মাইকেল আওয়েনের সতীর্থ। ফুটবল শিক্ষা স্বয়ং আর্সেন ওয়েঙ্গারের কাছে। ফুটবল বিশ্বকাপের মূলপর্বে ওঠার আশা জাগিয়ে রাখতে হলে টিম ইন্ডিয়াকে আপাতত এই ব্যক্তির মগজাস্ত্রকে টেক্কা দিতে হবে। ক্রিকেটের দেশ বাংলাদেশে গিয়ে যিনি ফুটবল সংস্কৃতি ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। তা-ও আবার ক্রিকেটীয় মন্ত্রে। জেমি ডে বছর তিনেক বাংলাদেশের ফুটবল দলের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ফিফার এশিয়ান কোয়ালিফায়ারে নামার আগে যিনি জামাল ভুঁইয়াদের বারেবারেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তাঁর দেশ ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা।
অক্টোবরের ১৫ তারিখে সুনীল ছেত্রী, গুরপ্রীত সিং সাঁধুরা খেলতে নামছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আর সেই ম্যাচের আগে বাংলাদেশের ইংরেজ কোচ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে স্ট্র্যাটেজি ফাঁস করার ছলে জানাচ্ছেন, "ফুটবল কোচ হলেও দেশের প্রতিটি ক্রিকেট সিরিজ ফলো করি। বিশ্বকাপের পরেও অ্যাসেজেও ইংল্যান্ড দারুণ পারফর্ম করল। ছেলেদের বলছি, যে কোনও খেলায় মানসিক শক্তি অনেক ব্যবধান গড়ে দেয়। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স তুলে ধরছি ফুটবলারদের কাছে। বলছি, ওঁরা যদি ফেভারিট না হয়েও চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, তোমরাও পারবে।"
আরও পড়ুন মাদ্রিদ ফুটবলের বড় দায়িত্বে ইস্টবেঙ্গলের মারিও, সম্মান দিল ফিফাও
বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ইংল্যান্ডের পঞ্চম ডিভিশনের ক্লাব ব্যারো এফসি-র কোচ ছিলেন তিনি। দেশের ক্লাবে কোচিং করানোর মাঝেই বাংলাদেশের জাতীয় দলের কোচ হওয়ার সুযোগ আসে। আন্তর্জাতিক ফুটবলকে 'না' বলতে পারেননি। সটান চলে এসেছিলেন ফুটবল অখ্যাত দেশে। আর্সেনালে ট্রেনি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। যদিও প্রথম দলে কোনওদিন খেলার সুযোগ জোটেনি। হোয়্যাটসঅ্যাপে ব্রিটিশ কোচ ফেলে আসা দিনের প্রসঙ্গ উঠলে সাফ জানিয়ে দেন, "আমার পজিশনে ভিয়েরা, প্যেতি খেলত। ওদের পেরিয়ে কোনওদিন প্রথম একাদশে সুযোগ পাব, তা ভাবিওনি।" কোনও আক্ষেপ না রেখেই বলছিলেন তিনি।
এখনও গুরু মানেন আর্সেন-কে। গড়গড় করে বলে চলেছিলেন, "আর্সেন ফুটবলারদের মধ্যে দারুণ একটা কমফর্ম জোন তৈরি করতেন। আমি যেখানেই কোচিং করিয়েছি, সেখানেই ফুটবলারদের মধ্যে এই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।"
আরও পড়ুন ইস্টবেঙ্গল কিংবদন্তির নাতি মাতাচ্ছেন এশিয়া কাপ, বিশ্বক্রিকেটে নতুন বাঙালির উত্থান
সিনিয়র পর্যায়ে না হলেও ইংল্যান্ডের যুব পর্যায়ে নিয়মিত প্রথম একাদশে খেলতেন তিনি। রোনাল্ডিনহো-র বিপক্ষেও তাঁর পারফরম্যান্স ইংরেজ প্রচারমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল। বোর্নমাউথে খেলার সময় এডি হাউয়ের সহকারী জেসন টিন্ডালের সঙ্গে কম খরচে রুম ভাড়া করে থাকতেন। ব্রিটিশ ফুটবলের ঝকঝকে ঔজ্জ্বল্য থেকে আপাতত তিনি বর্ণহীন ফুটবল দুনিয়ার বাসিন্দা। মহাদেশ বদলে গেলেও প্রত্যয় অবশ্য এখনও অটুট মাইকেল আওয়েনের সঙ্গে জাতীয় দলের খেলা কোচের। একান্ত আলোচনায় বলছিলেন, "ভারত আমাদের থেকে এগিয়ে। তবে মাঠে আমাদের হারাতে ইন্ডিয়াকে বেশ কষ্ট করতে হবে। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই চালাবে বাংলাদেশের ফুটবলাররা।"
আরও পড়ুন কাঁধে ইঞ্জেকশন নিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে ‘ঐতিহাসিক উপহার’! শতবর্ষে ক্লাবই ভুলল সেই নায়ককে
জেমির বক্তব্য, "ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশের কাতারের বাধা সামলাতে হবে। আপাতত আমরা কাতার ম্যাচ নিয়েই ভাবছি। ওই ম্যাচে ভাল খেলে আত্মবিশ্বাস সংগ্রহ করাই আমাদের লক্ষ্য আপাতত। কাতারের বিরুদ্ধে ভারত দারুণ লড়াই উপহার দিয়েছে। তবে ওঁরা কিছুটা ভাগ্যেরও সহায়তা পেয়েছে।" কাতার ম্যাচে খেলতে পারেননি ক্যাপ্টেন-সুনীল। তবে জেমি ডে ভারতের প্রধান অস্ত্র ধরছেন সুনীলকেই। তিনি বলে দিচ্ছেন, "রক্ষণে সামান্যতম শিথিলতা হলেই সুনীল শাস্তি দেয় প্রতিপক্ষ দলকে। ওকে ধরেই আমাদের ট্যাকটিক্স তৈরি থাকবে।"
প্রথম বিশ্বের ফুটবল খেলিয়ে দেশের বাসিন্দা তিনি। তবে বাংলাদেশের ফুটবল সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়নি জেমি ডে-র। তবে বাংলাদেশে থাকলেও ভারতের ফুটবল নিয়ে নিয়মিত আপডেটস রাখেন। জেমি বলছিলেন, "কনস্টানটাইন ভারত ফুটবলকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর দেখানো পথেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন স্টিম্যাচ। সেই সঙ্গে আইএসএল ভারতীয় ফুটবলে চরম পেশাদারিত্ব আমদানি করেছে।"
বাঙালি ফুটবলাররা লড়বে যুবভারতীর ঘাসে। বাঙালি ফুটবলারদের হার দেখতেই আবার যুবভারতীতে মেক্সিক্যান ওয়েভ তুলবেন হাজার হাজার বাঙালি দর্শক। এমন অদ্ভূত বৈপরীত্যের কথা বিলক্ষণ জানেন জেমি ডে। তাই ব্রিটিশ কোচের স্বীকারোক্তি, "ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্ব আমার কাছে শেখার বহু অভিজ্ঞতা বয়ে আনছে। কলকাতায় মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল দর্শকদের দ্বৈরথ নিয়ে অনেক পড়েছি। তবে সেদিন তো ওরা একসঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে আওয়াজ তুলবে, তা-ই তো?"