ভারত: ১৮৬/১০
বাংলাদেশ: ১৮৭/৯
ভারত বনাম বাংলাদেশ মুখোমুখি হওয়া মানেই আজকাল থ্রিলার। রবিবার প্ৰথম ওয়ানডেতেও সেই রোমাঞ্চ হাজির হল ঢাকার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। যেখানে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ভারতকে কার্যত একাই হারিয়ে দিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ভারতের মুঠো থেকে জয় আলগা করে ম্যাচ ছিনিয়ে নিলেন বাংলাদেশি স্পিনার। টানটান লড়াইয়ে বাংলাদেশকে চোয়ালচাপা জয় এনে দিলেন মিরাজ। হাতে ১ উইকেট নিয়ে।
মিরাজ যখন ব্যাট করতে নেমেছিলেন, তখন বাংলাদেশ ১৮৭ রান তাড়া করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। স্কোরবোর্ডের লাল বাতি জানান দিচ্ছিল বাংলাদেশ ১২৮/৬। কিছুক্ষণ পরেই সেই স্কোর দাঁড়ায় ১৪৬/৯-এ। খাদের কিনারা থেকে এগারো নম্বরে ব্যাট করতে নামা মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গী করে মিরাজ বাংলাদেশকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন। শের-ই-বাংলার শের হয়ে উঠলেন তিনি। বল হাতে সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি। তা পুষিয়ে দিলেন ব্যাট হাতে।
ভারত মাত্র ১৮৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ঢাকার মাঠে ইন্ডিয়াকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন মহম্মদ সিরাজ, ওয়াশিংটন সুন্দররা। টু-পেসড উইকেট। এমন পিচে স্ট্রোক প্লেয়ারদের কাছে কার্যত মূর্তিমান বিভীষিকা। এমন পিচেই মহম্মদ সিরাজ এবং ওয়াশিংটন সুন্দর শান্ত এবং আনামুল হককে আউট করে বাংলাদেশের গলা চিপে ধরেছিলেন।
আরও পড়ুন: একেবারেই বাদ পন্থ! বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্ৰথম ODI-এর আগে বিষ্ফোরক ঘোষণা BCCI-এর
কার্যত হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেছিল অধিনায়ক লিটন দাস এবং সাকিব আল হাসানের ব্যাটে ভর করে। দুজনে তৃতীয় উইকেটে ৪৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসিয়ে দিয়েছিলেন। তবে লিটন (৪১), সাকিব (২৯)কে অল্প সময়ের ব্যবধানে ফিরিয়ে ভারতকে ফের সামনের আসনে নিয়ে আসেন ওয়াশিংটন সুন্দর। দুই সেট ব্যাটসম্যান ফিরে যাওয়ার পরে ফের দমবন্ধ অবস্থায় পড়ে যায় বাংলাদেশ।
সাকিবের উইকেট অবশ্য যত না সুন্দরের, তার থেকেও বেশি কোহলির। বৃত্তের মধ্যে ফিল্ডিং করছিলেন কোহলি। সুন্দরের বল হালকা হাওয়ায় রেখে ড্রাইভ করেন সাকিব। তবে বাজপাখির মত ক্ষিপ্রতায় ডান দিকে ঝাঁপিয়ে অবিশ্বাস্য ক্যাচ তালুবন্দি করেন কোহলি। এরপরে মুশফিকুর, মাহমুদুল্লাহ, আফিফ হোসেন ফিরে যাওয়ার পরে বাংলাদেশ খাদের কিনারায় চলে যায়। এবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
আরও পড়ুন: খাবার নেই, খিদে পেটেই যেতে হল বাংলাদেশ! ঢাকায় নেমেই বিষ্ফোরক অভিযোগ চাহারের
এমন অবস্থাতেই ব্যাট হাতে রূপকথার ইনিংস খেলে গেলেন মেহেদি। ৩৯ বলে ৩৮ রানের রবিবারের ইনিংস কেরিয়ারের সম্ভবত সেরা হয়ে থাকল তাঁর। ১৩৬/৯ হয়র যাওয়ার ওর ভারতের জয় ছিল সময়ের অপেক্ষা। তবে এগারো নম্বরে ব্যাট করতে নামা মুস্তাফিজুরকে সঙ্গী করে যেভাবে বাংলাদেশকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন, তা-ও আবার ২৪ বল হাতে নিয়ে তা পদ্মাপাড়ের ক্রিকেটে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।
তার আগে গতি মন্থরতায় ভোগা পিচে ভারত ৪১.২ ওভারে মাত্র ১৮৬ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। সাকিব আল হাসান ঢাকার পিচে তুর্কি নাচন নাচালেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। ১০ ওভারে মাত্র ৩৬ রানের বিনিময়ে দখল করলেন ৫ উইকেট। এবাদত হোসেনও ৪ উইকেট নেন।
আরও পড়ুন: একহাতে বাজপাখি, অবিশ্বাস্য ক্যাচে জন্টিকে মনে করালেন কোহলি, দেখুন রুদ্ধশ্বাস ভিডিও
টসে জিতে ভারতকে প্ৰথমে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন লিটন দাস। তবে ভারতের পাওয়ার প্লে-র কুখ্যাত ব্যাটিং যেন কাটিয়ে ওঠার নয়। টি২০’তে কেএল রাহুল-রোহিত শর্মার জুটির বদলে ওয়ানডেতে ভারতের ইনিংসের ওপেনার রোহিত-ধাওয়ান। শুরুর জুটিতে উঠল মাত্র ২৩ রান। সেখান থেকে ১০ ওভার কাটতে না কাটতেই ভারত ৪৯/৩ হয়ে যায় বিরাট (৯), রোহিতকে (৩১ বলে ২৭) হারিয়ে। এরপরে কেএল রাহুল (৭০ বলে ৭৩), শ্রেয়স আইয়ারের (৩৯ বলে ২৪) চতুর্থ উইকেটে ৪৩ রানের পার্টনারশিপ বাদে ভারতীয় ইনিংসে বলার মত কিছু নেই। ভারতীয় ইনিংসে দুই অংকের রানে পৌঁছেছেন মাত্র দু-জন। এতেই প্রকট ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতা। শেষদিকে ওয়াশিংটন সুন্দর ৪৩ বলে ১৯ করে যান।
ভারতের প্ৰথম একাদশ: রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, কেএল রাহুল, ওয়াশিংটন সুন্দর, শাহবাজ আহমেদ, শার্দূল ঠাকুর, দীপক চাহার, মহম্মদ সিরাজ, কুলদীপ সেন