বিরাট কোহলির সুপারস্টার ব্যাটন ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ভাবা হচ্ছে, বিরাট কোহলিত্তর জমানায় ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টার বয় হতে চলেছেন তিনি।
আর সেই লক্ষ্যেই শুভমান গিলের দক্ষিণ আফ্রিকায় পারফরম্যান্সের ওপর নজর ছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্বের। তবে সকলকে হতাশ করে ফের একবার ব্যর্থ শুভমান। সেঞ্চুরিয়নে মাত্র ২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় উঠতি তারকাকে। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পর ওপেনিং থেকে তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে তিন নম্বরে। পূজারার ব্যাটিং পজিশনে খেলছেন তিনি। তবে তাঁর ব্যাট জ্বলে উঠতে পারছে না।
ভারতীয় ক্রিকেটে তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশন সবসময় বরাদ্দ থেকেছে রথী-মহারথীদের জন্য। রাহুল দ্রাবিড় এবং তার পরবর্তী সময়ে চেতেশ্বর পূজারা দীর্ঘদিন এই পজিশনে ব্যাটিং করে বহু কীর্তির সাক্ষী থেকেছেন। দীর্ঘক্ষণ ক্রিজে থেকে দলের ইনিংসের নিউক্লিয়াস হয়ে উঠছেন পূজারা-দ্রাবিড়রা। আর এই পজিশনে খেলেই বিশ্বক্রিকেটে 'দ্য ওয়াল' বিশেষণ লাভ করেছিলেন দ্রাবিড়।
শুভমান গিলের টেস্ট কেরিয়ার: গিল কিন্তু এখনও পর্যন্ত আশা জোগাতে পারছেন না। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যতই রং ছড়ানো পারফরম্যান্স করুন না কেন, গিল কিন্তু টেস্ট ফরম্যাটে একদম টিম ম্যানেজমেন্টকে আস্থা জোগাতে পারছেন না। প্রায় তিন বছর হয়ে গেল গিলের টেস্ট কেরিয়ার। ১৯ ম্যাচে ৩৪ ইনিংস খেলে ফেলেছেন তরুণ এই তুর্কি। তাঁর নামের পাশে মাত্র চারটে অর্ধশতরান এবং দুটো হান্ড্রেড।
আর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্ৰথম টেস্টের প্ৰথম ইনিংসের ব্যর্থতা গিলের টেস্ট কেরিয়ারে বিপদঘন্টি কিন্তু বাজিয়ে দিয়েছে। আর কয়েকটা ইনিংস ব্যর্থ হলে গিলকে যদি প্ৰথম একাদশের বাইরে সরিয়ে ফেলা হয় আশ্চর্যের কিছু হবে না। টেস্টে টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ভারতকে সাম্প্রতিক সময়ে বারবার ভুগিয়েছে। বেশ কিছুদিন নিষ্প্রভ থাকার কারণে বাদ পড়তে হয়েছে পূজারার মত বর্ষীয়ান তারকাকেও। তরুণদের বেশি করে সুযোগ দেওয়ার পথে হেঁটেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
টিম ইন্ডিয়ায় ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা: ঘটনা হল, ভারতীয় ক্রিকেটে একাধিক তারকা এখন টেস্টে একাদশে ঢোকার যোগ্য দাবিদার। রুতুরাজ গায়কোয়াড টেস্টে সুযোগ পাচ্ছেন না। সরফরাজ খানের মত প্রতিভাকে বারবার বঞ্চনা করার অভিযোগ উঠেছে। গাড়ি দুর্ঘটনার পর ঋষভ পন্থ আপাতত জাতীয় দলের বাইরে একবছর হয়ে গেল। তিনি ফিরলে সরাসরি প্ৰথম একাদশেই খেলবেন স্রেফ টেস্টে তাঁর অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যানের জোরে। এছাড়া কেএল রাহুল টেস্টে মিডল অর্ডারকে ভরসা জোগাচ্ছেন। এমন অবস্থায় প্রত্যেক ইনিংসের ব্যর্থতা চাপ বাড়াচ্ছে শুভমান গিলের ওপর।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও হয়ত উইকেটকিপার রাহুল: কিপার হিসাবে কেএল রাহুলের কাছে অগ্নিপরীক্ষা এই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। টপ অর্ডারে ব্যর্থ হওয়ার পর মিডল অর্ডারে খেলতে হচ্ছে রাহুলকে। তবে নতুন ব্যাটিং পজিশনে রান পেয়েছেন ধারাবাহিকভাবে। মিডল অর্ডারে তাঁর ব্যাট ভরসা জুগিয়েছে দলের। দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি সফল হলে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম টেস্ট সিরিজে তিনি নিশ্চিত প্ৰথম একাদশে খেলবেন। ঋষভ পন্থ ফিরলে উইকেট-কিপার ব্যাটসম্যান হিসাবে টিম ম্যানেজমেন্ট কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখতে মুখিয়ে থাকবে ক্রিকেট মহল।
বিদেশে সফল, পরীক্ষিত ঋষভ পন্থ: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করলে পন্থকে মোটেই উপেক্ষা করা যাবে না। সীমিত ওভারে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও টেস্টে পন্থ জাতীয় দলের অটোমেটিক চয়েস। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডে পন্থের ব্যাট সোনা ফলিয়েছে। উইকেটকিপার হিসাবেও উন্নতি করেছেন। পন্থ ফিরলে খারাপ ফর্মের জন্য বলির পাঁঠা করা হতে পারে শুভমান গিলকে। সেক্ষেত্রে রাহুলকে গিলের জায়গায় তিনে ঠেলে লোয়ার অর্ডারে পন্থকে খেলাতে পারেন নির্বাচকরা।
দেশে-বিদেশে গিলের টেস্ট পরিসংখ্যান: দেশে এবং বিদেশে শুভমান গিলের পারফরম্যান্স মোটেই আশাপ্রদ নয়। দেশের মাটিতে ৮ ম্যাচের ১৪ ইনিংসে ৪১৭ রান করেছেন ৩২.০৭ গড়ে। বিদেশে ৯ ম্যাচে ১৬ ইনিংসে শুভমান গিলের মোট রান ৪৮৪, গড় ৩৪.৫৭। নিউট্রাল ভেন্যুতে ২ টেস্টে ৪ ইনিংসে গিল ৬৭ রান করেছেন হতশ্রী ১৬.৭৫ গড় নিয়ে।
২০২২, ২০২৩-এ গিলের টেস্ট পারফরম্যান্স: ২০২৩-এ টেস্টে গিলের পারফরম্যান্স একদমই শোচনীয়। ৬ টেস্টে ৯ ইনিংসে গিল ২৯ গড় সমেত করেছেন মাত্র ২৩২ রান। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর ১২৮। ২০২২-এও গিলের পারফরম্যান্স একদম অনুজ্জ্বল। ৩ টেস্টে ৬ ইনিংসে করেছেন মাত্র ১৭৮ রান, গড় ২৯.৬৬। সবমিলিয়ে ১৯ ম্যাচে ৩৪ ইনিংসে গিল ৩১.২২ গড়ে ৯৬৮ রান করেছেন।