Everyone should play domestic cricket: বোর্ডের সংকেত পেয়ে এবার ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি কয়েকজন ক্রিকেটারকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে নির্দেশ দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু, তাতে যদি কারও ধারণা হয়ে থাকে যে এই নির্দেশ কেবলমাত্র কয়েকজনকেই দেওয়া হয়েছে। তো সেটা ভুল। সবাইকেই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে। বোর্ডের অবস্থান স্পষ্ট করে এমনটাই জানিয়েছেন রোহিত।
বৃহস্পতিবার থেকে হিমাচলপ্রদেশের ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পঞ্চম তথা সিরিজের শেষ টেস্ট খেলতে নামবে ভারত। তার আগে বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক। সেখানেই তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কড়া বার্তা দেন। রাঁচিতে চতুর্থ টেস্ট জয়ের পর পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজ এখন ভারতের পকেটে। তারপরও ধর্মশালার টেস্ট ম্যাচকে টিম ইন্ডিয়া গুরুত্বহীন ভাবে দেখছে না। কারণ, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্ট বাড়াতে গেলে ভারতের এই পঞ্চম টেস্ট জেতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে টিম ইন্ডিয়া হায়দরাবাদের প্রথম টেস্ট হেরে যাওয়ায় পয়েন্টের বিচারে ভারতের বড় লোকসান হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক। আর, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার প্রসঙ্গ। কারণ, রাঁচি টেস্ট জয়ের পর রোহিত স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, দলে তাঁরাই জায়গা পাবেন, যাঁদের খিদে আছে। সেই সময় তাঁর এই মন্তব্যকে ঈশান কিষান ও শ্রেয়স আইয়ারের বিরুদ্ধে করা হয়েছে বলেই ধরা হয়েছিল। কারণ কিষান ও আইয়ার টিম ম্যানেজমেন্টের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে সেই সময় রঞ্জি খেলতে রাজি হচ্ছিলেন না বলেই খবর রটেছিল।
এরই দিন দুয়েক পরে কিষান ও আইয়ারকে চুক্তি থেকে বাতিল করে বিসিসিআই। সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড স্পষ্ট বার্তায় জানিয়ে দেয়, 'যে ক্রিকেটাররা জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন না, তাঁদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে।' বিসিসিআইয়ের সেই কথাই পঞ্চম টেস্ট ম্যাচের আগে রোহিতের মুখে শোনা গেল। বুধবার এনিয়ে ভারত অধিনায়ক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, 'এনিয়ে অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছে। যখন খেলোয়াড়রা ফাঁকা থাকবেন, তখন তাঁদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে। যদি মেডিকেল টিম তাঁদের বিশ্রাম নিতে বলে, কেবলমাত্র তবেই তাঁরা ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নেবেন না। কিন্তু যদি ফাঁকা থাকেন, আর ফিট থাকেন, তবে খেলতে হবে। এটা শুধুমাত্র কয়েকজনের ব্যাপার না। এটা সবার জন্যই একইরকম ব্যাপার।'
বিষয়টা যে স্রেফ কথার কথা নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়ে রোহিত বলেন, 'আমি নিজে তো মনে করি যে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সপ্তাহেই রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনাল ছিল। আমি মুম্বই-তামিলনাড়ুর খেলা দেখেছি। আজকেও একটা খুব ভালো খেলা হয়েছে, বিদর্ভ জিতেছে। যখন এসব খেলা হয়, প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজেকে উজাড় করে দেয়। ঘরোয়া ক্রিকেটই আমাদের প্রধান। তাই আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি।'
ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে মুখ খোলার পাশাপাশি সাংবাদিক বৈঠকে বাজবল প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন রোহিত। ইংল্যান্ড কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকস তাঁদের আক্রমণাত্মক ধাঁচে খেলার নাম দিয়েছেন 'বাজবল'। হায়দরাবাদে ভারত প্রথম টেস্ট হারতেই বাজবল নীতিকেই জয়ের মূল কারিগর হিসেবে তুলে ধরেছিলেন ইংল্যান্ডের কোচ ও অধিনায়ক। বুধবার তা নিয়ে কার্যত কটাক্ষেরে সুরেই রোহিত জানিয়ে দেন, 'বাজবল ঠিক কী, আমি জানি না।' হায়দরাবাদের ওই টেস্টের পর ইংল্যান্ডকে কার্যত দুরমুশ করে পরবর্তী তিনটি ম্যাচ জিতে নিয়েছে টিম ইন্ডিয়া।
কার্যত সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেই রোহিত বলেন, 'সত্যি বলছি, বাজবল মানেটা যে কী, আমি জানি না। এর মানে এগিয়ে গিয়ে মারা? নাকি সুযোগের জন্য অপেক্ষা করা? কারণ, আমি এখানে কাউকে বিরাট কিছু করতে দেখিনি। আমি তাই সত্যিই জানি না, এই শব্দটার মানে কী? তবে, একটা ব্যাপার পরিষ্কার, ওরা এখানে আগে যেমন খেলেছিল, এবার তার চেয়ে ভালো খেলছে।' এই প্রসঙ্গে ইংল্যান্ড ক্রিকেটার বেন ডাকেটকে কটাক্ষও করেন রোহিত। যশস্বী জয়সওয়াল যখন রাজকোটে ডবল সেঞ্চুরি করার পথে, তখন ইংল্যান্ডের বেন ডাকেট বলেছিলেন যে যশস্বী আসলে ইংল্যান্ডের বাজবল নীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে বুধবার রোহিত বলেন, 'আমাদের দলে ঋষভ পন্থ নামে একজন ছিল। ডাকেট আসলে মনে হয়, তাঁকে ব্যাট করতে দেখেনি। ওই জন্যই ওসব বলেছে।'
রোহিতের এমন সোজাসাপটা কথাবার্তা আর খেলার মাঠে দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব, যার জেরে একের পর এক সাফল্য, এসব দেখে মুগ্ধ অনেকেই। দলে বিরাট কোহলির মত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নেই। সেখানেও অধিনায়ক রোহিতের বাহিনী বুঝতে দেয়নি যে বড় কোনও অভাব আছে। উলটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে। সেই প্রসঙ্গেও বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে ভারত অধিনায়ক মুখ খুলেছেন।
আরও পড়ুন- পাকিস্তান ক্রিকেটে এবার ঢুকে গেল পাক সেনা! বিতর্কিত ফতোয়া দিল পিসিবি
রোহিত বলেন, 'আমি স্কুলে বেশি লেখাপড়া করিনি। কিন্তু, এখানে অনেক করছি। আমি যখনই ভারত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি, আমার প্রথম কাজ নিজের দল আর বিপক্ষের দলটাকে বোঝা। পুরো দল নেই, তাই ভালো খেলতে পারিনি, এটা কোনও অজুহাত হতে পারে না। আমার যা আছে, তাই দিয়েই প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। এই সিরিজ থেকে আমি নিজেও অনেক কিছু শিখেছি।'