবে কেরিয়ার শুরু করলেন ব্যাটে ঝড় তুলে। দলকে জিতিয়ে। ফাইনাল হারের পর যে অভিশাপ কুড়িয়েছিলেন, সেই সমালোচকদের তিনি বুঝিয়ে দিলেন, চেনা ফরম্যাটে তিনিই বিশ্বের সেরা।
সূর্যের ঝড় যখন থামল ৪১ বলে ৮০ করে, ভারতের জয়ের জন্য তখন দরকার ছিল ১৪ বলে মাত্র ১৪। সেই ম্যাচই নড়বড়িয়ে ভারত হেরে বসার উপক্রম করেছিল। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৭ রান। যে পরিসংখ্যান শেষে দাঁড়াল ১ বলে ১ রানের। যেখান থেকে ম্যাচ বের করলেন রিঙ্কু সিং। শেষ বলে ছক্কা মেরে যিনি ভারতের মুখ রক্ষা করলেন। রিঙ্কুর ছক্কা অবশ্য গ্রাহ্য হল না। শন আবটের সেই বল নো হয়ে যাওয়ায়। রিঙ্কুর ছক্কার আগেই যে জয়ের রান উঠে গিয়েছিল।
শেষ ওভারে হল রুদ্ধশ্বাস নাটক। দরকার ছিল ৭ রান। প্ৰথম বলেই রিঙ্কু বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন। শেষ পাঁচ বলে জয়ের জন্য টার্গেট কমে দাঁড়ায় তিন রানের। দ্বিতীয় বলেও বাই হয়েছিল। এরপরে টানা তিনটে বলে ভারত উইকেট হারায়। চাপের মুখে অক্ষর প্যাটেল, রবি বিশ্নোই, অর্শদীপ সিং আউট হয়ে যায়। হঠাৎই করেই ভারতের নিশ্চিত জয়ের ম্যাচে সংশয়ের কালো মেঘ ঢেকে গিয়েছিল। তবে ষষ্ঠ বল নো বল এবং ছক্কা হওয়ায় ভারত থ্রিলারে বিজয়ী হয়ে মাঠ ছাড়ে।
২০৮ রান চেজ করতে নেমে ভারতের সূচনা মোটেই ভালো হয়নি। যশস্বী জয়সোয়াল ঝড় তোলার ইঙ্গিত দিলেও ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় রুতুরাজ গায়কোয়াডকে। দলের ভাইস ক্যাপ্টেন ফেরার পর পাওয়ার প্লে-তে আউট হয়ে যান যশস্বীও।
২২/২ হয়ে যাওয়ার পর ভাবা হয়েছিল বিশাল রানের টার্গেটের সামনে ভারত স্রেফ পিষে যাবে। তবে এরপরেই সেরা পার্টনারশিপ গড়ে যান ঈশান কিষান এবং অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। ঈশান শুরুর দিকে কিছুটা সংযত ছিলেন। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মারমুখী হয়ে ওঠেন। সূর্যকুমার নিজের চেনা টি২০'তে ফিরে স্ট্রোকের বন্যা বইয়ে দেন। ঈশান-সূর্যকুমারের মুম্বাইয়া পার্টনারশিপে ভারত ১১২ যোগ করে। দুজনের রান তোলার গতিতে ভারত ৯ ওভারেই স্কোরবোর্ডে সেঞ্চুরি করে ফেলেছিল।
বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাজেলউড, কামিন্সরা শরীর লক্ষ্য করে স্লোয়ার বাউন্সারে আটকে দিয়েছিলেন সূর্যকুমারকে। লেগ স্ট্যাম্পে নিজের হিটিং জোনে বল পেলে সূর্যকে থামানো অসম্ভব। সেই জন্যই শরীর থেকে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে অথবা শরীরে ভাসানো গতি কমিয়ে শর্ট বল সূর্যের হিটিংয়ের প্রতিষেধক। এই ট্যাকটিক্সেই বিশ্বকাপ ফাইনালে খাপ খোলার সুযোগ-ই পাননি স্কাই। তবে ভাইজ্যাগের পিচে সেই কৌশল কাজে এল না দুটো কারণে। প্ৰথমত নাথান এলিস, শন আবটরা কেউই হ্যাজেলউড, স্টার্কদের মত লাইন-লেন্থে নিখুঁত নন। দ্বিতীয়ত ভাইজ্যাগের পিচ-ও নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের মত মারণ-স্লো নয়। তাই সূর্যকে আটকানো গেল না এই কৌশলে।
সূর্য-ঈশানকে থামতে গিয়ে সংঘা, আবটরা বারবার অফ স্ট্যাম্প বরাবর বল করতে গিয়ে প্রচুর ওয়াইড করে বসলেন। ম্যাচের চাপ আলগা করে গেল যা অনেকটাই।
তবু ঈশান-সূর্যের ঝোড়ো হাফসেঞ্চুরি স্বত্ত্বেও ভারত প্রায় ম্যাচ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল শেষদিকে চাপের মুখে ১৪ রান তোলার ফাঁকে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলায়। তবে রিঙ্কু নিজের আইপিএল অভিজ্ঞতা সমেত ১৪ বলে ২২ রানে ফিনিশিং টাচ না দিলে সূর্যের নিখুঁত ইনিংস পূর্ণতা পেত না এদিন-ও। অধিনায়ক সূর্যকে আসলে আলো দিল কেকেআর তারকার ধোনি-সুলভ ফিনিশিং। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ-ই নেই।
তার আগে ভারতীয় বোলারদের তুলোধোনা করে জস ইংলিশ প্ৰথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে গিয়েছিলেন কেরিয়ারের। অজিরাও ভারতের রানের পাহাড়ে চাপা দিতে চেয়েছিল স্কোরবোর্ডে ২০৮/৩ তুলে। টসে জিতে সূর্যকুমার যাদব অধিনায়ক হিসেবে প্ৰথম ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন অজিদের।
বিশ্বকাপ খেলা একাধিক তারকাকে প্ৰথম একাদশ থেকে বিশ্রাম দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ স্মিথকে দিয়ে ওপেন করে ক্যাঙারুরা। ভালোই শুরু করেছিলেন তিনি। তবে স্মিথ একটু পরেই সংযত হয়ে যান অন্য প্রান্তে অন্য ওপেনার ম্যাথু শর্ট রবি বিশ্নোইয়ের শিকার হয়ে ফেরার পর।
এরপরেই জস ইংলিশের সঙ্গে দুর্ধর্ষ পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন স্মিথ। তিনি শিট আঙ্করের ভূমিকা পালন করতে থাকেন। ২৯ বলে হাফসেঞ্চুরি করে বিধ্বংসী ব্যাটিং চালিয়ে যান ইংলিশ। দুজনে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৬ বলে ১৩০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। এর মধ্যে স্মিথের অবদান মাত্র ২৩ বলে ৩৬ রান। শেষমেশ স্মিথ ৪১ বলে ৫২ করে আউট হয়ে যান। এরপরে ইংলিশ ৪৭ বলে শতরান করে দ্রুততম অস্ট্রেলীয় হিসাবে টি২০ সেঞ্চুরি করেন।