সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট মোটেই ভারতের প্রত্যাশা মত এগোচ্ছে না। কেএল রাহুলের দুরন্ত সেঞ্চুরিতে ভর করে ভারত স্কোরবোর্ডে কোনওরকমে ২৪৫ খাড়া করেছিল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা প্ৰথম ইনিংসে লিড নিয়ে ফেলেছে পূর্বতন ক্যাপ্টেন ডিন এলগারের শতরানে ভর করে।দ্বিতীয় দিনের শেষে এলগার ১৪০ রানে অপরাজিত রয়েছেন। প্রোটিয়াজরাও ১১ রানের লিড নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
আইডেন মারক্রামকে সিরাজ ফিরিয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন ইনিংসের শুরুতে। তারপর টনি দি জর্জি এবং ডিন এলগারের ৯৩ রানের পার্টনারশিপে ভারত ব্যাকফুটে চলে যায়। দ্বিতীয় সেশনে দুই প্রোটিয়াজ ব্যাটার রীতিমত কর্তৃত্ব চালিয়ে যান কৃষ্ণ-শার্দূল ঠাকুরের ওপর। কেরিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টেস্ট সিরিজ খেলতে নেমেছেন এলগার। আর বিদায়বেলা স্মরণীয় করে রাখছেন তিনি। বাউন্ডারির হাঁকানোর সুযোগ কোনওভাবেই ছাড়ছিলেন না। টেস্টেও ওয়ানডে ধাঁচের ব্যাটিং করে গেলেন তিনি। তাও আবার সেঞ্চুরিয়নে।
ঘটনা হল, লাঞ্চের পর ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা ক্রিজে টিকে যাওয়া এই জুটিকে ফেরানোর জন্য ভরসা রেখেছিলেন কৃষ্ণ-শার্দূল ঠাকুরের ওপর। এতে কাজের কাজ কিছু হয়নি।
গতবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এসে শার্দূল ঠাকুর ঐতিহাসিকভাবে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। সেই জন্যই হয়ত রোহিত একটু ভরসা রেখেছিলেন নিজের শহরের ছেলের ওপর। তাঁর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন সদ্য অভিষেক ঘটানো প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে। তবে শার্দূল-কৃষ্ণ জুটি মোটেই চাপে ফেলতে পারেনি প্রোটিয়াজ ব্যাটারদের ওপর। লাইন লেন্থ-ও অভ্রান্ত ছিল না দুজনের। এই সুযোগেই এলগার-দি জর্জিরা ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়ে দুজনের সম্মিলিত ৮ ওভারে তুলে ফেলেন ৪২ রান। এলগার নিজের টেস্ট কেরিয়ারের ২৪তম ফিফটি হাঁকিয়ে ফেলেন মাত্র ৭৯ বলে।
আর এতেই রোহিতের অধিনায়কত্বের খামতি দেখছেন রবি শাস্ত্রী। ধারাভাষ্য করার সময়ে তিনি সটান বলে দিয়েছেন, "যে কোনও অর্ডারেই এই দুজন সেশনের শেষে আসতে পারে। কোচ থাকাকালীন এই নিয়ে একাধিকবার আমরা আলোচনা করেছিলাম। যে কোনও সেশনের শুরুতে আমরা দলের সেরা দুই বোলারকে আক্রমণে আনার বিষয়ে সম্মত হয়েছিলাম।"
রোহিত অবশ্য নিজের ভুল নিজেই বুঝতে পারলেন। শার্দূল-কৃষ্ণকে সরিয়ে বুমরা-সিরাজকে আক্রমণে আনতেই বাজিমাত। তবে ততক্ষণে দক্ষিণ আফ্রিকা ৯১/১ তুলে ফেলেছে স্কোরবোর্ডে।
বুমরা আক্রমণে এসেই নিজের ট্রেডমার্ক ভঙ্গিতে দুই বাঁ হাতিকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে সমস্যায় ফেললেন। আর সেই স্পেলের তৃতীয় ওভারেই বাইরের সেই বেরিয়ে যাওয়া বল টনি দি জর্জির ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটকিপার কেএল রাহুলের দস্তানায় পৌঁছে যায়। তাঁর কিছুক্ষণ পরেই বুমরা আউট করে দেন ক্রিজে সদ্য নামা কিগান পিটারসেনকে।
রবি শাস্ত্রীর সুরেই সুর মিলিয়েছেন অন্য ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মঞ্জরেকর এবং ভার্নন ফিল্যান্ডার। মঞ্জরেকর বলেছেন, "এই কৌশল তো ভারত মিস করে গেল। এই বিষয়ে রাহুল দ্রাবিড় এবং রোহিত শর্মারা নিশ্চয় বিরতিতে আলোচনা করে কৃষ্ণ-শার্দূলকে আক্রমণে আনতে সম্মত হয়েছিলেন।"
কেন বুমরাকে লাঞ্চ ব্রেকের পরেই আক্রমণে আনেননি রোহিত? যুক্তি সংগত ব্যাখ্যা দিয়ে ফিল্যান্ডার বলেছেন, "হয়ত ওঁকে বিরতির পর প্ৰথম কয়েক ওভার বিশ্রাম দিতে চেয়েছিলেন রোহিত। কারণ লাঞ্চের আগে ও ৬ ওভারের স্পেল করেছিল। তবে এই সুযোগে ভারত অনেকটা হারিয়ে গেল। ৪২ রান খরচ করল। সেই সঙ্গে ম্যাচের মোমেন্টামও দক্ষিণ আফ্রিকাকে উপহার দিয়ে গেল ভারত। সুযোগ কিছুটা হাতছাড়া হল।"