কেপটাউনে টেবল পাহাড়কে সাক্ষী রেখে ভারত দুরূহ পর্বত অভিযানে নামছে। সেঞ্চুরিয়নে সমস্ত বিভাগে ভারত পর্যুদস্ত হওয়ার পর একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়েছে টিম ইন্ডিয়া। টিম কম্বিনেশন নিয়ে যে যে বিষয় সামনে চলে আসছে…
ব্যাটসম্যানদের ওপর আস্থা অটুট:
সেঞ্চুরিয়নের দুই ইনিংসেই ভারতীয় ব্যাটাররা অতিরিক্ত বাউন্স এবং সিম মুভমেন্ট সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কন্ডিশন আরও বেশি সতর্ক হওয়ার দাবি রাখে, সেরকম অবস্থাতেই ভারতীয়রা বেসিক বিষয় ঠিক রাখতে পারেনি। ভারতের ব্যাটিং বর্তমানে রূপান্তর পর্বের মধ্যে রয়েছে। এই মুহূর্তে ব্যাটিং অর্ডার নতুন করে রিগ্রুপ করতে চাইছে না ভারত। এর অর্থ অভিমন্যু ঈশ্বরণ আরও একটা ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চ গরম করবেন।
পরিবর্তন কোথায় হচ্ছে?
অবশ্যই বোলিং বিভাগে। কয়েকদিন আগেই নেট অনুশীলনের সময় শার্দূল ঠাকুরের কাঁধে আঘাত লাগে। তবে তিনি এখনও ছিটকে যাননি। তবে প্ৰথম টেস্টে পিঠের পেশিতে খিঁচ নিয়ে ছিটকে যাওয়া জাদেজা ফিরছেন পুরো ফিট হয়ে। তাই বোলিং বিভাগে রদবদল ঘটছেই।
অশ্বিন এবং জাদেজা দুজনেই কি খেলবেন?
অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডে দুই স্পিনার ভারত খেলালেও, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথাগতভাবে ভারত কখনও দুই স্পিনার খেলানোর পথে হাঁটেনি। সেনা দেশে এক স্পিনার খেলানোর কম্বিনেশনে ভারত সবসময় ভরসা রেখেছে রবীন্দ্র জাদেজার ওপর। কারণ আর কিছুই নয়, জাদেজাকে মোটেই বোলিং নয়, বরং ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসাবেই ভাবা হয়। জাদেজা এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় মাত্র একটিই টেস্ট খেলেছিলেন। বাকি চার ম্যাচ চোটের কারণে মিস করেছেন অতীতে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সাত টেস্ট খেলে ফেললেও অন্যান্য জায়গার মত সেভাবে কার্যকর হতে পারেননি।
তবে কেপটাউন এমন ভেন্যু যেখানে পিচ ভাঙতে পারে। এবং তৃতীয় দিন থেকেই পিচে ফাটল দৃশ্যমান হতে পারে। আর সেঞ্চুরিয়নের মত কেপটাউনের পিচে ঘাসের আস্তরণ অতটাও পুরু নয়। চেন্নাইয়ের প্রসন্ন আরোগম যিনি গত কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ আফ্রিকান ঘরোয়া দল লায়ন্স-এর কোচিং স্টাফে রয়েছেন তিনি টুইটারে লিখেছেন, "শুকনো ঘাসে গত কয়েকদিন জল ঢালা হয়েছে। ঘাস সরিয়ে ফাটল বেরোবে এই পিচে। ম্যাচের শেষের দিকে স্পিনাররা কার্যকরী হবেন। ভারত কোন কম্বিনেশনে খেলবে, সেটা এখন দেখার।"
কন্ডিশন অনুযায়ী প্ৰথম একাদশে হয়ত দুজনের জায়গা হবে না। তবে এর ভালো, খারাপ- দুই দিক-ই রয়েছে। সেঞ্চুরিয়নে ভারতের কাছে একসময় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রোটিয়াজ ইনিংসের রানের গতি কমিয়ে ব্যাটারদের ওপর চাপ বাড়ানো। তবে ভারতের অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণের কথা মাথায় রেখে দুই অভিজ্ঞ স্পিনারকে নামিয়ে দেওয়া খারাপ পরিকল্পনা হবে না মোটেও। দুজনের ব্যাটের হাত-ও মন্দ নয়। তবে দুজনকে খেলালে কোনও একজন স্পিনারকে যে অল্প ব্যবহারের ঝুঁকি থেকেই যায়।
পেস আক্রমণ কী হবে?
জসপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ সিরাজ অবশ্যই থাকছেন। তবে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ যেভাবে অভিষেক ম্যাচেই ঝুলিয়ে দিয়েছেন এবং শার্দূল ঠাকুরের ওয়ানডের মেজাজে রান খরচ (ওভার পিছু ৫-এর বেশি) করার ঘটনা এখনও টাটকা। ভারত আপাতত মুকেশ কুমারকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করে দিয়েছে। এছাড়াও স্কোয়াডে আবেশ খানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবেশ খানকে টেস্ট স্কোয়াডের পক্ষে আদর্শ ধরা হয় সাম্প্রতিককালে। লম্বা স্পেল করার সামর্থ্য রয়েছে তরুণ তুর্কির। এছাড়াও কাঁধের জোরে বোলিং করেন। বুমরা-সিরাজকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আবেশকে বেছে নেওয়া হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কেপটাউন টেস্টের আগে টিম ইন্ডিয়া অধিনায়ক রোহিত শর্মা আরও একবার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের ওপর ভরসা রাখার কথা জানিয়েছেন। তাই প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে প্ৰথম একাদশে রাখার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে ভারত যদি চার সিমার খেলানোর পথে হাঁটে, তাহলে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, আবেশ খান, মুকেশ কুমার এবং শার্দূল ঠাকুরের মধ্যে বেছে নিতে হবে দুজনকে। পিচে ঘাসের আস্তরণ কম থাকায় শার্দূল এই পিচে সেভাবে কার্যকরী হবেন না। মুকেশের মত সিমার আবার এই পিচ থেকে বাউন্স আদায় করতে পারবেন না। তাই ভারত কি আবেশকে খেলানোর ঝুঁকি নেবে?