ব্যাটসম্যানদের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা যেন বধ্যভূমি। এখানকার পিচ যেন তৈরিই হয় পেস বোলারদের জন্য। বাউন্স, গতি থেকে সুইং- কী নেই! যা ব্যাটারদের বুঝিয়ে দেয় যে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের জন্য নয়। এটা তাদের অগ্নিপরীক্ষার জায়গা। যেখানে ২২ গজে আর কোনও বিপদ না-ঘনালেও পেসাররা দুর্বিপাক ডেকে আনবেনই আনবেন। এখানকার ইতিহাস, তার পরিসংখ্যান চিৎকার করে তেমনটাই বলে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনও পর্যন্ত মাত্র একজন বিদেশি ব্যাটসম্যান পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছেন। তিনি হলেন শচীন তেন্ডুলকর। তালিকায় পরের স্থানে আছেন ওয়ালি হ্যামন্ড।
ভারতীয় উপমহাদেশের বেশ কয়েকজন বিশ্বখ্যাত ব্যাটসম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের অন্যতম রাহুল দ্রাবিড়। যাঁর এখানকার পিচে গড় রান ২৯.৭১। তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক। দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে ইনজামামের গড় রান ৩১.৭৮। পুরো আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে এসে উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানরা বিধ্বস্ত মনোবল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বারবার দেশে ফিরে গিয়েছেন। ভারতীয় তরুণদের সর্বশেষ ব্র্যান্ডও সেঞ্চুরিয়নে অপমানজনক সেই সত্যটা উপলব্ধি করলেন। আগামী বছরগুলোয় ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মশাল বাহক- যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমান গিল ও শ্রেয়াস আইয়ার এখানে মাত্র ৮৭ রান করতে পেরেছেন। যা দক্ষিণ আফ্রিকার মার্কো জ্যানসেনের চেয়ে মাত্র তিন রান বেশি।
এটা তো হওয়ারই কথা। বছর ২২-এর যশস্বী জয়সওয়ালদের এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার পিচ বোঝার সামর্থ্য হয়নি। উপমহাদেশের পাটা পিচে খেলা অভ্যাস। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত পিচ। পেস বোলিংয়ের ছোবলে যথারীতি বারবার পরাস্ত হয়েছেন। যশস্বী আর কী? ১৯ টেস্ট খেলা শুভমান গিলই তো উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন। কোহলি-পরবর্তীতে জুনিয়র টিমমেটদের মধ্যে ভারতের ব্যাটিং স্কুলের ধারক-বাহক হিসেবে শুভমানকেই ভাবেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরই কি না, এই হাল! শুধু হাল বললে সবটা বলা হয় না। শুভমানের আউটের ধরন দেখে তাঁর লাইন-লেংথ বোঝা এবং সঠিক সময়ে ওজনের হেরফের ঘটানোর ক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বিদেশের সফরগুলো শুভমানের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ইংল্যান্ডে ছয় ইনিংসে তাঁর গড় রান ১৪। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন ইনিংসে ২২। আর, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টেস্ট-এর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, আদৌ এখানে তিনি কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে। অবশ্য, তাঁর বয়সও বেশি নয়, মাত্র ২৪। ব্যাটিংয়ের খুঁত মেরামতির এখনও অনেক সময় আছে। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে তিনি সুনীল গাভাসকার-শচীন-তেন্ডুলকার বা বিরাট কোহলিদের উত্তরাধিকারী হওয়ার পথ থেকে অনেকটাই দূরে। তাঁর কেরিয়ারের ৩৫ ইনিংসে, কোহলি ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় শতরান করেছেন। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকায় সেঞ্চুরি করেছেন তেন্ডুলকার।
আরও পড়ুন- টানা ইঞ্জেকশন নিয়ে বিশ্বকাপে আগুন ঝড়ান শামি! বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস হয়ে গেল আচমকা
শ্রেয়স আইয়ার তো আবার প্রতিটা বলই বাউন্ডারিতে পাঠানোর চেষ্টা করেছেন। যেন বুঝতেই পারেননি, এটা ভারত নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকাই নয়। ইংল্যান্ডের পিচেও এসব বোকামির সুযোগ নেই। অনেকে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের টেস্ট ক্রিকেটে ব্যর্থতার জন্য টি২০ মার্কা ভাবনায় প্রভাবিত হওয়ার কারণকেই দোষী ঠাওরেছেন। তিন কমবয়সি, প্রতিভাবান ভারতীয় ব্যাটারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অবশ্য মিথ্যে নয়। তবে, তাঁরা যদি সেঞ্চুরিয়ন থেকে শিক্ষা নেন, তবে সেটা ভারতের পাশাপাশি তাঁদের কেরিয়ারের জন্যও ভালো। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকার ২২ গজ না-হলে তাঁদের কেরিয়ারকেও ভয় দেখাতেই থাকবে।