দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫৫/১০
ভারত: ১৫৩/১০
কেপটাউনে পরতে পরতে রোমাঞ্চ, উত্তেজনা। প্ৰথম সেশনেই দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa) মাত্র ৫৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে লজ্জার ইতিহাস গড়ে ফেলেছিল। তবে সেই লজ্জা মেটাতে দক্ষিণ আফ্রিকা যে মাত্র একটা সেশন নেবে, কে ভাবতে পেরেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার ৫৫ রানের জবাবে ভারত খতম মাত্র ১৫৩ রানে। ৯৮ রানের লিড বড় বিষয় নয়। ঘটনা হল, ভারতের (Team India) অবিশ্বাস্য ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটল মাত্র কয়েক ওভারের মধ্যে। শেষ ৬ উইকেট হারাল স্কোরবোর্ডে কোনও রান যোগ না হয়েই। টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটারদের মধ্যে সাত জনই রানের খাতা খুলতে পারলেন না।
তৃতীয় সেশনের প্ৰথম ১১ বলেই ঝুরঝুর করে ঝরে গেল ভারতের ব্যাটিং। অবিশ্বাস্যভাবে। তৃতীয় সেশন ভারত শুরু করে ১৫৩/৪ অবস্থায়। ৩৪ ওভারের শুরুর সেই স্কোর থেকেই ভারত খতম ৩৬ ওভারের মধ্যে। তখনও ভাবা যায়নি কি টুইস্ট অপেক্ষা করছে আসন্ন কয়েকটা বলে।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই প্ৰথমবার স্কোরবোর্ডে কোনও রান না যোগ করেই এত উইকেট হারাল। রবি শাস্ত্রী তো ধারাভাষ্য দেওয়ার মজা করে বলেই দিলেন, "কেউ যদি কোনায় গিয়ে মূত্র ত্যাগ করতে যায়। তাহলে ফিরে এসে দেখবে ভারত অলআউট হয়ে গিয়েছে।"
আর এই উইকেট-ঝড়ের সূত্রপাত ঘটিয়ে যান লুঙ্গি এনগিদি। বিরাট কোহলি এবং কেএল রাহুলের পার্টনারশিপ ভেঙে দেন তিনি। সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে পার্টনারশিপ ব্রেক করার পরেই রবীন্দ্র জাদেজা এবং জসপ্রীত বুমরাকে সেই ওভারেই আউট করে দেন তিনি।
পরের ওভারের প্ৰথম বলেই রাবাদার শিকার হয়ে ফেরেন কোহলি ব্যক্তিগত ৪৬ রানে। এরপরই প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে যান মহম্মদ সিরাজ। সেই ওভারেই পঞ্চম বলেই কৃষ্ণ শেষমেশ রাবাদার বলে আউট হয়ে যান।
শেষ ১১ বলে ভারতের স্কোরকার্ড দাঁড়াল- W 0 W 0 W 0 0 W 0 W W। সবমিলিয়ে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ছয় জনই শূন্য রানে আউট হলেন। টেস্টে এর আগে এরকম লজ্জার কাণ্ড হয়েছিল এর আগে মাত্র একবার। বিরাট কোহলি (৪৫), রোহিত শর্মা (৩৯), শুভমান গিল (৩৬) এবং কেএল রাহুল (৮) ছাড়া কেউই রানের দেখা পাননি।
তার আগে টসে জিতে প্ৰথমে ব্যাটিং সহায়ক কেপটাউনে ভারতকে বল করতে পাঠিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডিন এলগার। তবে তিনি কি জানতেন সিরাজ মারণ-মূর্তিতে হাজির হবেন অপমানের বদলা নেওয়ার জন্য। এলগারের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন আইডেন মারক্রাম। মারক্রাম চতুর্থ ওভারেই ফিরে যান সিরাজের বলে। স্লিপে জয়সোয়ালের হাতে ক্যাচ দিয়ে। সেই শুরু। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ভারতকে। এরপরে সিরাজ শিকার করেন ফেয়ারওয়েল টেস্টে অধিনায়কত্ব করা ডিন এলগারকে। অফসাইডে বল পাঞ্চ করতে গিয়ে উইকেটে বল টেনে আনেন তিনি।
টনি দি জর্জি সিরাজের তৃতীয় শিকার। লেগ সাইডে বল ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটকিপার কেএল রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। মাত্র ১৫ রানেই দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেট খুইয়ে ফেলেছিল।
সেই সময় ইতিমধ্যেই প্ৰথম স্পেলে টানা সাত ওভার হয়ে গিয়েছিল সিরাজের। তবে অষ্টম ওভারেও আক্রমণ থেকে রোহিত সরাননি সিরাজকে। সেই বিশ্বাসের পুরো সদ্ব্যবহার করে সিরাজ আরও দুই উইকেট তোলেন। সিরাজের বল গ্লাভসে ঠেকিয়ে স্লিপে জয়সোয়ালের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন বেডিংহ্যাম। ১৬তম ওভারের শেষ বলে সিরাজের লেগ কাটার বোকা বানিয়ে দেয় মার্কো জ্যানসেনকে। ব্যাটের কানায় লাগিয়ে যিনি কেএল রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন।
সেই সময় ক্রিজে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফেলেছিলেন প্রোটিয়াজ উইকেটকিপার কাইল ভারান। সিরাজ টানা নবম ওভার বোলিং করতে এসে ফেরান তাঁকেও। ৩০ বলে ১৫ করে ফিরতে হয় তাঁকে।