নিউজিল্যান্ড: ২৫৯/১০ এবং ২৫৫/১০
ভারত: ১৫৬/১০ এবং ২৪৫/১০
India vs New Zealand, 2nd Test Day 3: অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নাকি নিউজিল্যান্ডকে দুর্বল ভাবা! বেঙ্গালুরুর পর পুনেতে হেরে ভারতের সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার পর এই প্রশ্নই উঠে গেল টিম ইন্ডিয়ার অন্দরমহলে। দুর্বল বাংলাদেশকে ল্যাজেগোবরে হারানোর পর ভারত সপ্তম আকাশে উড়ছিল।
মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উড়ন্ত ভারতকে মাটিতে টেনে নামাল নিউজিল্যান্ড। দলের সেরা ব্যাটার কেন উইলিয়ামসনকে ছাড়াই অসাধ্য সাধন করল কিউইরা। বেঙ্গালুরুর পর পুনেতে দ্বিতীয় টেস্টই নিজেদের নামে করে নিল ব্ল্যাক ক্যাপস বাহিনী। ভারতের মাটিতে এই প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জিতল তাঁরা। পুনেতে জয় এল ১১৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। ৩৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে খতম হল ২৪৫ রানে।
১২ বছর আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষবার টেস্ট সিরিজ হেরেছিল টিম ইন্ডিয়া। সেবারের ধোনি জমানা বদলে কোহলি যুগেও অখ্যাত ছিল অপরাজেয় থাকার সেই রেকর্ড। তবে নেতা রোহিতের হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ফিরে এল।
বেঙ্গালুরুতে পিচ রিড করতে না পারা সর্বসমক্ষেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন রোহিত। বেঙ্গালুরুতে চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে ম্যাট হেনরি, উইলিয়াম ও রৌরকেদের সামনে আত্মসমর্পণের অর্থ তবু বোঝা যায়। তবে পুনেতে অপেক্ষাকৃত অনেক ভালো ব্যাটিং পিচে যেভাবে ভারত দ্বিতীয় দিনে ধসে গিয়েছিল মাত্র ১৫৬ রানে, তা ব্যাখ্যাতীত।
১০৩ রানে ফার্স্ট ইনিংসে পিছিয়ে থাকার পর এই টেস্ট জয় সহজ ছিল না। পিচ আরও ভেঙে এসেছিল। আরও ঘূর্ণির মরণ কামড় অপেক্ষা করছিল। সেই পিচেই কিউইদের লিড তিনশো ছাড়ার পরেই কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। ৩৫৯ রানের টার্গেট চেজ করে পুনেতে জিততে হলে ভারতকে ইতিহাস গড়তে হত। নতুন করে রেকর্ড বই লিখতে হত, স্পিনের সামনে কেঁপে যাওয়া এই ভারতীয় দলের জন্য সেটা নির্ঘাত বাতুলতা। সেটাই হল।
বিশাল রান চেজ করতে নেমে ভারতের শুরুটা স্বপ্নের হয়েছিল। রোহিত যথারীতি স্যান্টনারের শিকার হয়ে ফেরার পর টিম ইন্ডিয়াকে চমৎকার টানছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল এবং শুভমান গিল। টেস্টে ওয়ানডে-ও নয়, টি২০ মেজাজে ব্যাট চালাচ্ছিলেন তাঁরা। লাঞ্চের আগে ভারত ১২ ওভারেই ৮১ তুলে ফেলেছিল স্কোরবোর্ডে।
যশস্বীর স্টেপ আউট করে এগিয়ে আসা অবলীলায় ছক্কা, গিলের মনোরম কভার ড্রাইভ, কাট তখন ভারতীয় শিবিরে আশার সঞ্চার করেছিল। লাঞ্চের আগে ওভার পিছু সাড়ে ছয়-এর ওপর রান তুলতে থাকা ভারত দ্বিতীয় সেশনেই ধসে যায়। লাঞ্চের পরে চতুর্থ ওভারেই গিলকে ফেরান স্যান্টনার।
একসময় ৯৬/১ থাকা ভারত মাত্র ৭ ওভারের ব্যবধানে ১২৭/৪ হয়ে যায়। স্যান্টনারের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে যশস্বী ফেরার পরের ওভারেই কোহলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে প্যাভিলিয়নে ফেরেন পন্থ। কোহলি এবার কোনওরকমে ৪০ বল টিকলেও স্যান্টনারের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ১৭ রানের বেশি করতে পারেননি।
স্যান্টনার-ই ভারতীয় ইনিংসের শনি অবতারে হাজির হলেন। প্ৰথম ইনিংসে ৭ উইকেট শিকারের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর শিকার আরও ৬ জন। পুনে টেস্ট তিনি শেষ করলেন দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৩ উইকেট নিজের নামের পাশে লিখে।
টসে জিতে কিউইরা প্ৰথম ইনিংসে ২৫৯ করে। ভারত জবাবে ব্যাটিং ধসের মুখে ১৫৬-এর বেশি স্কোরবোর্ডে জড়ো করতে পারনেনি। নিউজিল্যান্ড এরপরে দেড় খানা সেশনে ১৯৮/৫ তুলে দিয়েছিল স্কোরবোর্ডে। শনিবার আরও ৫৭ রান যোগ করার ফাঁকে বাকি ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
বাকিটা ইতিহাস।