বিদেশের মাটিতে কলঙ্ক! যার দাগ ইতিমধ্যেই লেগে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়ার কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সিভিতে। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ছয় টেস্টে টানা পাঁচটিতে পরাজয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে, ভারতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন রাহুল। শুরু হয় টিম ইন্ডিয়ার দ্রাবিড়িয়ান যুগ। তারপর প্রথম বিদেশ সফর ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডে ভারত ছটি ম্যাচ খেলে পাঁচটিতেই হেরেছে। যে লজ্জার হিসেবে মুখ ঢাকবেন যে কেউ।
শুরু নিখুঁত হলেও, শেষ ভালো হয়নি (২০২১-২২)
অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের আগের সফরে দুটি করে টেস্ট জিতে ভারত দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের প্রথম সিরিজ জয়ের আশায় ছিল। সেঞ্চুরিয়নে জয় দিয়ে শুরু করেছিল ভারত। কিন্তু, অধিনায়ক পরিবর্তনের আলোচনার সঙ্গেই জোহানেসবার্গ এবং কেপটাউনে ভারত ডুবে যায় হতাশাজনক পারফরম্যান্সে। এই দুটি ম্যাচে টস জিতলেও, একটি পূর্ণশক্তির ভারত হিসেবে টিম ইন্ডিয়া নিজেদের তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়। ব্যাটিং ইউনিট ৩০০ রানের সীমা অতিক্রম করতে পারেনি। একইভাবে, আগের সফরে পেসাররা যে সাফল্য অর্জন করেছিলেন, তারও অভাব ছিল। যার জেরে দক্ষিণ আফ্রিকা কোনও চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশন ছাড়াই সহজে ২০০-র বেশি রানের লক্ষ্য পূরণ করেছিল। সিরিজ হেরে টেস্ট অধিনায়ক পদ থেকে সরেই দাঁড়ান কোহলি।
২০২২-এ কেন বাজবল, তার জবাব নেই
এজবাস্টনে একবছর আগের টেস্ট সিরিজে ভারত ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল। তাই ২০২২-এ ভারত যেন বাজবল (ভয়ডরহীন ক্রিকেট) খেলার রাস্তা নিয়েছিল। আর, এখানেই ভারত কৌশলগত ভুল করে। বিশেষ পরিবর্তন না-করেই ভারত ম্যাচে চার-সিমার খেলানোর কৌশল নেয়। এই কৌশল আগের গ্রীষ্মে শুকনো এজবাস্টনের পিচে কাজ করেছিল। কিন্তু, এবার সেই পদ্ধতিই ব্যর্থ হয়। ঋষভ পন্থের মাত্র ১১১ বলে ১৪৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস, রবীন্দ্র জাদেজার ১০৪ রানে ভর করে ভারত প্রথম ইনিংসে ১৩২ রানের লিড নেয়। কিন্তু, দ্বিতীয় ইনিংসে করে মাত্র ২৪৫ রান। যার জেরে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য ৩৭৮ রান তুলতে কোনও অসুবিধাই হয়নি। সিমাররা ব্যর্থ হওয়ায়, জো রুট এবং জনি বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরি করেন। ইংল্যান্ড ছয় উইকেটে জয়ী হয়।
২০২৩-এ, অসিদের সুন্দর প্রদর্শন
টানা দ্বিতীয়বার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠে ভারত। জসপ্রিত বুমরাহর অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ভারতের জয়ের ভালো সুযোগ ছিল। ফাইনালের কয়েকদিন আগে ভারত চার সিমার খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু, ক্রমশই ভারতের খেলায় সমন্বয়ের অভাব ধরা পড়ে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ৭-এ চার বাঁ-হাতি থাকা সত্ত্বেও, ভারত রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বসিয়ে রাখে। আর, উমেশ যাদব এবং শার্দুল ঠাকুরকে প্রথম একাদশে রেখে মাঠে নামে। শচীন তেণ্ডুলকরও ভারতের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে, ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ৪৬৯ রান করেছে। আর, ভারতীয় বোলিং রক্ষণাত্মক রণনীতি নিয়েছিল। যে কারণে, টিম ইন্ডিয়ার বোলিং সমালোচিতও হয়। এই ধরনের রক্ষণাত্মক নীতি কোহলি-শাস্ত্রী যুগে টিম ইন্ডিয়ায় কোনওদিন দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন- কোহলি-শাস্ত্রী হলে টিম ইন্ডিয়া থেকে দূর করতেন কৃষ্ণকে! প্রসিদ্ধকে নিয়ে বোমা এবার মঞ্জরেকরের
২০২৩-এ সেঞ্চুরিয়ানে আত্মসমর্পণ
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সর্বশেষ পরাজয় সম্ভবত সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভারতের সবচেয়ে খারাপ অ্যাওয়ে টেস্ট ছিল। জুলাইয়ে ক্যারিবিয়ান সফরের পর থেকে কোনও দীর্ঘ ফরম্যাটের ক্রিকেট না খেলায়, ভারতকে প্রতিটি ফ্রন্টেই রীতিমতো অপ্রস্তুত দেখিয়েছে। বিশ্বকাপ অভিযানের পরে সীমিত ওভারের লেগ চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। এরপর দীর্ঘ ফরম্যাটের জন্য রীতিমতো ঝুঁকি নিয়েই ভারত তার গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আগে পাঠায়নি। যা কৌশলগত ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। অনুশীলন ম্যাচে সেটা ধরা পড়েনি। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ব্যাটসম্যানরাও ব্যর্থ, বোলাররাও খারাপ বল করেছেন। ঠিক উলটো দেখিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার পারফরম্যান্স। এসব খারাপ পারফরম্যান্সের পরও একটা কথা কিন্তু, সত্যি। তা হল- টিম ইন্ডিয়ার কোচিংয়ে দ্রাবিড়িয়ান যুগে ভারত বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে চারটি টেস্ট খেলেছে। আর, সবকটিতেই জিতেছে।
আরও পড়ুন- ‘বাচ্চা’ প্রসিদ্ধ তো বলই জানে না! টিম ইন্ডিয়ার ভরাডুবির পরেই আঙুল উঁচিয়ে বিস্ফোরক এবার প্রাক্তনী