দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে একেবারেই দাঁড়াতে পারেনি ভারত। মাত্র তিনদিনেই গুঁড়িয়ে গিয়েছে ভারতের যাবতীয় প্রতিরোধ। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্ৰথমবার সিরিজ জয়ের স্বপ্ন। প্ৰথম ইনিংসে সতেজ পিচে ভারত পেস এবং বাউন্সের সামনে নুইয়ে গিয়েছিল। রাবাদা, বার্গার, জ্যানসেনরা ভারতীয় ব্যাটারদের কোনওরকম মায়াদয়া দেখাননি।
রাবাদার নেতৃত্বে প্রোটিয়াজ বোলিং ইউনিট জ্বলে উঠতেই ফুঁস করে নিভে গিয়েছে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং ব্রিগেড। সেঞ্চুরিয়নের হতাশা যেন ছুঁয়ে গিয়েছে মাস দেড়েক আগের বিশ্বকাপ ফাইনালের হারের স্মৃতিকেও। কেন বারবার পেস এবং বাউন্সের সামনে নতজানু হয়ে পড়ছে ভারতের দুর্ধর্ষ ব্যাটাররা? রোহিত অবশ্য অন্যতম ফ্যাক্টর ধরছেন পর্যাপ্ত অনুশীলনের অভাবকে। জানিয়ে দিচ্ছেন দলের অনুশীলনের ঘাটতি রয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে রোহিত খুঁড়ে বের করলেন প্রোটিয়াজদের পিচ কৌশলকে। বলে দিলেন, অস্ট্রেলিয়া যেমন অনুশীলনের সময় ম্যাচের পিচ বরাদ্দ করে না। সেই রকমই কৌশল নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। তাতেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কখনও না খেলা শুভমান গিল, শ্রেয়স আইয়ার, যশস্বী জয়সোয়ালরা সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন। এমনকি প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, শার্দূল ঠাকুরদের যে গোটা ম্যাচ জুড়ে লাইন-লেন্থ ত্রুটিপূর্ণ ছিল, তার নেপথ্যে এই পিচ স্ট্র্যাটেজি।
হিটম্যান জানিয়েছেন, "এই ধরণের কন্ডিশনে খেলার সময় টেকনিকের থেকেও নিজের ওপর বিশ্বাস থাকা বেশি জরুরি। নিজস্ব প্ল্যানিং থাকতেই হবে। এটা বাঞ্ছনীয়। শরীরের ক্লোজ খেলতে হবে, অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল ছাড়তে হবে- এগুলো সকলেই জানে। তা সত্ত্বেও নিজস্ব পরিকল্পনা থাকতে হবে। ওঁদের বোলিং বিভাগেও কিন্তু অনভিজ্ঞ বোলার রয়েছে। এগুলো সবকিছুই মাথায় রাখতে হবে।"
"সদিচ্ছা, শৃঙ্খলা, টেম্পারমেন্ট- সাফল্যের জন্য সবকিছুত মিশ্রণই প্রয়োজন। স্রেফ একরকম মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করলে এখানে সাফল্য মেলা দুষ্কর। বুঝতে হবে, কখন বিপক্ষ বোলাররা ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখনই খোলস ছেড়ে বেরোতে হবে।"
এরপরেই রোহিত খোলসা করেছেন তাঁর আসল বক্তব্য, "আমরা এখানে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছি। গত চার-পাঁচ বছর ধরে অনেকেই ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেছে। তবে কখনই আমাদের প্লেয়াররা এরকম পিচে খেলার সুযোগ পায়নি। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে গতবার দেখেছি, যে অনুশীলন পিচে আমাদের খেলতে হচ্ছে, সেখানে বল হাঁটুর ওপরেই ওঠে না। হঠাৎ করেই ম্যাচে অন্য পিচে খেলতে হয়। আমরা অবশ্য এই সব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। এমনকি অনুশীলন ম্যাচেও ওঁরা যে নেট বোলার দেয়, তাঁদের সর্বোচ্চ গতি মেরেকেটে ঘন্টায় ১২৫ কিমি। আমাদের এই বিষয়ে আগে বহুবার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাই ওঁদের বোলারদের বদলে আমাদের নিজেদের বোলার নিয়েই অনুশীলন সারতে হয়।"
সেঞ্চুরিয়নে খেলতে নামার আগেই ভারত আন্তঃস্কোয়াড প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল। যে ম্যাচে অবশ্য বিরাট কোহলি খেলেননি। তিনি লন্ডনে উড়ে গিয়েছিলেন স্ত্রীর পাশে থাকতে। প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলেও তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে করলেন ৩৮ এবং ৭৬। কেএল রাহুলের প্ৰথম ইনিংসের শতরান। এই দুজনের ব্যাটিং পারফরম্যান্স বাদ দিয়ে বাকিরা কেউই দাঁড়াতে পারেননি। চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্কা রাহানের বদলি হিসাবে ভাবা হচ্ছে শ্রেয়স আইয়ার, শুভম্ব গিলদের। তবে তারা ভরসা জোগাতে পারছেন না।
রোহিত অবশ্য দলের ব্যাটারদের আড়াল করছেন। বলছেন, "ভুলে যেও না আমরা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে কেমন খেলেছিলাম। কখনও কখনও এরকম হতেই পারে। এর অর্থ এমন নয় যে আমরা বিদেশের পিচে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়, তা জানি না। কখনও কখনও প্রতিপক্ষ আমাদের তুলনায় যথেষ্ট ভাল পারফরম্যান্স উপহার দেয়। রেকর্ড ঘেঁটে দেখা হোক, শেষ চার বছর আমরা বিদেশের মাটিতে কেমন খেলেছি।"