Suryakumar Yadav last over: শ্রীলঙ্কা সফরে ভারত সিরিজের তিনটি টি২০ ম্যাচে জিতলেও অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের একটা বিরাট ভুল এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও আকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তৃতীয় টি২০ ম্যাচে সূর্যের এই ভুল হয়েছে। ভারতীয় দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার এই ম্যাচে এক বিরাট কৃতিত্বেরও পরিচয় দিয়েছেন। তিনি শেষ ওভারে শ্রীলঙ্কার যখন জয়ের জন্য মাত্র ৬ রান করা বাকি, সেই সময় নিজে বল করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। অসাধারণ বোলিংও করেন। কিন্তু, চরম সুযোগ পেয়েও সূর্যকুমার এই সময় বিপক্ষের ব্যাটারকে রান আউট করেননি। যা এই ম্যাচকে সুপার ওভারের দিকে ঠেলে দেয়।
এই সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে নেওয়া ভারত তৃতীয় টি২০ ম্যাচে বেশি রান করতে পারেনি। জয়ের জন্য ১৩৮ রান তাড়া করা শ্রীলঙ্কার স্কোর ১৬ ওভারে ছিল ১ উইকেটে ১১০ রান। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। আর, ভারত এই ম্যাচ সুপার ওভারে জিতে নেয়। পাল্লেকেলের পিচ ছিল স্পিনার সহায়ক। সূর্যকুমার ও রিংকু সিংরাও সেখানে বল করেছেন। শুধু বল করাই নয়। রিংকু তাঁর প্রতি অধিনায়কের আস্থা বজায় রেখেছেন। ওভারে তিন রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন।
এরপর ফাইনাল ওভার করতে আসেন সূর্যকুমার। সেই সময় শ্রীলঙ্কার জয়ের জন্য মাত্র ছয় রানের দরকার ছিল। প্রথম বলটা ডট বল নয়। এরপর পরপর বলে কামিন্দু মেন্ডিস আর মহীশ থিকশানার উইকেট তুলে নেন সূর্যকুমার। চতুর্থ বলে অসিথা ফার্নান্দো একরান নেন। এরপর চামিন্দু বিক্রমসিংহে দুটো বলে পরপর দুই রান করে নেন। যার জেরে ম্যাচ চলে যায় সুপার ওভারে।
এভাবে রিংকুর হাতে বল দিয়ে এবং নিজে বল করতে এসে সাফল্য পাওয়ার জন্য অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু, শেষ দুটি ডেলিভারিতে শ্রীলঙ্কার যখন জয়ের জন্য ৫ রান তোলা বাকি, সেই সময় শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান চামিন্দু বিক্রমসিংহে বাইরের-অফ ডেলিভারিকে ব্যাকফুটে গিয়ে লং-অফের দিকে পাঠিয়ে দেন। তিনি দুই রান নেওয়ার চেষ্টা করেন। রিয়ান পরাগ সহজেই বল ধরে নন-স্ট্রাইকার এন্ডে অধিনায়ক সূর্যকুমারের দিকে ছুড়ে দেন। সূর্যকুমার বলটা ধরেন। সেই সময় উইকেটের সীমানার থেকে অনেক দূরে ছিলেন অসিথা ফার্নান্দো। সূর্যকুমার উইকেটে বল লাগিয়ে অসিথাকে আউট করার বদলে বলটা উইকেটরক্ষক সঞ্জু স্যামসনের দিকে ছুড়ে দেন। সেই সময় সঞ্জুর প্রান্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন বিক্রমসিংহে। ফলে, ভারত একটা আউট মিস করে। সূর্যকুমারের দাবি, তিনি নাকি সেই সময় চিৎকার-চেঁচামেচিতে তাঁকেই যে রানআউট করার দায়িত্ব নিতে হবে বুঝতে পারেননি।
শেষ বলটাতেও ঠিক প্রায় একইরকম ঘটনা ঘটে। বিক্রমসিংহে সূর্যকুমারের ফুলার ডেলিভারি লং-অনের দিকে পাঠিয়ে দেন। আবারও দুই রান নেওয়ার চেষ্টা চালান। বাউন্ডারিতে থাকা শুভমান গিল সহজেই বল ধরে নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে অধিনায়ক সূর্যকুমারের দিকে ছুড়ে দেন। সূর্যকুমার যদি সেটা ধরে স্টাম্পে লাগিয়ে দিতেন, তবে অসিথা ফার্নান্দো আউট হয়ে যেতেন। কিন্তু, সূর্যকুমার বলটা ঠিকমতো ধরতেই পারেননি। ফলে, ম্যাচটা সুপার ওভারে চলে যায়।
আরও পড়ুন- যে যাই বলুক… নিন্দুকদের মুখে ঝামা ঘষে সূর্যকুমারের ক্যাচ নিয়ে মুখ খুললেন শাস্ত্রী
তবে, সুপার ওভারে জেতান সূর্যকুমারই। ওয়াশিংটন সুন্দর মাত্র তিন বলে দুটি উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে জয়ের জন্য মাত্র তিন রানের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দেন। ব্যাট করতে নেমে, সূর্যকুমার থিক্সনার প্রথম ডেলিভারি ফাইন লেগের দিকে বাউন্ডারি মেরে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন।
ম্যাচ শেষে প্রকৃত অধিনায়কের মতই সূর্যকুমার সাংবাদিক বৈঠক বলেন, 'শেষ ওভারই শুধু না। আমরা যখন ৪ উইকেটে ৩০ বা ৫ উইকেটে ৪৮, তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমরা কীভাবে ম্যাচটা ওদের থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছি। আমার মনে হয়েছিল এই ক্রিজে ১৪০ রান জেতার জন্য যথেষ্ট। ফিল্ডিংয়ের সময় আমি দলের সবাইকে বলেছিলাম, আমি এরকম অনেক ম্যাচ দেখেছি। আমরা যদি দেড় ঘণ্টা মন দিয়ে খেলতে পারি, ম্যাচ বের করে নেব। যদি ২০০-২২০ রান করে জেতা ম্যাচ আপনাদের আনন্দ দেয়, তবে ৪ উইকেটে ৩০ বা ৫ উইকেটে ৭০ রানেও আপনাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। কারণ, সেটাও জীবনে একটা সমতা তৈরি করছে, বুঝিয়ে দিচ্ছে কীভাবে এগোতে হবে। সতীর্থ খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস, তাঁদের দক্ষতা আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে। যে ইতিবাচকতা তাঁরা মাঠে এবং ড্রেসিংরুমে দেখিয়েছে, একে অপরের প্রতি যতটা নজর দিয়েছে, সত্যিই অবিশ্বাস্য।'
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়ের রসায়ন ফাঁস করে সূর্যকুমার বলেন, 'গত ম্যাচের পর আমি সতীর্থদের কয়েকজনকে বলেছিলাম, পারলে বিশ্রাম নিতে। তাদের একটাই উত্তর ছিল, বাকিদেরও সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। এটা একটা দলের চরিত্রকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। বুঝিয়ে দিচ্ছে যে দলের অন্যদের পারফরম্যান্সেও তারা কতটা খুশি। সেটাই আমার কাজটাকে সহজ করে দিয়েছে। আমি যখন ব্যাট করতে যাই, আমার তেমন একটা চাপ ছিল না। আমি স্রেফ মনের সুখে খেলেছি। সিরিজ শুরু হওয়ার আগেই আমি বলে দিয়েছিলাম, আমি অধিনায়ক হতে চাই না। আমি নেতা হতে চাই।'