জিম্বাবোয়ে: ১১৫/৯
ভারত: ১০২/১০
IND vs ZIM 2024 1st T20I Match Report: বিশ্বকাপ জয়ের মঞ্চেই ব্যাট-প্যাড তুলে রেখেছেন কোহলি-রোহিত-জাদেজারা। গর্বে গদগদ হয়ে কোহলি বলেই দিয়েছেন এবার তরুণদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পালা। ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের পরেই আলোচনায় উঠে এসেছিল কতটা শক্তিশালী ক্রিকেটারদের পাইপলাইন!
সেসব আলোচনায় আপাতত জল ঢেলে লজ্জা উপহার দিল শুভমান গিলের তরুণ ভারতীয় দল। প্ৰথম টি২০-তেই ভারত মুখ থুবড়ে পড়ল জিম্বাবোয়ের কাছে। ১৩ রানে হার হজম করে সিরিজে প্ৰথম ম্যাচের পরেই পিছিয়ে পড়ল টিম ইন্ডিয়া। সেই জিম্বাবোয়ে যে জিম্বাবোয়ে কিনা টি২০ বিশ্বকাপে যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি, সেই দলের কাছেই হাবুডুবু খেয়ে ম্যাচ হারল ভারতের আগামী দিনের মহারথীরা।
জয় শাহ কয়েকদিন আগেই সোচ্চার কন্ঠে জানিয়েছেন, ভারতের যা পাইপলাইন তাতে রীতিমত তিনটে দল নামানো সম্ভব। তবে আইপিএলে পারফর্ম করা আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জাত চেনানো- ব্যবধান দুষ্কর। টার্গেট ছিল মাত্র ১১৬। হারারের পিচে হালকা বাউন্স রয়েছে। সেই বাউন্সেই মুজরাবানি, চাতারারা কাঁপুনি ধরিয়ে দিলেন বিশ্বখ্যাত তরুণ ব্যাটিং লাইনআপকে।
জিম্বাবোয়েকে কি হালকাভাবে নিয়েছিল? হবে হয়ত। হোক ভারতের দ্বিতীয় সারির দল, সেই দলে কে নেই! আইপিএল কাঁপানো একের পর তারকা। রোহিত শর্মার যোগ্য উত্তরসূরি ধরা হচ্ছে অভিষেক শর্মাকে। তিনি তো বটেই আইপিএল চমকে দেওয়া রিয়ান পরাগ, ধ্রুব জুরেলদেরও অভিষেক জার্সি তুলে দেওয়া হয়েছিল আফ্রিকার মাটিতে।
আরও পড়ুন: IPL বাঘেরা মুখ পুড়িয়েছে প্ৰথম ম্যাচেই! দ্বিতীয় ম্যাচে কে কে টিম ইন্ডিয়ার বাইরে, জানুন প্ৰথম ১১
আর অভিষেক ম্যাচই দুঃস্বপ্নের হয়ে থাকল তিন তারকার কাছে। অল্প রানের এই টার্গেট চেজ করতে নেমে ভারত পাওয়ার প্লের মধ্যেই ৪ উইকেট খুঁইয়ে ফেলে। ১১তম ওভারে ভারত ধসে গিয়েছিল ৪৭/৬-এ।
এমন অবস্থা থেকে জিততে হলে লোয়ার অর্ডারের কাউকে স্মরণীয় ইনিংস খেলতে হত। ৮৬/৯ হয়ে যাওয়ার পর ওয়াশিংটন সুন্দর একা দলকে টানার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তবে অন্য প্রান্তে খলিল আহমেদকে আড়াল করে খেলতে গিয়ে মগডালে চড়ে যাওয়া আস্কিং রেট আর সামলাতে পারেননি তিনি। এক বল বাকি থাকতে হতাশ হয়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন তিনি।
ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ে একমাত্র ক্যাপ্টেন শুভমান গিল ছাড়া কাউকেই স্বছন্দ লাগেনি। অভিষেক শর্মার আউট ভারতের ব্যাটিংয়ের পতনের সূত্রপাত করে যায়। পরপর আরও তিন উইকেট হারাতে হয় ভারতকে। সেই সময় ব্যাটিংয়ের রক্তপাত বন্ধ করার জন্য এক পার্টনারশিপের প্রয়োজন ছিল টিম ইন্ডিয়ার। ধ্রুব জুরেল চাপের মুখে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। শুভমান গিল একপ্রান্ত আগলে দলকে টানার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
তবে গিল ফেরত যাওয়ার পরেই যেন ম্যাচের ভাগ্য চূড়ান্ত হয়ে যায়। আবেশ খান এবং ওয়াশিংটন সুন্দর মিলে হৃদগতি বাড়িয়ে দিয়েছিল জিম্বাবোয়ের। পুরো ম্যাচ জুড়েই জিম্বাবোয়ে বোলারদের বৈচিত্র্য সামলাতে পারেনি ভারত। চাতারা এবং মুজরাবানির পাওয়ার প্লের স্পেল ধসিয়ে দেয় ভারতকে। পরে ক্যাপ্টেন সিকান্দার রাজা ভারতের মিডল অর্ডারে দুর্ভোগ আরও বাড়ান। আবেশ খান এবং ওয়াশিংটন সুন্দরের ভয় ধরানো জুটিও তিনি ব্রেক করেন।
তার আগে ক্যাপ্টেন শুভমান গিল টসে জিতে জিম্বাবোয়েকে ব্যাট করতে পাঠান।
বল হাতে ভারতকে প্ৰথম ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন মুকেশ কুমার। ইনোসেন্ট কায়াকে ফিরিয়ে দেন বঙ্গ পেসার। তবে তাতে আগ্রাসী ব্যাটিং দমিয়ে রাখা যায়নি জিম্বাবোয়ে ব্যাটারদের। ব্রায়ান বেনেট ঝড়ের গতিতে শুরু করেছিলেন। তবে নিজের ইনিংস পাওয়ার প্লের বাইরে টানতে পারেননি। আবেশ খান খলিল আহমেদের বলে একদম লোপ্পা ক্যাচ মিস করে বসেন। তবে রবি বিশ্নোই আক্রমণে আসার পর ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ে জিম্বাবোয়ে ব্যাটিং।
জিম্বাবোয়ে ব্যাটিং এরপরে পুরোটাই নির্ভর করছিল সিকান্দার রাজার ওপর। রাজা আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ভারতীয় বোলারদের ওপর চাপ দেওয়ার কৌশল নিয়েছিলেন। পতনের সূচনা করে দেন আবেশ খান ক্যাপ্টেন সিকান্দার রাজাকে আউট করে। এরপরেই ভেঙে পড়ে জিম্বাবোয়ের ব্যাটিং। মাত্র ১৭ রান তোলার ফাঁকে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে সিরিজের আয়োজক দেশ। প্রতিপক্ষের মিডল এবং লোয়ার অর্ডারের ওপর দিয়ে স্পিনের ফাঁস চাপিয়ে দেন রবি বিশ্নোই এবং ওয়াশিংটন সুন্দর। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান খরচ করে বিশ্নোই তুলে নেন ৪ উইকেট। জোড়া মেডেনও নেন তিনি।
জিম্বাবোয়ে একসময় ৯০/৯ হয়ে গিয়েছিল। ভাবা হয়েছিল পুরো ২০ ওভার খেলার আগেই হয়ত অলআউট হয়ে যাবে জিম্বাবোয়ে। তবে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে আত্মতুষ্টি দানা বেঁধে বসে। ক্লাইভ মাদানদে ২৫ বলে ২৯ করে শেষদিকে জিম্বাবোয়ের অলআউট হওয়া যেমন আটকান, তেমন দলকে ভদ্রস্থ স্কোরে পৌঁছে দেন।
এরপরে এই লো স্কোর ডিফেন্ড করতে নেমেই ইতিহাস গড়বেন জিম্বাবোয়ের বোলাররা।