BCCI India Cricket Full Squad against England: অনেক প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে শুক্রবার রাতের দিকে। বোর্ডের তরফে ইংল্যান্ড সিরিজের (India vs England test series) জন্য যে দল ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে রয়েছে একাধিক অপ্রত্যাশিত চমক। মহম্মদ শামি (Mohammed Shami) যে চোটের জন্য প্ৰথম দুই টেস্টে খেলবেন না, সেটা জানা ছিল। তবে ঈশান কিষানকে যে আরও একবার ব্রাত্য করে দেওয়া হল, সেটা ভাবা যায়নি। ঘরের মাঠে অশ্বিন-জাদেজাদের বিপক্ষে প্রতিষ্ঠিত কিপারের প্রয়োজন ছিল। কেএস ভরত ব্যাটিংয়ের জন্যই দলের ফার্স্ট চয়েস কিপার নন। কেএল রাহুল ঘূর্ণি পিচে কতটা কিপিং করতে পারবেন, সেই দক্ষতায় প্রশ্ন ছিল। তবে ঈশানের সঙ্গে বোর্ড নিজেদের ইগোর লড়াই জারি রাখল। বাতিল-ই করা হল ঈশান কিষানকে।
আর ঈশানের বদলি হিসাবেই টিমে নেওয়া হলে ধ্রুব জুরেলকে (Dhruv Jurel)। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধ্রুব সাড়া ফেলে দেওয়ার পরেই ইন্ডিয়া-এ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন আগেই। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও খেলে এসেছেন। ইংল্যান্ড লায়ন্স-এর বিপক্ষে ইন্ডিয়া-এ স্কোয়াডেও রেখে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সেই ২২ বছরের তরুণ তুর্কির ওপরেই বাজি ধরলেন নির্বাচকরা।
রঞ্জিতে ধ্রুব জুরেলের আত্মপ্রকাশ ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে। সেই বছরেই ডিসেম্বরে নাগাল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪৯ রান করে যান তারকা। সবমিলিয়ে ১৫টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে ধ্রুব জুরেল ৭৯০ রান করেছেন, ৪৬.৪৭ গড়ে। একটা সেঞ্চুরির পাশাপাশি পাঁচটা হাফসেঞ্চুরিও রয়েছে। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের জার্সিতে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে গত সিজনেই নজর কেড়েছিলেন। আইপিএলে অভিষেকও ঘটে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে।
ঘরোয়া স্তরে পারফর্ম করার সুবাদেই ইন্ডিয়া-এ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের তরুণ তারকাকে। প্ৰথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে গেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ঝকঝকে ৬৯ রান করে যান তিনি। চলতি সিজনের রঞ্জিতে কেরালার বিপক্ষে নেমেই হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন।
আইপিএলে ২০২৩ ধ্রুব জুরেলের ব্রেক থ্রু সিজন। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ১৩ ম্যাচে ১৫২ রান করেছেন ২১.৭১ গড়ে। স্ট্রাইক রেট আকর্ষণীয় ১৭২.৭৩। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর ছিল ৩৪ নট আউট। পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে রাজস্থানের শেষদিকে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩০ বলে ৭৪ রান। ধ্রুব মারকাটারি ইনিংসে ১৫ বলে ৩২ করে যান। তবে রাজস্থান জিততে পারেনি। মাত্র ৫ রান হার হজম করলেও সকলের নজরে পড়ে যান ধ্রুব জুরেল। আইপিএল নিলামে রাজস্থান রয়্যালস বেস প্রাইস ২০ লক্ষ টাকায় ধ্রুবকে কিনেছিল।
ধ্রুব জুরেলের ভারতীয় ক্রিকেটের মুলস্রোতে জায়গা করে নেওয়া অনুপ্রেরণা যোগাবে অনেককেই। জাতীয় দলের টেস্ট স্কোয়াডে নির্বাচিত হওয়ার পর ধ্রুব দৈনিক জাগরণ-কে জানিয়েছেন, "আর্মি স্কুলে পড়তাম। ছুটির সময় হঠাৎ আগ্রায় একলব্য স্টেডিয়ামের ক্রিকেট ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার ভূত মাথায় চাপে। ফর্ম ফিল আপ করেও বাবাকে জানায়নি। জানতে পেরে পরে আমাকে অনেক বকাবকিও করেন। তবে উনি ৮০০ টাকা ধার করে আমাকে একটা ব্যাট কিনে দেন। ওঁকে যখন বলি আমার ক্রিকেট কিট দরকার, উনি জানতে চান, কত টাকার প্রয়োজন। ৬-৭ হাজার শোনার পর ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে দিতে বলেন উনি। তবে আমি ক্রিকেট খেলার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলাম। বাথরুমে নিজেকে লক করে কাঁদছিলাম। তারপর মা নিজের সোনার চেন বিক্রি করে ক্রিকেটীয় সরঞ্জাম কিনে দেন।"
আবেগি হয়ে ধ্রুব জুরেল আরও জানিয়েছেন, "আমার বন্ধুরাই আমাকে জানায় আমি জাতীয় দলে নির্বাচিত হয়েছি। আমি পরিবারকে জানাই, আমি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। ওঁরা জিজ্ঞাসা করেন কোন জাতীয় দল। বলি, রোহিত-বিরাটদের টিম ইন্ডিয়া। শুনে সকলেই আবেগি হয়ে পড়েন।"