বিশ্বকাপ ফাইনালের হারের জ্বালা কিছুটা মেটানোর জন্য অজিদের চুনকামের স্বপ্ন দেখেছিল ভারত। প্ৰথম দুই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে বধ করে সেই ইচ্ছার সলতে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন ঈশান কিষান, সূর্যকুমার যাদবরা। তবে সেই স্বপ্নে একাই জল ঢেলে দিলেন ম্যাক্সওয়েল।
হারা ম্যাচ নিজে দায়িত্ব নিয়ে জিতিয়ে দিলেন দলকে। ভারত রুতুরাজ গায়কোয়াডের রেকর্ড শতরানে ভর করে ২২২ তুলে দিয়েছিল স্কোরবোর্ডে। সেই রান চেজ করতে বসে অস্ট্রেলিয়া একসময় ১৩৪/৫-এ ধ্বসে যায়। আস্কিং রেট তখনও পাহাড় ছোঁয়া। সেই চাপ সামলে ম্যাক্সওয়েল ডুবিয়ে দিলেন ভারতের তরুণ বোলারদের।
৫ উইকেট চলে যাওয়ার পর ক্রিজে স্বীকৃত শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। সেই ওয়েডকে নিয়েই ম্যাচ বের করলেন ম্যাক্সওয়েল। অবিশ্বাস্যভাবে। ফিরিয়ে আনলেন বিশ্বকাপে আফগান ম্যাচের স্মৃতি।
সেই ম্যাচে আফগান বোলারদের যাবতীয় স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছিলেন পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে। তবে সেইদিন আস্কিং রেটের চাপ সামলাতে হয়নি। মঙ্গলবার পায়ে ক্র্যাম্প নয়, তবে আস্কিং রেট যত চড়চড় করে বাড়ছিল, ততই রোমাঞ্চকর আবহের জন্ম দিয়ে যাচ্ছিল।
এই রোমাঞ্চ ছড়িয়েই ম্যাক্সওয়েল অজিদের সিরিজ হারের মুখ থেকে বাঁচিয়ে দিলেন।
ম্যাক্সওয়েল নিজে বল হাতে শেষ ওভারে ৩০ রান খরচ করে বসেছিলেন। সেই শাপমোচন যে ম্যাক্সওয়েল এভাবে করবেন রুদ্ধশ্বাসভাবে সেটা কে ভাবতে পেরেছিল।
ট্র্যাভিস হেড অজিদের রান তোলার ছন্দ তৈরি করে দিয়েছিলেন ১৮ বলে ৩৫ করে। তবে পরপর উইকেট হারিয়ে চাপ বেড়ে চলছিল অজিদের। চার থেকে সাত নম্বর ওভারের মধ্যেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে অজিরা। রবি বিশ্নোই এবং আবেশ খান মিডল ওভারে অজি ব্যাটিং লাইন আপের ওপর রাশ টেনে ধরেছিলেন।
তবে ম্যাক্সওয়েল একাই নামার পর কুম্ভ হয়ে লড়াই চালিয়ে যান। শেষ ৩ ওভারে ৪৮ রানের বিশাল টার্গেট ছিল অজিদের সামনে। ১৮ত। ওভারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ মাত্র ৬ রান খরচ করে ম্যাক্সওয়েলকে রুখে দিয়েছিলেন প্রায়। তবে শেষ দু-ওভারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং অক্ষর প্যাটেল ম্যাচ বের করতে পারেননি। ১৯তম ওভারে অক্ষর প্যাটেল ২২ রান খরচ করে বসায় বাকি ২১ রান বাঁচানোর দায়িত্ব ছিল কৃষ্ণের ওপর। তবে ক্যাপ্টেন ওয়েড এবং ম্যাক্সওয়েল সেই রান চেজ করে যান তিনটে বাউন্ডারি, একটা ওভার বাউন্ডারি সমেত।
মাত্র ৪৭ বলে সেঞ্চুরি করে টি২০#তে অজিদের হয়ে দ্রুততম শতরান করে যান ম্যাক্সওয়েল। ভাঙেন চলতি সিরিজেই প্রথম ম্যাচে ৪৯ বলে শতরানকারী জস ইংলিশের দ্রুততমের রেকর্ড। মুছে দেন এই ম্যাচে রুতুরাজ গায়কোয়াডের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা প্ৰথম ভারতীয়ের কীর্তি।
তার আগে ওয়েড টসে জিতে গুয়াহাটিতে ইন্ডিয়াকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন। ভারতের শুরুটা মঙ্গলবার মোটেই ভালো হয়নি। সাততাড়াতাড়ি আউট হয়ে গিয়েছিলেন যশস্বী জয়সোয়াল এবং ঈশান কিষান। এরপরে ভারত ম্যাচে ফেরে রুতুরাজ এবং সূর্যকুমারের হাফসেঞ্চুরি পার্টনারশিপে ভর করে। দুজনে তৃতীয় উইকেটে ৪৭ বলে ৫৭ রানের জুড়ি গড়ে যান।
সূর্যকুমার আউট হয়ে যাওয়ার পর ভারতের ইনিংস পুরোটাই নিজের কাঁধে তুলে নেন রুতুরাজ। তিলক ভার্মার সঙ্গে দুর্ধর্ষ পার্টনারশিপ গড়ে। ঝড়ের গতিতে দুজনে নাস্তানাবুদ করে যান অজি বোলারদের। মাত্র ৫২ বলে রুতুরাজ-তিলক মিলে ভারতকে ১০০ রানের পার্টনারশিপ উপহার দিয়ে যান।
শেষ ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বল করতে এনেছিলেন ক্যাপ্টেন ম্যাথু ওয়েড। তবে রুতুরাজ ৩০ রান তুলে দেন সেই ওভারে।