ইংল্যান্ড: ২৪৬/১০ এবং ৪২০/১০
ভারত: ৪৩৬/১০ এবং ২০২/১০
England test tour to India: ব্রিসবেন এবং হায়দরাবাদ- গুগল ম্যাপের হিসাবে দূরত্ব ৯৪৫০ কিমি। দূরত্ব যাই থাকুক, রবিবার ভারত-অস্ট্রেলিয়ার দুই শহরকে পাশাপাশি বসিয়ে দিল ক্রিকেটের চরমতম রোমাঞ্চ। টেস্ট ক্রিকেটের অত্যাশ্চর্য থ্রিলার একই বন্ধনীতে বসিয়ে দিল দুই শহরকে।
গাব্বায় অস্ট্রেলিয়ার দর্প যেমন চূর্ণ করলেন মাত্র এক টেস্ট আগে অভিষেক ঘটা শামর জোসেফ। তেমন হায়দরাবাদে ভারতকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করলেন হায়দরাবাদেই অভিষেক হওয়া স্পিনার টম হার্টলে। শামরের মতই হার্টলেও ভারতের গরিমায় কালি ছিটিয়ে দিলেন ৭ উইকেট দখল করে।
প্রথম ইনিংসে গনগনে যশস্বীর ব্যাটের মুখে পড়ে গিয়েছিলেন। টি২০-র মেজাজে রান খরচ করতে হয়েছিল। ইংল্যান্ড কেন অনভিজ্ঞ স্পিনারের ওপর এমন বড় ট্যুরে ভরসা রাখল, প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। তবে ল্যাংকশায়ারের স্পিনার সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে। ভারতকে ল্যাজে গোবরে করে টেস্ট হারের স্বাদ উপহার দিলেন। রেহান আহমেদ এবং উইল জ্যাকসের পর তৃতীয় ইংরেজ স্পিনার হিসাবে বেন স্টোকসের নেতৃত্বে অভিষেকেই ইনিংসে পাঁচ উইকেটের নজির স্থাপন করলেন হার্টলে।
শনিবার অলি পোপ যখন ব্যক্তিগত দুশো রানের আশা জাগিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন, তখনও ভাবা যায়নি ভারত হায়দরাবাদ টেস্ট হারবে। তবে তৃতীয় দিনের শেষে ৩১৬/৬ থেকেই ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে শেষমেষ তুলে দিল ৪৩৬ রান। শেষ ৪ উইকেটে ১২০ রান যোগ করে ইংল্যান্ড রবিবার ফার্স্ট সেশনেই ম্যাচের ভাগ্য কিছুটা চূড়ান্ত করে দেয়। রেহান আহমেদের (২৮) সঙ্গেই ব্যাট হাতে লোয়ার অর্ডারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যান বল হাতে নায়ক টম হার্টলেও। তিনি অলি পোপের সঙ্গে ৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে গেলেন। নিজেও ৩৪ রান যোগ করলেন। পোপ যখন বুমরার বলে আউট হলেন ঠিক দ্বিশতরানের আগে, তখন ম্যাচের ভাগ্য যেন ফয়সালাই হয়ে গিয়েছে।
অলি পোপ অবিশ্বাস্য জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই মঞ্চেই ভারত বধের মূল হোতা হিসাবে বল হাতে আবির্ভাব ঘটালেন হার্টলে। স্বপ্নের অভিষেকে ধ্বংস করে দিলেন ভারতের বহু চর্চিত ব্যাটিং লাইন আপকে।
আরও পড়ুন: ইতিহাসে উইন্ডিজ! গর্বের গাব্বায় ভূলুণ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া! ভাঙা পায়ে ৭ উইকেটে তছনছ করা কীর্তি শামরের
২৩০ রান চতুর্থ ইনিংসে তাড়া করতে নেমে ভারত একসময় ৯৫/৩ হয়ে গিয়েছিল। তবে মোটেও চাপে ছিল না। তবে তিন উইকেট হারিয়ে ভারত অতি সতর্ক নীতি নিয়ে ফেলে। এতেই ইংরেজ স্পিনাররা মাথায় চড়ে বসে। রান আটকে যেতেই ভারতের ব্যাটিংয়ের নাভিশ্বাস উঠে যায়। ৯৫/৩ থেকে হঠাৎ করেই এক ধাক্কায় ভারত ১১৯/৭ হয়ে গিয়ে ধসে যায়। হার্টলের স্পিনে খেই হারিয়ে ফেলে প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল ভারত। তখন আবার ভাবা যায়নি এই ম্যাচ জিততে ইংল্যান্ডকে চতুর্থ দিনের অতিরিক্ত সময়ে এসে জয় ছিনিয়ে নিতে হবে।
ভরত এবং অশ্বিনের একটা পার্টনারশিপ আবার ইংল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়ার উপক্রম করেছিল। ৫৭ রান জুড়ে ভরত এবং অশ্বিন আবার ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে দিয়ে যান। তবে এই জুটিতে ভাঙন ধরিয়ে হার্টলে ভারতের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে যান। পরপর দু-ওভারে ইংরেজ তারকা ফিরিয়ে দেন ভরত (২৮) এবং অশ্বিনকে (২৮)। ১৭৭/৯ হয়ে যাওয়ার পর সিরাজ এবং বুমরার ২৫ রানের মরিয়া পার্টনারশিপ নতুন করে আশার সঞ্চার করলেও শেষদিকে হার্টলেকে ওড়াতে গিয়ে স্ট্যাম্প আউট হয়ে যান সিরাজ।
২০১২-য় শেষবার ইংল্যান্ডের কাছেই হোম সিরিজ হেরেছিল ভারত। তারপর গত একদশক ভারতকে ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য হিসাবে নিজেদের মেলে ধরেছে। ২০১৩-র পর এই নিয়ে ঘরের মাঠে এই হার ভারতের তৃতীয়তম। ইতিহাস ঘুরবে ইংল্যান্ডের হাত ধরে, উত্তর দিয়ে যাবে সিরিজের বাকি চার টেস্ট।