ভারত: ২১৩/৭
শ্রীলঙ্কা: ১৭০/১০
IND vs SL 2024 1st T20I Match Report: গৌতম গম্ভীর-সূর্যকুমার যাদবের টিম ইন্ডিয়ায় জমানা শুরু হল দুরন্ত জয়ের মাধ্যমে। তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্ৰথম ম্যাচেই ভারত ৪৩ রানের নিরাপদ ব্যবধানে জিতে সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল পাল্লাকেলেতে।
ফলাফল দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক ভারতের জয় সহজভাবেই এসেছে। কিন্তু স্কোরবোর্ড কখনই ম্যাচের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে না। শ্রীলঙ্কার রান চেজ করার ১৫ তম ওভার পর্যন্তও প্রবল ব্যাটিং তান্ডবে জয়ের ব্যাপারে ফেভারিট ছিল।
তবে ১৫তম ওভারে অক্ষর প্যাটেল ৯ রান খরচ করলেও তুলে নেন ২ উইকেট। তাদের মধ্যে একজন ক্রিজে ভারতের হৃদগতি বাড়িয়ে দেওয়া পাথুম নিশঙ্কা। ৪৮ বলে ৭৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে যিনি প্রায় পূর্ণশক্তির ভারতীয় দলকে হারিয়ে দেওয়ার সম্ভবনা তৈরি করেছিলেন।
সেই ওভারের পরও শ্রীলঙ্কা ১৪৯/৩ ছিল। বাকি পাঁচ ওভারে শ্রীলঙ্কার জয়ের জন্য দরকার ছিল ৬৫। টি২০-তে যা মোটেও দুরূহ নয়। তবে সেই জায়গা থেকেই শ্রীলঙ্কা ২১ রান যোগ করার ফাঁকে আরও ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭০-এ অলআউট হয়ে যায়।
ডেথ ওভারে শ্রীলঙ্কার লোয়ার অর্ডারকে তুর্কি নাচন ধরিয়ে দেয় রিয়ান পরাগের স্পিন।
অক্ষর প্যাটেলের ওভারে ঘূর্ণির সন্ধান পেয়েই ক্যাপ্টেন সূর্যকুমার বল হাতে রিয়ানকে ডেকে নিতে দ্বিধা করেননি। ক্যাপ্টেন স্কাই-য়ের সেই জুয়া দারুণভাবে খেটে যায়। নিজের প্ৰথম ওভারেই কামিন্দু মেন্ডিসকে আউট করার পর দ্বিতীয় ওভারের প্ৰথম দুই বলেই মাথিসা থিকসনা এবং দিলশান মধুশঙ্কাকে পরপর দু-বলে ফিরিয়ে দেন। পরের ম্যাচে নিজের প্ৰথম বলে উইকেট শিকার করলেই রিয়ান হ্যাটট্রিকের মালিক হয়ে যাবেন। সেই সম্ভবনা রয়ে গেল। সাত বল হাতে ঘুরিয়েই তাঁর নামের পাশে তিন উইকেট। একটি রানআউটও রয়েছে তাঁর ওভারে।
সিরাজ-অর্শদীপ-রবি বিশ্নোইদের সামনে ২১৪ রানের পুঁজি ছিল ডিফেন্ড করার জন্য। তবে পাঁচ নিয়মিত বোলার সমৃদ্ধ ভারতীয় দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই ব্যাকফুটে চলে যায় দুই লঙ্কান ওপেনারদের দুরন্ত ব্যাটিংয়ের সামনে।
নতুন বলে সিরাজ-অর্শদীপরা প্রচুর রান খরচ করে ফেলেছিলেন। বিপদ বুঝে ক্যাপ্টেন সূর্যকুমার সঙ্গেসঙ্গেই অক্ষর-রবি বিশ্নোইকে আক্রমণে নিয়ে আসেন। দুই স্পিনার-ও রানের গতিতে লাগাম ফেলতে পারছিলেন না। শেষমেশ অর্শদীপকে দ্বিতীয় স্পেলে আনার পরেই ভারত প্ৰথম উইকেটের সন্ধান পায়। তবে ক্রিজে টিকে যাওয়া নিশঙ্কার সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে টানছিলেন কুশল পেরেরা। ওপেনিং জুটিতে ৮০ তুলে ফেলার পর দ্বিতীয় উইকেই কুশল-নিশঙ্কা জুটি আরও ৫৬ রান যোগ করে দিয়েছিলেন।
তারপরেই অক্ষরের সেই মোড় ঘোরানো ওভার এবং শেষদিকে রিয়ানের স্বপ্নের স্পেল শ্রীলঙ্কাকে ছিটকে দেয়।
তার আগে বল হাতে শ্রীলঙ্কার শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। তবে ডেথ ওভারে পাথিরানারা অনবদ্য বোলিং করে যান। একসময় মনে হচ্ছিল ভারতের স্কোর হয়ত আড়াইশোর আশেপাশে গিয়ে থামবে। তবে শেষদিকে ৩০ রান যোগ করার ফাঁকে ৪ উইকেট হারায়। শেষ ১২ বলে ৩ উইকেট তোলার ফাঁকে লঙ্কান বোলাররা খরচ করে মাত্র ২৩ রান। তাও আবার শেষ ওভারের অক্ষর প্যাটেলের ক্যামিও না থাকলে ভারতের ডেথ ওভারের পারফরম্যান্স আরও শোচনীয় দেখাত।
ভারতের ইনিংসের সূচনা অবশ্য উড়ন্ত ভঙ্গিতে হয়েছিল। শুরু থেকেই মারমার কাটকাট ব্যাটিং প্রদর্শনী মেলে ধরেন যশস্বী জয়সওয়াল এবং শুভমান গিল। যশস্বী বিধ্বংসী ব্যাটিং চালিয়ে গেলেও শুভমান সতর্ক ভঙ্গিতে শুরু করেন। তবে খারাপ বলের ঠিকানা বাউন্ডারিতে পাঠাতে কোনও ভুল করছিলেন না টিম ইন্ডিয়ার নতুন ভাইস ক্যাপ্টেন। কোনওভাবেই লঙ্কান পেসাররা থামাতে পারছিলেন না দুই তরুণ তুর্কিকে। শুরুর দিকে স্পিন আক্রমণ আনলেও কাজে আসেনি। মিডল ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ভারতের রান নিয়ন্ত্রণে রাখেন।
পাওয়ার প্লের আগে-পরে আউট হয়ে যান দুই ভারতীয় ওপেনার। ক্যাপ্টেন সূর্যকুমার ২৬ বলে ৫৮ করে ভারতের স্কোরবোর্ডে বড় রানের মঞ্চ প্রস্তুত করে দেন। ঋষভ পন্থকে শুরুতে খাপছাড়া লাগলেও ইনিংস গড়ানোর সঙ্গেসঙ্গে ব্যাটিং ছন্দ ফিরে পান তারকা।
ডেথ ওভারে অনবদ্য বোলিং করে যান মাথিসা পাথিরানা। প্ৰথমে দেড়শো কিমির পরপর ইয়র্কার লেংথের বলে ফেরত পাঠান হার্দিক পান্ডিয়া, রিয়ান পরাগ এমনকি ক্রিজে টিকে যাওয়া ঋষভ পন্থকেও। তার আগে শুরুর স্পেলে ফেরান সূর্যকুমার যাদবকে। ৪ ওভারে ৪০ রান খরচ করে পাথিরানার সংগ্রহে চার উইকেট।